Quantcast
Channel: Uddipan
Viewing all 104 articles
Browse latest View live

মূলনিবাসী বহুজন কারা ? দলিত কে বা কারা ? কেন?

$
0
0
মূলনিবাসী কারা ? বহুজন কাদের বলা হয় ? শুদ্র কারা ? SC, ST রা কেন শুদ্র নয় ? এছাড়া ব্রাহ্মণরা DNA TESTহিসাবে বিদেশি কিভাবে ? দলিত কে বা কারা ? কেন ? দলিত শব্দ বললে কি হীন্‌ বা নীচ্‌ ভাব প্রকাশ করে, না গর্ব বোধ হয় ? এই শব্দটির  উদ্ভব কিভাবে হয়েছে ? বাবা সাহেব কি তাঁর লেখনি বা ভাষণে কোথাও এই শব্দের ব্যবহার করেছেন ? যদি না করে থাকেন তাহলে আমরা বাবা সাহেবের অনুনায়ী হয়ে এই শব্দটিকে কেন ব্যবহার করছি ? দলিত বলতে কাদের বোঝানো হয় ? এই শব্দের উৎপত্তি ও প্রচার কারা করল ? কেন করল ?
  ইত্যাদি প্রশ্নের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে এই লেখায় । 
মূলনিবাসী বহুজন কারা ?  দলিত কে বা কারা কেন? 
          জগদীশ রায়    
   একটা শব্দ মূলনিাসী আর একটা শব্দ বহুজন । এই মুলনিবাসী বহুজন কারা এ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের stape by stape উপরে উঠতে হবে । অর্থাৎ  তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি কারা, শুদ্র কারা, বহুজন কারা আর মুলনিবাসী বহুজন কারা ? প্রথমে আমরা বহুজন শব্দের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে অলোচনা করছি ।এর মধ্যেই তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি কারা, শুদ্র কারা, এদের সম্পর্কে জানতে পারব ।এই যে বহুজন শব্দ বলা হয়েছে এটা এমনিতেই উৎপন্ন হয়নি । সমাজে যে অসমানতার ব্যাবস্থা  চলছে সেটা আমাদের বুঝতে হবে । এই অসমানতার ব্যাবস্থা vertical (খাঁড়া)এটা horizontal নয় । ক্রমিকভাবে সকলের উপরে ব্রাহ্মণ, তার নিচে ক্ষত্রিয়, তার নিচে  বৈশ্য আর তার নিচে শুদ্র । আর তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতি বর্ন ব্যাবস্থার মধ্যে নেই । এরা out caste বর্ন বাহ্য । অর্থাৎ বর্নব্যাবস্থার বাইরে । এসব কথা সাধারণ লোক তো দূরের কথা , যারা সমাজ বিজ্ঞান পড়েন তাঁরাও জানেন না । কারণ এটা বিচার ধারার মামলা । তফশিলি জাতি(Scheduled Caste), তফশিলি উপজাতি(Scheduled Tribe), এদের বর্ন ব্যাবস্থার ভিতরে কোন পরিচয় নেই
         বাবা সাহেব আম্বেদকর এদের (SC, ST) জন্য ইংরেজি শব্দ OUT CASTE প্রয়োগ করেছেন - বর্ন ব্যাবস্থার বাইরের লোক । তো এই ভাবে যে মূলনিবাসী বহুজনরা আছেন এই বহুজন শব্দের সৃষ্টি হল কি করে ? এই যে যে, বহুজন শব্দ, এটা সংখ্যাবাচক শব্দ; এতে সংখ্যা আছে । কিন্তু এটা সংখ্যার উপর নির্ধারিত শব্দ নয় । এই যে যে, (Vertical) ব্যাবস্থা-এতে ব্রাহ্মণ লাভবান হয়েছে । তারা এই ব্যাবস্থার Beneficiary , ক্ষত্রিয় - Beneficiary আর বৈশ্যও - Beneficiary -- অর্থাৎ এই বর্ন ব্যাবস্থার এই তিন বর্নের লোকদেরই সব সুযোগ-সুবিধা করায়ত্ব । কিন্তু বর্ন ব্যাবস্থায় যে শুদ্র, এই শুদ্র কে ? যদি তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতির লোকরা বর্ন ব্যাবস্থার বাইরের লোক হয় তাহলে বর্ন ব্যাবস্থার ভিতরে যে শুদ্র আছে তারা কারা ?
           বর্ন ব্যাবস্থার ভিতরে যে শুদ্র আছে, ব্রাহ্মণ ধর্ম অনুসারে তাঁরা আর কেউ নয় , তাঁরা O.B.C. (Other Backward Class)অর্থাৎ অন্য পশ্চাদপদ শ্রেণীর লোকেরাই বর্নব্যাবস্থায় শুদ্র বর্নের লোক ।
অনেক তফশিলি জাতির লেখাপড়া শেখা লোক আছেন, এটা তাঁরা জানেনই না । আর অশিক্ষিতদের জানার তো প্রশ্নই আসে না । আমাদের লেখাপড়া শেখা তফশিলি জাতির লোকেরা নিজেদের শুদ্র বলেন ।  কিন্তু বাবা সাহেব এদের শুদ্র বলেননি । বাবা সাহেব আম্বেদকর এদের Out Caste বলেছেন । বর্ন বাহ্য বলেছেন । বর্নব্যাবস্থার বাইরের লোক বলেছেন । আর বর্ন ব্যাবস্থার মধ্যে যে শুদ্র; এটা O.B.C.দের যে বর্গ আছেন তারাই বর্নব্যাবস্থায় শুদ্র বর্নের লোক । তাই ব্রাহ্মণ ধর্মানুসারে O.B.C.-রাই শুদ্র বর্নের লোক ।
আপনাদের একটা আসল কথা বলতে চাই- যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন কথা । যে মনুস্মৃতি আছে তাতে Out Caste লোকদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা নেই । অর্থাৎ তফশিলি জতি তফশিলি উপজাতিদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা নেই । সেখানে শুদ্রদের বিরুদ্ধে লেখা হয়েছে । এ কথাও আমাদের তফশিলি জাতি তফশিলি উপজাতির লেখাপড়া শেখা লোকদের জানার বাইরে । তফশিলি জাতি তফশিলি উপজাতির লেখাপড়া শেখা লোকেরা নিজেদের শুদ্র বলেন । এরা নিজেদের শুদ্র বলার ফলে O.B.C.-রা যারা প্রকৃত শুদ্র, তাঁরাও এই তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতির লোকদের শুদ্র বলা শুরু করেছেন । এই সমস্ত গড়বড় তফশিলি জাতির লেখাপড়া লোকেরাই করেছেন । যার ফলে লোকদের জাগৃত করার কাজের মধ্যে একটা বড় সংকট খাঁড়া হয়েছে । তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতির লোকেরা শুদ্রবর্নের নয় । ব্রাহ্মণ ধর্ম ব্যাবস্থা অনুসারে O.B.C.-রাই শুদ্র বর্নের লোক ।
       কারণ O.B.C. অর্থাৎ অন্য পেছনের বর্গের লোকদের মধ্যে কোন জাতির লোকদের ব্রাহ্মণ ধর্ম অনুসারে উপনয়ন সংস্কার (পৈতা) হয় না । মুসলমানদের মুসলমান হওয়ার জন্য সংস্কার (ছুন্নৎ হয়) । খ্রিস্টানদের খ্রিস্টান হওয়ার জন্য সংস্কার হয়, বুদ্ধিস্টদের বুদ্ধিস্ট হওয়ার জন্য সংস্কার হয়, শিখদের শিখ হওয়ার জন্য সংস্কার হয় । যদি O.B.C.-রা হিন্দু হন তাহলে হিন্দু হওয়ার জন্য উপনয়ন(পৈতা) সংস্কার হওয়া দরকার । কিন্তু সেটা হয় না । তাই O.B.C.-রাও হিন্দু নন । ব্রাহ্মণ ধর্ম অনুসারে O.B.C.-রা শুদ্র বর্নের লোক । এই বর্ন ব্যাবস্থায় যে অসমানতা সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে সকলের নিচে O.B.C.-রা । আর একটা কথা - শুদ্রদের বিরুদ্ধে মনুস্মৃতিতে লিখিত আইন আছে । এটা সঠিকভাবে বুঝতে হবে । তফশিলি জাতি তফশিলি উপজাতির লোকেরা এটা জানে না  তার জন্যই সবথেকে বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে ।
তফশিলি জাতি, তফশিলি উপজাতির লোকরা বর্ন ব্যাবস্থার বাইরের লোক । এঁদের বিরুদ্ধে 'বলা আইন' আছে । যে প্রদেশের যে জায়গায় যে বড় ব্রাহ্মণ আছে , সে যেটা বলবে সেটাই এঁদের (SC, ST) বিরুদ্ধে আইন । সেজন্য আলাদা আলাদা রাজ্যে, আলাদা জায়গায় অচ্ছুৎদের, আদিবাসীদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা আইন দেখা যায় । যেটা আমাদের লোকদের সঠিক ধারণা নেই । শুদ্ররা (O.B.C.) মনুস্মৃতিতে লেখা আইনের শিকার । আর তফশীলী জাতি, তফশীলী উপজাতির লোকেরা হচ্ছে Out Caste. এঁরা মনুস্মৃতির Sprite of Manusmrity (মনুস্মৃতির ভাবনা)-এর শিকার । যার উপর ভিত্তি করে ব্রাহ্মণরা আলাদা আলাদা জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে ফয়সালা করে আমাদের প্রতারিত করে । আর এর জন্যই অর্থাৎ এই ব্রাহ্মণী ষড়যন্ত্রের জন্য আমাদের লোকেরা ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, বুদ্ধিস্ট, জৈন হয়েছেন ।
এই যে তফশীলী জাতি, তফশীলী উপজাতি, এবং O.B.C-এঁদের থেকে যারা ধর্মপরিবর্তন করেছেন, এই সব লোকদের সংখ্যা; এবং এঁরা ব্রাহ্মণী ব্যাবস্থার ফলে কেউ উপরে, কেউ তার নিচে, কেউ তার নিচে এই ক্রমিক খাঁড়া বর্ন ব্যাবস্থার শিকার লোকদের সংখ্যা হচ্ছে ৮৫ শতাংশ । এই সংখ্যা আমাদের ইচ্ছামত তৈরী করা হয়নি 
   এই যে বহুজন শব্দ তৈরি হয়েছে । এটা সংখ্যা-বাচক শব্দ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন । কিন্তু এই শব্দ(বহুজন) তৈরি হোল কিভাবে ? যে ব্রাহ্মণবাদী ব্যাবস্থা আছে , এই ব্রাহ্মণবাদী ব্যাবস্থার শিকার যে লোকেরা, এঁরা সংখ্যায় ৮৫ শতাংশ ।
তফশীলী জাতির লোক, তফশীলী উপজাতির লোক, অন্য পিছিয়ে পড়া বর্গের লোক এবং এঁদের থেকে ধর্ম পরিবর্তিত যে লোক; এইসব লোকদের মিলিয়ে ৮৫ শতাংশ সংখ্যা তৈরি হয়েছে । অর্থাৎ সংখ্যা পরে তৈরি হয়েছে । তাহলে প্রথমে কি ? প্রথমে হচ্ছে এই লোকেরা ব্যাবস্থার শিকার লোক । কোন ব্যাবস্থার ? ব্রাহ্মণরা সমাজে যে অসমান ব্যাবস্থার নির্মান করেছে , জাতি ব্যাবস্থা বানিয়েছে; এই ব্যাবস্থার শিকার লোকদের সংখ্যা হচ্ছে ৮৫শতাংশ । এখানে দুটো কথা বোঝানো হয়েছে  একটা অসমান ব্যাবস্থার শিকার, দ্বিতীয় এই অসমান ব্যাবস্থার শিকার লোকদের সংখ্যা । এই সংখ্যাটা কিন্তু এই ভাবে তৈরি হয়েছে । এটা কোন আলাদা নয় । কারণ এই সংখ্যা তৈরি হওয়ার আগে এই লোকেরা ব্যাবস্থার শিকার লোক । তাই এই সংখ্যা স্বতন্ত্র নয় । প্রথমে ব্যাবস্থার শিকার লোকদের একজোট করার কথা বলা হয়েছে । আর এর জোড় পরে বানালে দেখা গেছে সেটা ৮৫শতাংশ । আমাদের মনে হয়েছে আর বানিয়ে দিয়েছি সেটা কিন্তু নয় । যারা ব্রাহ্মণবাদী ব্যাবস্থার শিকার তাদের সংখ্যা ৮৫% । আর ১০০ এর মধ্যে যারা ৮৫জন তাঁরা সংখ্যার দৃষ্টিকোণে বহুজন হয় । জাতির সংখ্যায় বহুজন, টোটাল সংখ্যাও বহুজন । সেজন্য এঁরা(SC, ST, OBC এবং এঁদের থেকে ধর্মপরিবর্তিত লোকেরা) বহুজন ।
দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে মূলনিবাসী ।
একটা শব্দ হচ্ছে বহুজন । আর দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে মূলনিবাসী । এই মূলনিবাসী শব্দ কি করে তৈরি হোল - ২০০১ সালের ২১শে মে Times of India পত্রিকায় একটা খবর ছাপানো হয়। আমেরিকার ওয়াশিংটনে ওটাহ বিশ্ববিদ্যালয় আছে । ঐ বিদ্যালয়ের Bio- Technology-এর Head of the Department হলেন মাইকেল বামসাদ(BAMSAD)  তিনি Bio- Technology এর আধারে একটা Project বানিয়েছিলেন ভারতের প্রজাদের বিশ্লেষণ করার জন্য । তিনি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি, ধর্মের লোকদের DNA Test করেছেন । এই DNA Test এ এটা প্রমানিত হয়েছে যে, এখানকার ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের DNA বিদেশী লোকদের DNA এর সঙ্গে মিলে গেছে । আর তফশীলীজাতি, তফশীলী উপজাতি, অন্য পিছনের বর্গ(O.B.C.), এবং এঁদের থেকে ধর্মপরিবর্তিত লোকদের DNA একই ধরনের । অর্থাৎ এঁরা এখানকার মূলনিবাসী । আর একটি আশ্চর্যজনক কথা তিনি DNA এর আধারে বিশ্লেষণ করে বলেছেন যে, ব্রাহ্মণদের ঘরে যে মহিলারা আছেন তাদের DNA ও ভারতে মূলনিবাসীদের DNA-এর সঙ্গে মিলে গেছে । অর্থাৎ যে SC, ST, O.B.C. এবং এঁদের থেকে ধর্মপরিবর্তিত লোকদের DNA আর ব্রাহ্মণদের ঘরের মহিলাদের ঘরের DNA একই রকম । এতে প্রমাণিত হয়েছে, এই যে যে, ব্রাহ্মণ আমাদের দেশে দেখা যায় এঁরা আক্রমণকারী । আর যারা আক্রমণকারী হয় তাঁরা আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে আসে । তাঁরা সঙ্গে তাদের মহিলাদের নিয়ে আসে না । আর এজন্য এরা মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে আসেনি। আর যারা এখানে স্থায়ী হয়েগেছে ; তারা তাদের প্রজা উৎপন্ন করার জন্য এখানকার মহিলাদের উপয়োগ ও প্রয়োগ করেছে । ফলে ব্রাহ্মণদের ঘরে যে মহিলারা আছেন এঁরা মূলনিবাসী মহিলা । এই আশ্চর্যজনক বিশ্লেষণও তিনি DNAএর আধারে প্রমাণ করেছেন ।
আর যে দ্বিতীয় খুব মহত্ত্বপুর্ন কথা তিনি প্রমাণ করেছেন সেটা হচ্ছে, ব্রাহ্মণরা জাতি ব্যাবস্থা নির্মান করার জন্য মহিলাদের প্রয়োগ করেছে । ব্রাহ্মণরা যে বর্ন ব্যাবস্থার নির্মান করেছে এটা তাদের শাস্ত্রে লিখিত প্রমাণ আছে । লিখিত প্রমাণ হচ্ছে-- ব্রাহ্মণরা যে বর্নব্যাবস্থা বানিয়েছে তাতে তাঁরা তাদের মা, বোন, মেয়েকেও  শুদ্র ঘোষনা করেছে । আমাদের শুদ্র ঘোষনা করেছে সেটা তো বোঝা যাচ্ছে  কিন্তু ব্রাহ্মণরা তাদের ঘরের সকল মহিলাকেই শুদ্র ঘোষনা করেছে কেন? আর এর জন্য বর্নব্যাবস্থায় কোন মহিলাকে ব্রাহ্মণদের ব্রাহ্মণ বর্ন নয়, ক্ষত্রিয়দের ক্ষত্রিয় বর্ন নয়, বৈশ্যদের বৈশ্য বর্ন নয়, সব মহিলাকে শুদ্রবর্ন হিসাবে ঘোষনা করেছে । এই আশ্চরয জনক প্রমান ব্রাহ্মনধর্ম শাস্ত্রে লিখিত আছে ।আর DNAতেও প্রমাণ পাওয়া গেছে । DNA এর একটা অংশ হচ্ছে Maytrocondriya. এটা মায়ের থেকে শুধুমাত্র মেয়ের শরীরেই যায় । তাই সব মহিলা আইনগত হিসাবে মূলনিবাসী । তাই এটা single evidence নয় double evidence. এটা পাক্কা প্রমাণ । এই ভাবে এই মূলনিবাসী শব্দ তৈরি হয়েছে । SC, ST, OBC এবং এঁদের থেকে ধর্মপরিবর্তিত লোক এবং ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যদের ঘরে যে মহিলারা এঁরা মূলনিবাসী বহুজন । আমি এই যে যেকথা বললাম আমাদের কিছু লেখাপড়া শেখা লোক এর ভুল  অর্থ বের করতে পারেন । তাঁরা ভাবতে পারেন- চলো খুব ভালোই হোল  ব্রাহ্মণদের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ করেলে খুব ভালোই হবে । কারণ সে মহিলারা তো আমাদের মূলনিবাসী ।
 এই ধরনের গলত অর্থ আমাদের লেখাপড়া শেখা লোকেরা তাদের সুবিধার জন্য বের করতে পারেন । তবে একথা কিন্তু সে জন্য বলা হয়নি শুধু সঠিক বিষয়টা জনানোর জন্য ।আমাদের মূলনিবাসী বহজনদের জাগৃত করার জন্য। আমাদের নিজেদের লোক কে ? আর পর কে ? এর মধ্যে অন্তর করতে শেখা দরকার । কারণ এর সঙ্গে শত্রু এবং মিত্রের সম্বন্ধ আছে । যে শত্রু এবং মিত্রের অন্তর তৈরি করতে পারে - পৃথিবীতে একমাত্র সেই জাগৃত হয় । যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, PHD হন, এঁরা জাগৃত হিসাবে গণ্য হন না । জাগৃত তাকেই মানা হয় যিনি শত্রু এবং মিত্রকে সঠিকভাবে চিনতে পারেন । একথাও সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করুন আপনারা

                                            দলিত   
শব্দ (word) একটা হাতিয়ার । এই শাব্দিক হাতিয়ার ঘৃনা বা নীচ্‌ বোঝানোর জন্য যেমন ব্যবহৃত  হতে পারে,তেমনি শৌর্য্য-বীর্য্য ইত্যাদি বোঝাতে বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ বহুল করে তোলার জন্য ব্যাবহৃত হয় ।
    আমরা প্রতিনিয়তঃ দেখতে পাই-'দলিত' শব্দের ব্যবহার । আসুন আমরা দলিত শব্দের উপর  কিছু বিশ্লেষণ মূলক ভাবনা নিয়ে অগ্রসর হই ।
    প্রথমে দেখে নেই এই দলিত কে বা কারা ? কেন ? দলিত শব্দ বললে কি হীন্‌ বা নীচ্‌ ভাব প্রকাশ করে, না গর্ব বোধ হয় ? এই শব্দটির  উদ্ভব কিভাবে হয়েছে ? বাবা সাহেব কি তাঁর লেখনি বা ভাষণে কোথাও এই শব্দের ব্যবহার করেছেন ? যদি না করে থাকেন তাহলে আমরা বাবা সাহেবের অনুনায়ী হয়ে এই শব্দটিকে কেন ব্যবহার করছি ? দলিত বলতে কাদের বোঝানো হয় ? এই শব্দের উৎপত্তি ও প্রচার কারা করল ? কেন করল ?
ব্রাহ্মণী বর্ণ ব্যাবস্থায় বর্ণ চারটি 
1.    ব্রাহ্মণ
2.    ক্ষত্রিয়
3.    বৈশ্য এবং
4.    শুদ্র
এছাড়াও আছে বর্ণ বাহ্য (out caste ) অতিশুদ্র বা যাদের এক সময় বলা হত অস্পৃশ্য (Untouchable). এবং আদিবাসীরা  ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য  এদেরকে বলা হয় Upper Caste. এরা সংখ্যায় 15% .
আর শুদ্ররা (OBC- Other Backward Class ) হচ্ছে 52%, অতিশুদ্র বা বর্ণবাহ্যরা হচ্ছে 15%  এই বর্ণবাহ্যদের সংবিধান পূর্ব অস্পৃশ্য (untouchable)  যাদেরকে বাবা সাহেব সাংবিধানিকভাবে নাম দিয়েছেন Scheduled Casteবা তফশিলি জাতি বা অনুসূচিত জাতি । আর আদিবাসীরা যাদের সংখ্যা 7.5%   যাদের সাংবিধানিকভাবে বলা হয়Scheduled Tribe বা তফশিলি উপজাতি বা অনুসূচিত উপজাতি । আর এই SC,ST, এবং OBC-দের থেকে যারাConvert হয়েছে তাদের বলা হয় Converted Minority বা ধর্ম পরিবর্তিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় । যাদের সংখ্যা হচ্ছে 10.5% 
    তো আমরা দেখতে পাচ্ছি SC+ST+OBC+Converted Minority -এদের মোট জনসংখ্যা হচ্ছে-(15%+7.5%+52%+10.5%) = 85%  এরাঁ সংখ্যায় বেশি তাই এদেঁর একত্রিত করে বলা হয় বহুজন ।
    আর যারা বাকি 15% (ব্রাহ্মণ+ক্ষত্রিয়+ বৈশ্য) আমরা স্বাভাবিকভাবে এদের বলতে পারি অল্পজন ।এই বহুজন+অল্পজন = সর্বজন । গৌতম্বুদ্ধ শ্লোগান দিয়েছিলেন- বহুজন হিতায়,বহুজন সুখায়  কেন ? কারন অল্পজনদেরalready হিত হয়েছে এবং সুখ আছে । কিন্তু এই অল্পজনরা  বহুজনদের সব হিত ও সুখকে হরণ করে নিয়ে নিজেদের হিত করে তারা সুখী আছে। তাই   গৌতমবুদ্ধ বহুজনদের কি করে হিত হবে ও সুখ হবে সেই বার্তা ছড়িয়ে ছিলেন । আমরা হয়তঃ  বুদ্ধের ভাবনা থেকে অনেক উপরে উঠে গেছি । তাই সেই ভাবনাকে পিছনে ফেলে আমরা শ্লোগান দিতে শুরু করেছি-সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়  এই সর্বজনের হিত ও সুখ ভাবতে গিয়ে আবার বহুজনদের বঞ্চিত করে চলেছি ।
    এ পর্যন্ত আমরা বহুজন, অল্পজন এবং সর্বজনদের সম্পর্কে জানলাম । যারা বহুজনবাদী তাদের সামাজিক ভাবনা এই SC, ST, OBC এবং Converted Minority -দের নিয়ে । কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই একটা শব্দ,সেটা হচ্ছে-'দলিত'  এই দলিত কাদের বলা হয় ? প্রকৃতভাবে বিচার করে দেখলে দেখা যাবে সাংবিধানিকভাবে যাদেরকে বাবা সাহেব নাম দিয়েছেন 
Scheduled Caste
 বা তফশিলি জাতি বা অনুসূচিত জাতি । তাদেরকে বর্তমানে 'দলিত' বলা হয় । কেন তাদের দলিত বলা হয় ? তাদের তো সাংবিধানিক নাম আছে; তবুও তাদের প্রতি এই দলিত শব্দের প্রয়োগ কেন ? বাবা সাহেবের কোন লেখা বা ভাষণে আমরা কি কোথাও এই শব্দের উল্লেখ পেয়েছি ? ভারতের সংবিধান রচিত হওয়ার পূর্বে যাদের অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হ'ত বা পতিত বলে মনে করা হ'ত তাদের সাংবিধানিক নাম Scheduled Caste . বাবা সাহেব তাঁর লেখায় তুলে ধরেছিলেন Untouchable বলে । যে কথা আগেই বলেছি । তিনি তো কখনও দলিত শব্দের উল্লেখ করেননি ।
   আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন বাবা সাহেব উল্লেখ করননি বলে আমরা করবো না কেন ? আর করলে আমাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে কি ? তাই না ?
    তাহলে আমরা দেখে নেই এই শব্দের উৎপত্তির ইতিহাস এবং এই শব্দে আমাদের কি ক্ষতি হ'তে পারে বা হচ্ছে ।
   ব্রাহ্মণদের কৌশল হচ্ছে- সে কখনও সম্মুখ সমরে আসবে না । তার হাতে রিমোট থাকবে । সে আমাদের আপন ভাই/জাতি/ গোষ্ঠিকে একে অপরের বিরুদ্ধে লাড়াই-এ সামিল করবে । আর এই লড়াই-এ যে পক্ষেরই জয় হোকনা কেন সে জয় তার নয় । সে জয় হবে ব্রাহ্মণের ।
    তেমনিভাবে ব্রাহ্মণরা কৌশল করে বাবা সাহেবের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিপক্ষ তৈরী করার জন্য মাধ্যমিক লেভেল থেকে মেধাবী জগ্‌জীবন রাম কে সমস্ত রকম সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে লালন   পালন করে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলে । আর ধীরে ধীরে জগ্‌জীবন রাম কে বাবা সাহেবের  প্রতিপক্ষ হিসাবে খাড়া করে । কংগ্রেস এই জগজীবন রামের মাধ্যমে দলিত বা দলিত নেতা শব্দের বিস্তার ঘটাতে শুরু করে । জগ্‌জীবন রাম যে সংগঠন বানিয়ে ছিলেন তার নামদলিত বর্গ সঙ্ঘ আর বাবা সাহেব তারঁ সংগঠনের নাম দিয়েছিলেন Scheduled Caste Federation. আর বাবা সাহেব মহাপরিনির্বাণের পূর্বে যে RPI-Republican Party of India- এর নির্মাণের পরিকল্পনা করে ছিলেন; পরবর্তিতে কংগ্রেস সেই RPI এর মাধ্যমে এই 'দলিত' শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার শুরু করে । ধীরে ধীরে এই শব্দ মহিরুহে পরিনত হয়েছে । যার ফলে আমরা সংগঠনের নাম রাখছি- দলিত সঙ্ঘ, মহাদলিত সংঘ আবার দলিত পত্রিকা ইত্যাদি ইত্যাদি । আমাদের মজ্জায় ও এই শব্দটি এমনভাবে জড়িয়ে গেছে বা মিডিয়ার মাধ্যমে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে, গান্ধীর নাম নিতে গেলে যেমন 'মহাত্মা' শব্দ আসে, মনে হয় ওটাই তাঁর নাম । যেমন ভারত বা India না বলে 'হিন্দুস্থান' বলা হয়, তেমনিভাবে 'দলিত' শব্দের বিস্তার ঘটছে । আর আমরা নিজেদের 'দলিত' মনে করে দলা দলিতে প্রতিনিয়তঃ লিপ্ত রয়েছি আপন অস্তিত্ত্বকে ভুলে গিয়ে ।  
আমরা পত্র-পত্রিকায় ভাষণে দলিত, বহুজন, মূলনিবাসী শব্দের ব্যবহার করি । কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এই শব্দ গুলোর বাস্তব অর্থ কয় জনে কতটা জানি বা বুঝি, সেটা খুঁজতে গেলে গা উজাড় হবার সম্ভাবনা হবে ।
    আমাদের উদ্দেশ্য তো এই SC, ST, OBC এবং Converted Minority -দের নিয়ে সামাজিক, রাজনৈতি সংগঠন করা । আপনারা ভাবুন তো কোন OBC নিজেকে কি দলিত বলে মনে করেন ? আবার কোন ST -সে তো নিজেকে আদিবাসীই মনে করেন । এই দলিত বলতে শুধুমাত্র Scheduled Caste দেরই বোঝানো হয় । তো আপনি বহুজনবাদী ভাবনা বা মূলনিবাসী ভাবনায় ভাবিত হয়ে দলিত শব্দ কি করে প্রয়োগ করেন ? তাহলে তো প্রথাগত ভাবে SC- দেরই বোঝান হচ্ছে আপনার লেখায় বা ভাষণে । বহুজন বা মূলনিবাসী চেতনার প্রকাশ ঘটছে কি ? কিন্তু আপনি চাইছেন SC. ST. OBC-দের নিয়ে সাংগঠনিকভাবে অগ্রসর হ'তে ।
   এই যে, যে বিভেদ অর্থাৎ 'দলিত' বলে শুধু SC-দের প্রচার প্রসার করা, এর সৃষ্টিকর্তা ব্রাহ্মণ । আর আমরা এই'দলিত' বলে প্রতি নিয়ত প্রচার চালানোর জন্য অন্যের থেকে পৃথক হয়ে যাচ্ছি । যে কৌশলটা করেছে ব্রাহ্মণ,আর এর ফায়দাটা তারাই ভোগ করছে । যার জন্য আমরা শত চেষ্টা  করেও একত্রিত হ'তে পারছি না । আমাদের মধ্যে'দলিত' ভাবনার জন্য আমরা সত্যিকারের বহুজন বা মূলনিবাসী ভাবনায় ভাবিত নয় । আসলে এই শব্দগুলোর প্রকৃত মানেই আমরা জানিনা।
    'দলিত' অর্থাৎ দলন করা । অর্থাৎ মাঠের ঘাষকে যেমন পাদিয়ে মাড়ানো হয় তাকে দলন করাও বলা হয় । কিন্তু আমরা নিজেদের 'দলিত' মনে করি কেন ? না ব্রাহ্মণরা আমাদের সব সময় দলন করে চলেছে তাই । ভাল কথা । কেউ আমাদের দলন করছে আর আমরা মাথা পেতে সেটা স্বীকার করছি । আমরা তোমাদের দ্বারা দলিতো তাই তো আমরা দলিত । খুব গর্বের কথা । কি বলেন ? কেউ আমাকে গালি দিল, মারল আর আমি বিনা প্রতিবাদে সেই গালি,আঘাত মেনে নিলাম । কারন আমার তো প্রতিবাদের ভাষা নেই । আমি তো দলিত । বাঃ রে সেলুকাশ কি বিচিত্র এই ভাবনা !
    একটা স্প্রিংকে আপনি চাপ দিলে বা দাবালে সেই প্রেসার অনুসারে সে নিচে নেমে যাবে । কিন্তু চাপটা কমিয়ে দিলে সে আবার উপরে উঠতে চাইবে চাপের তারতম্য অনুসারে । কিন্তু তার নাম স্প্রিং না দিয়ে 'দলিত' নাম দিলেও তো হ'ত । কিন্তু স্প্রিং-এর ধর্ম চাপ খেয়েও সর্বক্ষন উপরে ওঠার চেষ্টা করা । কিন্তু আমাদের ধর্ম হচ্ছে দলিত হয়ে পিষে যাওয়া । তাই নয় কি ? যদি তাই না হয় তবে কেন আমরা এই হীন্‌ সূচক শব্দের ব্যবহার করবো ?
আমাদের উদ্দেশ্য যদি সমাজকে জোড়ার হয়, তবে আমরা কেন বহুজন বা মূলনিবাসী ধরনের শব্দের প্রয়োগ করবো না । মূলনিবাসী শব্দে অনেকের আবার Allergy আছে । তবে বহুজন শব্দে নিশ্চয় অসুবিধা নেই ?
    সংগঠনের নাম বহুজন দিয়ে লিখব আর 'দলিত' 'দলিত' বলে গলা ফাটাবো সেটা কি ভাবনা এবং কর্মের মধ্যে বিশাল অন্তর সৃষ্টি করছে না ?
কিন্তু আমরা নিশ্চয় SC,ST OBC  Converted Minority-দের মিলন চাই বহুজনবাদী ভাবনায় । আর দলিত বলতে যেখানে শুধু (Scheduled Caste) SC -দেরই বোঝানো হয় তো আমরা সাংবিধানিক শব্দ Scheduled Casteবা তফশিলি জাতি বা অনুসূচিত জাতি শব্দগুলোকে কেন ব্যবহার করবো না ? ব্যবহার হয়না তা নয়, তবে সেটা একবার/দু'বার হ'লে 'দলিত' শব্দ হয় তার দশ গুন বেশী ।
    আমার এই ভাবনার সঙ্গে আনেকেই সহমত পোষোণ না করতে পারেন । সেটা স্বাভাবিক । কিন্তু এটা নিয়ে ভাববেন অবশ্যই ।
                   _______________________    




মতুয়াদের করণীয় (১)

$
0
0
মতুয়াদের করণীয় (১)

মতুয়াদের করণীয় বলতেই আমরা একবাক্যেই বুঝে যাই যে, যারা officiallyনাহলেও unofficially নিজেদের মতুয়া বলে মনে করেন, তাদের কি করা দরকার । অনেকেই বলতে পারেন- আবার officially/unofficially কথাটা কেন এল ? হ্যাঁ, এটা দিয়েই না হয় শুরু করি, মতুয়াদের করণীয় বিষয়ে ।

    প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত  ধর্মের কিছু নিয়ম ও সংস্কার আছে, সেই ধর্মের প্রতিনিধি বা অনুন্যায়ী বা ঐ ধর্মীয় হওয়ার জন্য । যেমন- খৃষ্টান ধর্ম গ্রহন করতে হলে 'ব্যাপিৎসমা'গ্রহন করতে হয় । তারপর তিনি খৃষ্টান হন । তেমনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে হলে তাকে ('ছুন্নৎ') বিশেষ সংস্কারের মধ্য দিয়ে গিয়ে ইসলামকে গ্রহন করে মুসলমান হতে হয় । আবার বুদ্ধ ধম্ম গ্রহন করতে হলে দীক্ষা গ্রহন করতে হয়, যেটাতে বাবা সাহেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ২২ (বাইশ) প্রতিজ্ঞা গ্রহনের নিয়ম আছে । আর হিন্দু ধর্মেও (আসলে ব্রাহ্মণ ধর্ম) পৈতা প্রথা আছে । যারা পৈতা সংস্কার করেন তারাই ঐ ধর্মের লোক । আর যাদের কোন সংস্কার হয়না তাকেও  ব্রাহ্মণদের সুবিধার জন্য হিন্দু বানিয়ে নিয়েছে । এরাঁ হচ্ছেন SC, ST এবং OBC.

     একটা কথা যেনে রাখা দরকার একটা শিশু যখন জন্মগ্রহন করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি কোন দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, তার কোন ধর্ম(Religion) হয়না । সে সামাজিক ব্যাবস্থার শিকার হয়ে পিতার ধর্ম গ্রহন করতে শেখে বা বাধ্য হয় । যেখানে ধর্ম অনুযায়ী সংস্কারও থাকে  

     পতিত পাবন হরিচাঁদ ঠাকুর যখন ততকালীন সামাজিক পঙ্কিলতাকে উপলব্ধি করলেন তারঁ দূর দৃষ্টি (Vision) দিয়ে; তখন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের মনুষত্বের স্তরে তুলে ধরার জন্য তাদের ধর্মহীন অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য উদ্ভাবন করলেন সহজ সরল নিয়ম কানুন ও সামাজিক জাগরণ মূলক এক মতবাদ যার নাম দিলেন "মতুয়া বাদ বা মতুয়া ধর্ম ।"

    যে ধর্মের মধ্যে উল্লেখীত হয়েছে বারটি(১২) আজ্ঞা বা আদেশ যাকে বলা হয় দ্বাদশ আজ্ঞা ।
সেগুলো নীচে দেওয়া হল-
 (১) গার্হস্থ্য ধর্ম পালন বা এক নারী ব্রহ্মচারিঃ
                                     করিবে গার্হস্থ্য ধর্ম লয়ে নিজ নারী।
                                     গৃহে থেকে সন্ন্যাসী বানপ্রস্থ ব্রহ্মচারী ।।
(২)সত্য কথা বলাঃ                  গৃহধর্ম রক্ষা করে বাক্য সত্য কয় ।
                                     বানপ্রস্থী পরমহংস তার তুল্য নয় ।
(৩) পরদুঃখে দুখী হওয়া এবং দুঃখীকে সহযোগিতা দানঃ
                                     পরনারী মাতৃতুল্য, মিথ্যা নাহি কবে ।
                                     পরদুঃখে দুঃখী সদাই সচ্চরিত্র রবে ।।
(৪) সাধন, ভজন, দীক্ষা, তীর্থ পর্যটন প্রভৃতি আচার সর্বস্বতা পরিত্যাগ করাঃ
                                     দীক্ষা নাই,করিবে না তীর্থ পর্যটন ।
                                     মুক্তিস্পৃহা শূন্য, নাহি সাধন ভজন ।।
(৫) ভাবের আবির্ভাবঃ                গৃহেতে থাকিয়া যার ভাবোদয় হয় ।
                                     সেই সে পরম সাধু জানিবে নিশ্চয় ।।
(৬) গৃহধর্ম ও গৃহকর্ম  করাঃ          গৃহধর্ম গৃহকর্ম করিবে সকল ।
                                     হাতে কাম মুখে নাম ভক্তিই প্রবল ।।
(৭) জ্ঞানতত্ত্বঃ                         কিবা শূদ্র কিবা ন্যাসী কিবা যোগী কয় ।
                                      যেই জানে আথতত্ত্ব সেই শ্রেষ্ঠ হয় ।।
(৮) জীবের প্রতি দয়া করা ও মানুষের প্রতি নিষ্ঠা রাখাঃ
                                     জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা ।
                                     ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা ।।
(৯)উদ্ধার কর্তাকে(হরিচাঁদ)ঈশ্বর মনে করাঃ
                                    বিস্বভরে এই নীতি দেখি পরস্পর ।
                                    যে যারে উদ্ধার করে সে তার ঈশ্বর ।।
(১০) কর্ম ও ধর্মের সমন্বয় সাধনঃ
                                    মালাটেপা ফোটাকাটা জলফেলা নাই ।
                                     হাতে কাম মুখে নাম মনখোলা চাই ।।
(১১) পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, দেহ ও মনশুদ্ধ রাখাঃ
                                    নরনারী প্রাতঃস্নান অবশ্য করিবে ।
                                    দেহশুদ্ধি চিত্তশুদ্ধি অবশ্য আসিবে ।।
(১২) সংযম রাখাঃ                   পরপতি পরসতী স্পর্শ না করিবে ।
                                    না ডাক হরিকে, হরি তোমাকে ডাকিবে ।।
হরিচাঁদ নির্দেশিত এসব গুণের অধিকারি একজন গৃহী হয়ে ওঠা আসল কথা । এসব গুণের অধিকারি কোন গৃহী হরিকে না ডাকলেও হরি তাকে ডাকবেন ।
উপরে উল্লেখীত গুলোকে দ্বাদশ আজ্ঞা বলা হলেও এরকম আরো বেশ কিছু আজ্ঞা বা নির্দেশ আছে লীলামৃতের পাতায় পাতায় ।
    এই আদেশের সঙ্গে সাতটি নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হ', যাকে বলা হয় সপ্ত নিষেধাজ্ঞা। সে গুলো হ'লঃ- (১)ভিন্ন গুরু ও ভিন্ন দল না করাঃ
                                     মতুয়ার এক গুরু ভিন্ন গুরু নাই ।
                                     মধ্যস্বত্ত্ব জমিদারি ধর্মক্ষেত্রে নাই ।।
                                     ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ করো না গোসাই ।
(২) নারী দিয়ে অঙ্গ সেবা না করাঃ    নারী দিয়ে অঙ্গসেবা হবে ধর্মক্ষয় ।
                                     তেল ঘসা অঙ্গসেবা মহা ব্যাভিচার ।
(৩) পরনারীকে মাতৃ জ্ঞান করে দূরে থাকা ।
(৪) পরিহাস বাচালতা কখন না করা ।
(৫)মদ গাঁজা ন খাওয়া এবং চুরি না করা ।
(৬) তাস-দাবা-জুয়া খেলা সব ছেড়ে দিতে হবে
(৭) কাউকে (অর্থাৎ দেব-দেবীর প্রতি) ভয় করার দরকার নেই।
                                    হরি বলে ডঙ্কা মার শঙ্কা কর কারে ।
                                    শ্রীহরি সহায় তব,  সাথে সাথে ফেরে ।।
এছাড়া- ভেকধারী বৈরাগীকে ভিক্ষা দিতে মানা করা হয়েছে, কারণ তাদের ভীক্ষা দিলে ব্যাভিচার আরো বেড়ে যাবে ।
 আবার বেদের বিধান ও আচার বিচারকে না মানতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

    এই আদেশ ও নিষেধগুলো পালন করার নির্দেশ এইজন্য দেওয়া হ'ল যাতে মানুষ তার মনুষত্বকে খুঁজে পায় ।অলীকতার পিছনে বোকার মত ঘুরে না বেড়ায় ।
    আপনাদের মনে হ'তে পারে official/ unofficial শব্দের কথা বলতে গিয়ে এতকথা কেন ? কারণ ঐ official/unofficialজানার জন্য এটা ভীষণ দরকার বলে মনে করছি ।

    দেখতে দেখতে আমরা মতুয়া ধর্ম প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের ২০০(দুইশ) বছর অতিক্রান্ত করেছি । মতুয়া আকর গ্রন্থ হরিলীলামৃত প্রকাশও ১০০ (একশ) বছর(হরিলীলামৃত প্রকাশ-বাংলা ১৩২৩ সাল, ইংরাজি-১৯১৬) ছুঁতে চলেছে । আর আমরাও মহামনবদের রক্তকে  জলকরা কষ্টার্জিত অধিকার গ্রহন করে শরীরে বেশ কিছুটা চর্বি লাগিয়েছি । কিন্তু আমরা এই মতুয়া ধর্মকে সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি কি ? আমরা নিজেদের ধর্ম হিসাবে সরকারিভাবে মতুয়া লেখার যোগ্যতা অর্জন করেছি কি ? যার জন্য আমার এই official/unofficial কথাটির উল্লেখ ।
জনগণনা বা সরকারিভাবে Religion/ধর্ম লেখার যায়গায় 'মতুয়া'লেখার অধিকার অর্জন করতে পেরেছি কি ? যদি না পেরে থাকি তাহলে তার কারণ কি ?
    তাহলেকি আমাদের স্বভাবটা এমন হোলনা যে, গাছের ও খাব আর তলারটাও কুড়াব। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের খোয়াড়ে থেকে সেটাও পালন করব আর বিশেষ করে অনুষ্ঠানে গিয়ে নিজেকে বড় মতুয়া বলে জাহির করব । আর ঘরে হিন্দু দেব-দেবীর সঙ্গে একাসনে হরি-গুরুচাঁদকেও বসাব ।
একবার ভাবুন তো আপনাকে পশুর স্তর থেকে মানুষের স্তরে কি ঐ দেবী-দেবতারা এনেছে ? নাকি হরি-গুরুচাঁদ ,যোগেন মন্ডল, আম্বেদকর ইত্যাদি মূলনিবাসী মহামনবেরা এনেছেন ? যারা ৩৩(তেতত্রিশ) কোটি দেব-দেবীর সৃষ্টি করেছে, কেন আমরা তাদের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে রাখব ? আপনার আমার মনুষ্যবোধ আর কবে জেগে উঠবে বলুন তো ?
 
আসলে আমরা আমাদের আত্ম পরিচয়টাকেই  ভুলেগেছি । কিন্তু কেন ? গুরুচাঁদ ঠাকুর তো আমাদের আত্ম পরিচয় মনে করিয়ে দিয়ে শক্তিতে জ্বলে ওঠার কথা আগেই বলেছেন । সেটা হচ্ছে-               আত্ম পরিচয়,        মনে নাহি হায় ।
                             তাই এ দুর্গতি ভালে
                     পূর্ব বিবরণ        করতে  স্মরণ,
                            শক্তিতে ওঠরে জ্বলে ।।
আমরা একথাগুলোকে শুধু কথার কথা বলেই মনে করেছি । কিন্তু তার পরিনতি ! পরিনিতি হচ্ছে এটা-'যে জাতি বা সম্প্রদায়ের লোকেরা তার নিজের জাতি বা সম্প্রদায়ের লোকদের যোগ্য সম্মান দিয়ে মর্যাদার আসনে বসাতে সক্ষম নয়, তারা কখনও অন্য জাতির বা সমাজের মানুষের কাছে থেকে যোগ্য সম্মান পেতেও পারেনা । যে মানব গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের লোকেরা তার নিজস্ব ধর্ম এবং সমাজ সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে লজ্জাবোধ করে, সেই মানবগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের লোকেরা ধীরে ধীরে আত্ম মর্যাদাহীন হয়ে শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায় ।'

আমরা কি উপরের কথাগুলির পর্যায়ে পৌঁছে যাইনি ? কেন আমরা এই পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম বা কে বা কারা আমাদের এই পর্যায়ে নিয়ে গেল ? এর জন্য আমি বা আপনি ব্যক্তিগত ভাবে নিজের দোষকে অস্বীকার করতে পারি কি ? যদি না পারি, তাহলে এখনও কি আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর মত শেষ বিন্দুটি বেঁচে আছে ? অবশ্যই আছে । এটা আমি অন্তত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি । তবে  সেটা কিভাবে ?

    দেখুন আমরা যদি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা গ্রহন করি তবে সেই প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তাকে অক্ষুন্ন রাখার রসদ পাওয়ার জন্য অন্য কোথাও ঘুরে বেড়ানোর দরকার নেই । সেই রসদ প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষ ভাবে বিরাজ করছে মতুয়া আকর গ্রন্থ হরিলীলামৃত ও গুরুচাঁদ চরিতের মধ্যে । তবে হ্যাঁ এই রসদ খুঁজতে হ'লে কিন্তু বিজ্ঞান মনষ্ক যুক্তি ও বিশ্লেষণ মূলক ভাবনার কষ্টিপাথরে বিচার করে অগ্রসর হ'তে হবে । আর সেটা না হলে মতুয়াদের হারিয়ে যাওয়ার জন্য আর কিছু বাকী থাকবেনা ।
ফিরে আসি আবার সেই official/Unofficialএর কথায় ।
   তাহলে আমরা কিভাবে মতুয়া ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হ'ব সরকারিভাবে ? এবিষয়ে আমার মনে হয় আমাদের আকর গ্রন্থটি থেকে এর উপায় খুঁজতে হবে । কি উপায় আছে ?
গুরুচাঁদ ঠাকুর তো বলেছেন- 
                    যার দল নাই        তার বল নাই । 
                           ভীন্ন দল কেউ করো না  
  পার্লামেন্ট হছে ক্ষমতার আগার । সেখানে দেশ শাসনের ও ক্ষমতা প্রদানের সব ব্যবস্থা আছে । কিন্তু সেই ক্ষমতাকে অর্জন করতে হলে নিজেদেরকে এক ছত্রছায়ায় এসে সত্য ও নিষ্ঠাবান  নেতৃত্বের নির্মান করতে হবে । সংঘবদ্ধ শক্তি কিন্ত সমস্ত অধিকারকে আদায় করে নিতে পারে । এই শক্তিকে শক্ত করতে হলে কিন্তু আমাদের প্রথমে মতুয়া আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে শক্তি গঠনের জন্য সামিল হতে হবে । আর এই সামিল হওয়ার জন্য প্রথমেই আমাদের উদ্দেশ্যকে নির্ধারিত করতে হবে । কারণ উদ্দেশ্য নির্ধারিত না হলে শ্রতের সঙ্গে ভেসে যাওয়ার জন্য কোন সময় লাগবেনা । উদ্দেশ্যের প্রতি সংকল্পবদ্ধ হয়েই কিন্তু প্রচলিত প্রথার প্রতিকুলেই আপনাকে কঠোর সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে
আর এই উদ্দেশের প্রতি সংকল্পবদ্ধ হওয়ার জন্য সংঘ শক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য তিনটি জিনিস আপনাকে দিতে হবে । সেটা হচ্ছে-
                                        (১)তন
                                        (২) মন
                                  এবং (৩) ধন 
তন অর্থাৎ শরীর । অর্থাৎ শারীরিক ভাবে আপনার সমর্থন প্রত্যক্ষ হওয়া দরকার । কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে ।
    কিন্তু সেই কাঁধে কাঁধ মেলানোর জন্য কিন্তু 'মন'দরকার । মানসিকভাবে আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে তা না হলে কাঁধে কাঁধ কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হবেনা ।
    এই কাঁধে কাঁধকে দীর্ঘস্থায়ী  করতে হলে 'ধন'-এর অবশ্যই দরকার । কারণ ধন বিনা বাকী সব কিছু কিন্তু নির্ধনতায় পরিনত হতে সময় লাগবে না ।

এই সংঘবদ্ধ শক্তিকে বিস্তার দানের জন্য অত্যাবশ্যক হচ্ছে -প্রচার বাহিনীর নির্মান করাএই প্রচার বাহিনী কিন্তু  প্রতিস্তরেই দরকার । যেমনঃ- প্রচারক, লেখক, কবি-সাহিত্যিক,cultural সংক্রান্ত ইত্যাদি । কারণ একটা কথা আছে যে, কোন বিচার ধারা  যদি প্রবাহিত না হয় তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য । এই সঙ্ঘশক্তির প্রচার মূলক বিচার ধার প্রবাহিত নদীর শ্রতের মত বহমান হওয়া দরকার । বহমান জল কখন ও পচে না । বদ্ধ জল পচে যায় ।

    এর সঙ্গে একটা কথা মনে রাখা দরকার- কেউ যদি মনে করেন যে তিনি আমাদের পরিচয় বা নাম নিয়ে আমাদের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অন্যের ঘরে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হবেন, আর মনে করেন যে আমাদের  ঘরের সুবিধা দেবেন; সেটা কিন্তু ইতিহাস বলেনা । কারণ যে আপনাকে তার ঘরে গ্রহন করবে, আপনাকে কিন্তু তার ঈশারায় চলতে হবে । নামে তিনি আমাদের হতে পারেন কাম কিন্তু কখনও আমাদের জন্য করতে পারবেন না বা তাকে করতে দেবে না । উল্টা  শত্রুরা তাকে দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করিয়ে নেবে ।

                      এবার আসি প্রচার বাহিনীর মশি শক্তি সম্পর্কেঃ-
    একটা প্রবাদ আছে যে, অসির থেকে মশি বড় । আবার সৈনিকের বন্দুক থেকেও কলমের জোর অনেক বেশী অসি অর্থাৎ হাতিয়ার । এই হাতিয়ার দিয়ে আপনি এক বা বহু সংখ্যক লোককে মারতে পারেন বা ভয় দেখিয়ে আপনার পক্ষে আসতে বাধ্য করতে পারেন । তবে জোর করে কিন্তু খুব বেশী দিন আপনি এই অসির ব্যবহার করতে পারবেন না ।
    কিন্তু মশি অর্থাৎ কলমের কালি । এই কালি এক-দু'জন নয় বংশ পরম্পরায় যুগের পর যুগ মানুষকে আপনার  বিচার ধারায় অনুপ্রাণিত করে রাখতে পারবেন । উদাহরণ হিসাবে আমরা ফিরে যেতে পারি বৈদিক যুগের শুরুতে । সেখানে বৈদিকবাদীরা মানুষকে তাদের বশবর্তী করে রাখার জন্য জীবনে বেঁচে থাকা ও প্রগতির জন্য যে প্রধান তিনটি উপাদান -
                   শিক্ষার অধিকার
                   সম্পত্তির অধিকার  
             এবং অস্ত্রেরঅধিকারকে হরণ করেছিল।
শিক্ষা বিনা মানুষের প্রগতি সম্ভব নয় । জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা অনিবার্য । শত্রু মিত্রের পরিচয় বোঝার জন্য জ্ঞানার্জন আবশ্যক । তাই বৈদিকেরা সর্ব প্রথমে জ্ঞানার্জনের অধিকারকে হরণ করে । তারা কিন্তু এই অধিকারকে হরণ করেই থেমে থাকেনি । কারণ তারা জানত কোন কিছুই চিরস্থায়ী ভাবে হরণ করে রাখা যায় না । তাই তারা উপায় বের করল গোলাম বানানোর ।  কোন গোলাম ? মানষিক গোলাম । কিভাবে বানাল ? মানষিক গোলাম বানানোর জন্য তারা সর্বপ্রথমে পূর্ব বৌদ্ধ কালের পুরানাদিকে নষ্ট করে নিজেদের মত করে লিখতে শুরু করে ঐ একই নাম দিয়ে । অর্থাৎ এমন হোল -সন্তান যে মা-বাবার কোলে বেড়ে উঠছে তার পিতা কিন্তু অন্যে । অর্থাৎ নামে সন্তান আমার হলেও আমাকেই ধ্বংস করার জন্য বেড়ে উঠছে । যার জন্য সমস্ত বৈদিকবাদী গ্রন্থে আমরা দেখতে পাই মূলনিবাসী রাজা-মহারাজাদেরকে আমাদের কাছে আমাদের শত্রুরূপে তুলে ধরেছে । তাদেরকে রাক্ষস, দস্যু, দানব ইত্যাদি নাম দিয়েছে । আর আমরা আজও শিক্ষার অধিকার অর্জন করেও জ্ঞানের আলো জ্বালতে পারলাম না । যার জন্য বৈদিকতার জ্বালে ফেঁসে আছি শত্রুকেই আপন মিত্র ভেবে আলিঙ্গন করছি । আমাদের সর্বনাশের জন্য পিপিলিকার মত পাখনা মেলে বৈদিকতার আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছি ।
     আমাদের বর্তমান মতুয়া 'মশি'চালনা কারিদের বেশীরভাগই ঐ আগুনে ঝাপ দেওয়ার কাজ করছি । আর নিজেকে সরার উপরে তুলে ধরার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছি । তার জন্য আমরা নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলেই মনে হয় ধন্য হই । কিন্তু কেন ?
    আমরা প্রায় সকলেই কম বেশী জানি যে,হরিলীলামৃত ছাপাতে গিয়ে সেই সময় (১৯১৬ সালে) কুড়ি(২০) টাকা ঘুষ দিতে হয়েছিল । বই ছাপানোর জন্য ঘুষ কেন ? কারণ, বৈদিকবাদীরা জানত যে, কোন বই-ই কোন জাতিকে জাগানোর একমাত্র হাতিয়ার হ'তে পারে । তাই তারা বই ছাপাতে রাজি না হলে ঘুষ পর্যন্ত দিতে হয় তাতেই কিন্তু সব সমাধা হয়নি । সেখানে ঐ বইকে তাদের মত করেই পরিবর্তন করতে হয়েছে বৈদিকতার বুনো জল ঢোকাতে হয়েছে হরিলীলামৃতে । বৈদকতার বেড়া দিয়ে অবৈদিকতাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে ।
     এটাতেও থামেনি বৈদিকবাদীরা । তারা মূল গ্রন্থকে কিন্তু আর ফেরতও দেয়নি । কারণ, বৈদিকবাদীরা ভাল করেই জান্ত যে, মূল গ্রন্থ ফেরত দিলে পরবর্তিতে ছাপানো গ্রন্থের মধ্যে যে বুনো জল ঢোকানো হয়েছে সেটা কিন্তু বেশী দিন ধরে রাখা যাবেনা । তাই বৈদিকবাদীরা ছাপানো গ্রন্থকে এমন ভাবে মিলাবট করল যে, হরিচাঁদ ঠাকুর অবৈদিকবাদী নন, তিনি বৈদিকবাদীদেরই একজন অবতার । বৈদিকতার প্রচারক । যার ফলে বৈদিকবাদীদের ব্যাবস্থা সুদীর্ঘ হতে পারবে । তাই তাদের সেই তীক্ষ্ণ জ্বালে আজও আমাদের মশি চালনাকারিরা ফেঁসে থেকে হরিচাঁদকে  অবতার -ভগবান-মৈথিলি ব্রাহ্মণ ইত্যাদি বানানোর খেলায় মেতে জাতিকে অধপতিত করে নিজের মুন্ডিটাকে তুলে ধরার কাজ করা হচ্ছে । আর যার পরিনতিতে আজ মতুয়া ধর্ম শুধু নাম-গান আর চাল-কলা খাওয়ার মধ্যেই বেঁচে আছে । যুগান্তকারী ধর্মীয়, সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনবাদী ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলনা । কারণ, সেটা হ'তে গেলে আগে প্রয়োজন নিজের মনের কলুষতা থেকে মুক্ত হওয়া । আমরা যে বৈদিকতার মাদক পান করেছি, সেই নেশার ঘোরে আজও মেতে আছি । যার জন্য আমাদের চোখে সব কিছুই রঙিন মনে হয় ।

      তবে হ্যাঁ, খুব সামান্য হলেও বেশ কিছু মশি চালকের মধ্যে রাজহাঁস হয়ে ওঠার মশালা দেখতে পাচ্ছি । তাঁদের লেখায় ফুঁটে উঠছে যুক্তি সংগত গবেষণা মূলক ভাবনা চিন্তার স্ফুরুন । যেটা মতুয়া ধর্মকে প্রগতি দেওয়ার জন্য এবং মতুয়াদের সঠিক দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা গ্রহন করছে । সেই লেখক ও তাঁদের লেখা বইগুলো যেটা অন্তত আমার বোধ বুদ্ধিতে এখনও পর্যন্ত অসাধারাণ বলে মনে হয়েছে । আমি যে বইগুলোর কথা বলতে যাচ্ছি, সেটা আপনারাও হয়তঃ কিছুটা জানেন । তবুও সেই নাম গুলোকে আমি উল্লেখ না করে পারছিনা । সেগুলো নীচে দেওয়া হ'লঃ-
লেখক ডাঃ মণিন্দ্রনাথ বিশ্বাস-এর লেখা
(১) হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত(কাব্য)
(২)গুরচাঁদের প্রত্যক্ষ শিক্ষা
(৩) আমার আমি( কবিতা)
(৪) প্রশ্নোত্তরে মতুয়া দর্শন
লেখক মনি মোহন বৈরাগী-এর লেখা
(১) অস্পৃশ্য ও অনগ্রসর জাতির মুক্তি আন্দোলনে হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া ধর্ম 
(২) অনালোকিত অতীত ইতিহাসে ভারতীয় মূলনিবাসীরা ও তাদের ধর্ম ভাবনা
(৩) বৌদ্ধ ও মতুয়া ধর্মের আলোয় অবৈদিক ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতি
(৪) এক অভিন্ন অবৈদিক সনাতনী দর্শন বৌদ্ধ ও মতুয়া দর্শন
লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী-এর উপন্যাস -মতুয়া এক মুক্তি সেনা
লেখক সুকৃতি রঞ্জন বিশ্বাস-এর লেখা- মতুয়াধর্ম এক ধর্ম বিপ্লব   
এছাড়া দু'টি সংকলিত বই হচ্ছে-
(১) শ্রী সন্তোষ কুমার বারুই (সংকলক ও সম্পাদক)-
ঠাকুর শ্রী শ্রী হরিচাঁদ মানব পুরুষঃ অধ্যাত্ম পুরুষ
(২) কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর সম্পাদিত-শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া ধর্ম আন্দোলন
এই সংকলন দু'টিতে কিছু কিছু লেখা গতানুগতিকতার প্রতিকুলে গিয়ে কঠিন বাস্তবকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে । আর মতুয়া দর্পন পত্রিকার ৫৬ সংখ্যায় লেখক কালিদাস বারুরীর লেখা-'মতুয়া জীবন কেমন হওয়া দরকার'লেখাটি সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভিষণ মুল্যবান বলে আমার মনে হয়েছে । এছাড়াও কিছু কিছু লেখা -বিভিন্ন পত্রিকায় উঠে আসছে যে গুলো পরিবর্তন মূলক এবং সময় উপযোগী । 

                   

 
                                            


           


 








                                    
                         
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                            



বাবা সাহেবের ধর্মান্তকরণ ও বিজয়া দশমী

$
0
0
   









        বাবা সাহেবের ধর্মান্তকরণ ও বিজয়া দশমী
জগদীশ রায়(মুম্বাই) M No. 09969368636  E-mail ID roy.1472@gmail.com
    আমরা জানিযে, 14October 1956সালে বাবা সাহেব ডঃ বি. আর. আম্বেদকর  বৌদ্ধধম্ম গ্রহন করেছিলেন বা স্বধম্মে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন ।
    কিন্তু এখানে বিশেষ আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বাবা সাহেব 14October 1956হিসাবে বৌদ্ধধম্ম গ্রহন করেননি । তিনি 1935 সালে 13Octoberমহারাষ্ট্রের ইওলা (Yeola) তে ঘোষণা করেন যে, ‘আমি হিন্দু ধর্মে জন্ম গ্রহন করেছি, যেটা আমার হাতে ছিলনা । (অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে আমি কিছু করতে পারিনা। ) কিন্তু আমি হিন্দু হয়ে মৃত্যু বরণ করব না।’ এই ঘোষণার স্থলকে  বাবা সাহেব নাম দিয়েছেন –‘মুক্তিভুমি’
    এখন কথা হচ্ছে,1935সালে ধর্ম পরিবর্তনের কথা ঘোষোণা করেন, কিন্তু তিনি 1956 তেই কেন ধর্ম পরিবর্তন করেন ? 1935 থেকে 1956 পর্যন্ত তো অনেক সময়। তবে তিনি 1956 কেই কেন ধম্মপরিবর্তনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন ? এর পিছনে কি কোন বিশেষ কারণ আছে ?
    হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী বাঙ্গালিদের দুর্গা পূজার মধ্যে একদিন হয় দশমী। প্রচলিত কথায় বলা হয়, রাম, রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়ী হয় ; তাই এই বিজয় দশমী। বাস্তবে কি তাই ? দুর্গা পূজার ইতিহাস তো সেদিনকার আর রাম বিজয় প্রাপ্ত হয়েছিল বলেবিজয়া দশমী করা হ’লে বাংলার  বাইরে কেন হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী বাঙালিরাছাড়া অন্য কেউ এই পূজা করেন না ?
আসলে এই বিজয়া দশমীর ইতিহাসকে Encounterকরা হয়েছে। আর ব্রাহ্মণরা তাদের সুবিধা মত কাহিনীতে রূপান্তারিত করেছে।  
    এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। মহারাষ্ট্রে বিশেষ করে বৌদ্ধধম্মে বিশ্বাসীরা বিজয়া দশমীকে খুব করে পালন করেন। কারণ বাবা সাহেব বিজয়া দশমীর দিন ধর্মান্তর করেছিলেন। কিন্তু সাধারণতঃ প্রচার হয় যে, বাবা সাহেব 14 Octoberধর্মান্তর করেছিলেন। এরপিছনেআসল ঘটনা কি ?  
    আপনারা অনেকেই হয়তঃ জানেন যে, সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধম্ম গ্রহন করেছিলেন কলিঙ্গ  বিজয়ের পর।সম্রাট অশোকের জীবনে ধম্মানুভুতির মাইলস্টোনহিসাবে কলিঙ্গ বিজয়কে মনে করা হয় তিনি যে দিন এই বৌদ্ধধম্ম গ্রহন করেন, সেই দিনটি ছিলআশ্বিন মাসের শুক্লাদশমীর দিন। তিনি হিংসার নিতি থেকে মুক্ত হয়ে বিজয় প্রাপ্ত হন। সারা দেশে পালিত হোল উৎসব। শারদোৎসব। অর্থাৎ শরৎকালের বিজয় উৎসব। সম্রাট অশোকের ধম্মবিজয় উৎসব।যা পরবর্তীকালে সারা ভারতবর্ষে রাষ্ট্রীয়  উৎসবে পরিণত হয়।তো সম্রাট অশোক যে,  বিজয় প্রাপ্ত করেছিলেন সেই বিজয়ের আড়াই হাজার (2500) বছর পূর্ণ হচ্ছিল 1956 সালের October মাসেআরওইমাসেরযেদশমীরদিনছিলসেটাইংরাজীমতে14 October ছিল। বাবা সাহেব কিন্তু 14 October  মনে করে ধর্মান্তর করেননি। তিনি একাধারে সম্রাট অশোকের প্রতি যেমন শ্রদ্ধার্পণ করেন। তেমনি 1956 সালের October মাসের দশমীর দিনকে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণ করেন এবং সবাইকে এই দিনটির গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছিলেনতাই October মাসের দশমীর দিনটাকে বৌদ্ধিক ভাবনায় বলা হয় অশোক বিজয় দশমীসেই অশোক বিজয় দশমীকে Encounter করে দিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিজয় দশমীতে রূপান্তরিত করেছে।   
এবার এই Encounterএর ইতিহাস কিছুটা আলোচনা করা যাক। তারপর আবার এই দিন সম্পর্কে আলোচনায় আসা যাবে।
     ব্রাহ্মণরা যখন প্রতিক্রান্তি করেঅর্থাৎ পুষ্যমিত্র শুঙ্গ দ্বারা সম্রাট অশোকের নাতি(চতুর্থ পিড়ি)  বৃহদ্রথকে হত্যাকরে (185খ্রীষ্টপূর্বাব্দে)ব্রাহ্মণ্যবাদের সুত্রপাত করে।তারপরেইরামায়ণ লেখা  হয়। এর পূর্বে রাম  আর রাবছিলই না। রাবণেরযে  প্রতীক তাঁকে রাক্ষস বলে, অশুভ-এর প্রতীক বলে ঘোষণা করেআররাবণের‘দশমুখ’ দেখানো   হয়। আসলে বুদ্ধিজমে ‘দশপারমিতা’-এর বেশী মান্যতা দেওয়া হয়। আর সে জন্য রাবকে দশ  মুখওয়ালা বানিয়ে দেখানো হয়েছে। আট, নয় বা এগার মুখ ওয়ালা কেন দেখানো হয় নি ?   
    ব্রাহ্মণরা যখন প্রতিক্রান্তি করে তখন থেকে ভারতে বিজয়া দশমী উৎসব হিসাবে  পালন করে। আর সম্রাট অশোক যে বিজয় প্রাপ্তি করেন দশমীর দিন তাকে সমাপ্ত করার জন্য ষড়যন্ত্র চালু করে। মারাঠীতে যাকে ‘দসরা’ বলে, আর হিন্দীতে লোকেরা একে ‘দশ্‌হরা’ বলে। যেটা দশ মুখওয়ালা রাবণকে ‘দশহরা’ নাম দিয়েছে, আর বিজয়া দশমীকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। আর এর  জন্য রাবণকে জ্বালানোর প্রকৃয়া করে।
    ফিরে আসি পূর্বের আলোচনায় বাবা সাহেব যে ধম্ম গ্রহন করেছিলেন, এখানে 14 October কিন্তু মহত্ত্বপূর্ণ নয়। মহত্তপূর্ণ হচ্ছে-‘অশোক বিজয়া দশমী’র 2500বছর পূর্ণ হওয়ার যেটা 1956 সালে হয়েছিল। আর দিনটি ছিল 14 October. তাই আমাদেরকে বাবা সাহেবের ধর্মান্তরের দিনকে 14  October না বলে ‘অশোক বিজয় দশমী’-এর দিন বলা বা লেখা উচিত কারণ বাবা সাহেবের উদ্দেশ্যে ছিল আশ্বীন মাসের সারদ শুক্লা বিজয়া দশমীকে পালন করা। কারণ সম্রাট অশোকের ধম্মপরিবর্তন দিন ইংরেজী তারিখ হিসাবে পালিত হয়নি। কিন্তু 1956 সালের 14 Octoberছিল অশোকা বিজয়া দশমীর দিন । তাই আমাদেরও বিজয়া দশমীকে সম্রাট অশোকের ‘অশোক  বিজয় দশমী’ দিন এবং বাবা সাহেবের ‘ধম্মচক্রপরিবর্তন’ দিন হিসাবে পালন করা উচিত। কারণ বাবা সাহেব যে দিন অর্থাৎ এই অশোক বিজয় দশমীর দিন ধর্মান্তর করেন সেটা কে ‘ধম্মচক্র প্রবর্তন’দিন বলা হয়। অর্থাৎ সম্রাট অশোকের বৌদ্ধধম্ম গ্রহনের দিন হচ্ছে অশোক বিজয়া দশমী, আর এই অশোক বিজয়া দশমীর দিন বাবা সাহেব যে বৌদ্ধধম্ম গ্রহন করেন তাকে নতুন নাম দেওয়া হয় ‘ধম্মচক্র প্রবর্তন’ দিন । ধম্মচক্র প্রবর্তন এর অর্থ হচ্ছে- বৌদ্ধ ধম্মের চাকা (সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায়) কে গতিশীল করা।এই ইতিহাস আমাদের জানা ভীষণ দরকার বলে মনে করি। কারণ সঠিক ইতিহাসই সঠিক দিশা নির্দেশ করে।আশা করি, এই লেখাটি আমাদের  বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে সাহায্য করবে ।  

                             ____________________________

বুদ্ধ হরিচাঁদ ও আম্বেদকর-এর আন্দোলনের সম্পর্ক

$
0
0
বুদ্ধ হরিচাঁদ ও আম্বেদকর-এর আন্দোলনের সম্পর্ক 
জগদীশচন্দ্র রায় (মুম্বাই) M. No. 09969368536 E mail ID roy.1472@gmai.com
মতুয়া আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন প্রায়ই দেখতে পাই যে,মতুয়া আন্দোলনের সঙ্গে বুদ্ধকে  এবং আম্ববেদকরকে কেন সংযুক্ত করা হচ্ছে।বিষয়টাকে সাধারণ দৃশটিতে বিশ্লেষণ করলে কিন্তু সঠিক তাৎপর্যকে অনুধাবন করা যাবে না । কারণ, যেকোন ঘটনার পিছনে যেমন কারণ থাকে, আর সেই কারণের সঙ্গে জুড়ে থাকে তার অস্তিত্ত্বের প্রশ্ন 
     তো আমরা প্রথমেই দেখে নেই মতুয়া আন্দোলন বা হরি-গুরুচাঁদের সঙ্গে বুদ্ধের কি সম্পর্ক আছে ।
     আমি প্রথমেই এই ধরনের প্রশ্ন কর্তাদের অনুরোধ করব যে, তাঁরা যেন যুক্তিবাদী মানসিকতা  নিয়ে মতুয়া আদর্শকে বিচার বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করেন । আর এই বিচার বিশ্লেষণের জন্য তাদের 'হরিলীলামৃত'কে গভীর ভাবে অধ্যায়ন করা দরকার । তা না হ'লে এই লেখা তাদের কাছে তেমন একটা সুরাহা জনক নাও হ'তে পারে । কেন লীলামৃত পড়তে বলছি ? কারণ,'লীলামৃত'-এর ১৫ পৃষ্ঠায়- 'শ্রীশ্রীহরিঠাকুরের জন্ম বিবরণ'(প্রথম সংস্করণ ১৩২৩ বঙ্গাব্দ) -এ লেখা আছে -                      বুদ্ধের কামনা তাহা পরিপূর্ণ জন্য।
                     যশোমন্ত গৃহে হরি হৈল অবর্তীণ ।।
অর্থাৎবুদ্ধের কামনাকে পূর্ণ করার জন্য হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম হয় । এখন প্রশ্ন হচ্ছে বুদ্ধের কি  কামনা ছিল ? বুদ্ধের কামনাকে জানতে বা বুঝতে হ'লে বুদ্ধিজমকেও জানতে হবে । তা না হ'লে এর গভীর মর্ম অনুধাবন করা সম্ভব হবেনা ।
    অমরা এখানে দেখতে পাই যে,-বুদ্ধের কামনা কে পূর্ণ করার জন্য হরিচাঁদ ঠাকুর জন্ম গ্রহন করেছেন বা অবতীর্ন হয়েছেন । আর্থাৎ বুদ্ধিজমের ভাবনায় বা বিচার ধারাকে পূর্ণ করার জন্যই তিনি অবতীর্ন হয়েছেন । অর্থাৎ বুদ্ধিজমের পরবর্তী stage হচ্ছে মতুয়াইজম । আর্থাৎ মূল হচ্ছে বুদ্ধিজম । সেটাকে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নবরূপায়ন হচ্ছে মতুয়াইজমকেন এই ভবনা ?হ্যা, এই ভাবনার গভীরে প্রবেশের পূর্বে আমরা জেনে নেই বুদ্ধের কামনা সম্পর্কে-
চরথং ভিখ্‌খবে চারিক্কম্‌
বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায় ।  
অন্তানু হিতায়, লোকানুকম্‌পায় ।
আদি কল্যান, মধ্য কল্যান, অন্ত কল্যান
বুদ্ধ পাঁচ জন ভিক্ষুর সামনে এই গাথা বলেন । তাদের তিনি বলেন, হে ভিক্ষুগণ, তোমরা চলতে চলতে ভিক্ষা করবে । আর্থাৎ পায়ে হেটে ভিক্ষা করবে । আর এই চলার সঙ্গে জনে-জনে বহুজনদের কাছে গিয়ে প্রচার করবে, যে বিচার ধারা প্রারম্ভে কল্যানকারী, মধ্যে কল্যানকারী, আর অন্তেও কল্যানকারী হবে । আর যেটা অল্পজনের হিত্‌ সংরক্ষণকারী নয় । যেটা হবে বহুজন হিতায় এবং বহুজন সুখায় ।
    আমরা আরও দেখতে পাই বুদ্ধের মূল আদর্শ হচ্ছে- সমতা, স্বতন্ত্রতা, বন্ধুতা ও ন্যায় ।
তো হরিচাঁদ ঠাকুরও সেই আদর্শ বা কামনায় অনুপ্রানিত হয়েছিলেন । আর সেই আদর্শকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পরিবর্তন করে তিনি 'বৌদ্ধধম্ম'-এর নবরূপায়ন করলেন 'মতুয়াধর্ম'নাম দিয়ে ।  এখানে আরও একটি কথা থেকে যায়, যে বুদ্ধের কামনাকে পূর্ণ করার কথা । অর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুর ভাবনায় এটাও ছিল যে, বুদ্ধের কামনা বা আদর্শ পূর্ণতা পায়নি । পূর্ণরূপে বিকশিত হয়নি । সেই অপূর্ণতাকে তিনি পূর্ণ করতে চান । তাই তার আবির্ভাব । আর এই অপূর্ণতাকে তিনি পূর্ণ করার জন্য বুদ্ধের বিচার ধারার প্রচারক ভিক্ষুদের ন্যায় মতুয়া প্রচারক নির্মান করেন । যাদেরকে পাগল, গোসাই নাম দেন । তবে তিনি জানালেন, এই মতুয়া ধর্ম প্রচারের জন্য সন্যাসী হতে হবেনা । তিনি গৃহ ধর্মকে বেশী প্রাধান্য দিলেন । আর বললেন, হাতে কাম আর মুখে নাম করার জন্য কারণ সেই সময়ে অলস বৈষ্ণবরা বিনা পরিশ্রম করে শুধু নাম বিলিয়ে পরগাছা হয়ে চলতযেটা সমাজ তথা দেশের পক্ষে ক্ষতি কারক ।  

    এবার আমরা দেখে নেই হরিচাঁদ ঠাকুর বুদ্ধিজমকে কেন নবরূপায়ন করে মতুয়াইজম  করলেন ।
   প্রথমেই আমি বলেছি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে হরিচাঁদ ঠাকুর এটা করে ছিলেন । কিন্তু সেই সময়টা কি ছিল ? সেই ইতিহাসের মধ্যে লুকিয়ে আছে বুদ্ধিজমের বীজ । যে বীজটার মধ্যে বুদ্ধিজমের সব গুণ নিহীত ছিল । কিন্তু কালের বিবর্তনে যেমন অনেক প্রাণীও পরিবর্তীত হয় । তেমনি এই কালের বিবর্তনে বুদ্ধিজমকে পরিবর্তীত করে মতুয়াইজম করতে হয়েছিল হরিচাঁদ ঠাকুরকে




     এবার আসি সেই কালের বিবর্তন বা সেই ইতিহাস সম্পর্কে ।
    আপনারা এটা নিশ্চয় জানেন যে, হরিচাঁদ ঠাকুরকে পতিত পাবন বলা হয় । পতিত এবং পাবন । দু'টি শব্দ । পতিত অর্থাৎ উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়া । আর পাবন অর্থাৎ উদ্ধার করা । পতিত পাবন অর্থাৎ নীচে পড়ে যাওয়াকে টেনে তোলা বা উদ্ধার করা । এবার কথা হচ্ছে- কে বা কারা  কিভাবে পড়ে গিয়েছিল ? কোথা থেকে পড়ে গিয়েছিল ? কে বা কারা এই পড়ে  যাওয়া বা ফেলে দেওয়ার কাজ করেছিল ? কেন ফেলে দিয়েছিল ?
   ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই বাংলায় প্রায় চারশ বছর পাল রাজত্ব ছিল । আর এই পালরা ছিল বুদ্ধিষ্ট । তাই 'গুরুচাঁদ চরিত'-এ আমরা দেখতে পাই-
                     পালবংশ মহাতেজা   বঙ্গদেশে যবে রাজা
                             বৌদ্ধ ধর্ম্ম আসিল এদেশে ।
                     বৌদ্ধ রাজ-ধর্ম্ম মানি বঙ্গবাসী যত প্রাণী ।
                             বৌদ্ধ ধর্ম্মে দীক্ষা নিল শেষে ।।
                                                       (পৃষ্ঠা নং ২৮ ,পঞ্চম সংস্করণ ২০০৯ )
 আর এই পালরা কেমন ছিলেন?
                       পালরাজন্য অকুতোভয় বীর্যবান।
                       অসুর মানব নমঃশূদ্রের সন্তান ।।
                       কাশ্যপের গোত্র এরা সুদাসের জ্ঞাতি ।
                       অশোকের রক্তধারক নীতিতে স্থিতি।। (হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত পৃঃ নং ১২১)

আমাদের মনে রাখতে হবে যে প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত বঙ্গে যে সংখ্যাবহুল জাতিটি বসবাস করছে তাদের বর্তমান নাম নম: শুদ্রএই ‘নমঃ’ কথার উদ্ভব হয়েছে বুদ্ধিজম থেকে । বুদ্ধের বন্দনায় আমরা দেখতে পাই- নমঃতৎস ভগবতো আরা হত, সম্‌ভাশ্যং বুদ্ধশ্য...  
বঙ্গে ব্রাহ্মনদের অনুপ্রবেশে যারা ‍বাধা দিয়েছিল তারাবর্তমানেরনম:শুদ্রদের পূর্বপুরুষ ছাড়া অন্য  কেউ হতেই পারেনা নম:শুদ্রদের পূর্বপুরুষেরা গুপ্ত যুগে ব্রাহ্মণদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল  বৌদ্ধধর্মাবলম্বী পাল নৃপতিদের রাজত্বকালে ব্রাহ্মণরা নম:শুদ্রদের উপর অত্যাচার করার সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি; কিন্তু বঙ্গে কর্ণাটকী ব্রাহ্মন সেন বংশের রাজত্ব স্থাপিত হলে ব্রাহ্মণরা সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে এবং সেই সময়ই সর্ব প্রথম নম:রা ব্রাহ্মনদের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল কারণ সেই সময় রাজা বল্লাল সেননের আদেশে তার সৈন্যরা অহিংসমন্ত্রে দীক্ষিত বৌদ্ধদের ধরে ধরে নির্বিচারে হত্যা করেছিল,কারণ তার ঘোষণা ছিল-বাঙলার সমস্ত বৌদ্ধরা হয় ব্রাহ্মণ্যধর্ম গ্রহন করবে, নয়ত মৃত্যুকেই বরণ করবে। এই সময়ে বহু বৌদ্ধ ব্রাহ্মণ্যধর্ম গ্রহন করে প্রাণ রক্ষা করে এবং সর্বনিম্ন শূদ্র বর্ণে স্থান পায়। পরবর্তীতে তারা মাহিষ্য, পৌন্ড্র ইত্যাদি নামে চিহ্নিত হয় । বাকি বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণ্যধর্মের কাছে নতি স্বীকার না করে কেঊ যুদ্ধে প্রাণ দেন, কেঊ পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। আবার কেঊ কেঊ রাতারাতি মুসলমান হয়ে যান। সে জন্য তাদের ‘শুনে মুসলমান’ বলা হয় । তাঁরা আশ্রয় নেন বর্তমান কালের যশোর, খুলনা,  ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিহ প্রভৃতি নদী-নালা, খাল-বিল, নলখাগড়ার জঙ্গল পূর্ণ দুর্গম  অঞ্চলে । অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রাণ বাঁচাতে তাঁদের পূঁথিপত্র নিয়ে পালিয়ে যান তিব্বতে । কেউ কেউ চীনেও চলে যান। এই কারণে পরবর্তীকালে বাংলাভাষার আদি নিদর্শন বৌদ্ধসাহিত্য “চর্যাপদ”আবিষ্কৃত হয় তিব্বতে । আর যারা যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, ঢাকা, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরাই পরবর্তীকালে নমঃজাতি বলে পরিচিত হন। এই কারণেই বল্লাল সেন এবং তার বংশবদ ব্রাহ্মণ্যবাদীরা এই নমঃজাতির লোকদের প্রতি অর্থাৎ বৌদ্ধদের প্রতি ভয়ংকর ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁদের চন্ডাল নামে আখ্যায়িত করে সমাজে জল-অচল অস্পৃশ্য বলে ঘোষণা করে। (*১) নম:দের  প্রতি এই অমানসিঅত্যাচার চালানোর ফলে,কেউ কেউআবারপরে   প্রা বাচাঁনোর  ভয়ে নিজস্ব ধর্ম এবং সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে,ব্রাহ্মণ্য ধর্ম স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন তাই আমরা দেখতে পাই- 
                            নমঃজাতি প্রতি বাড়ে তীব্র অত্যাচার ।
                            ধর্ম আচরণে নাহি রহে অধিকার ।।
                            নিজধর্ম বৌদ্ধধর্ম নারে আচরিতে ।
                            না পায় ঢুকিতে হিন্দু ধর্ম আঙিনাতে ।।
                                                              (হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত পৃঃ নং ১২৭)

             এই ঘটনা কোন মতেই খৃষ্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীর আগে ঘটতে পারেনা
 পরে কিছু নম:রা ব্রাহ্মণ্যধর্মে যোগ দিলে তারা ব্রাহ্মণদের মুঠির মধ্যে এসে যায় তখন সুযোগ পেয়ে  ব্রাহ্মণরা তাদের মনের মধ্যে কয়েক শতাব্দী ধরে সঞ্চিত বিষনম:দের উপর বর্ষণ করতে শুরু করেব্রাহ্মণরা নম:দেরকে তাদের(ব্রাহ্মনদের) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত চতুর বর্ণ ব্যাবস্থার বাইরে বের করে দেয়      
                            নিজ ধর্ম হারিয়েছে আরো বহুজাতি।  
                           হিন্দুধর্ম মাঝে তারা পেয়ে গেল স্থিতি ।।
                           পাল রাজাদের জাতি নমঃজাতি যারা ।
                           ধর্মহীন হয়ে বঙ্গে পড়ে রল তারা ।।
                                                             (হরিচাঁদ তত্ত্বামৃত পৃঃ নং ১২৭)

 আর এদেরঅর্থাৎ এই ধর্মহীনদের  নাম দেয়পতিত,অস্পৃশ্য বা অচ্ছুৎগত আটশ বছর ধরে  এই নম:রা পতিত অস্পৃশ্য বা অচ্ছুৎ অবস্থায় পতিত হওয়ার ফলে প্রতিহিংসাকারী ব্রাহ্মণদের অত্যাচার, অপমান, অবহেলা ঘাত এবং অবরোধ সহ্য করতে করতে বঙ্গের একদা সংখ্যাবহুল এবং শক্তিশালী জাতিটি আজ করুন অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে 
ব্রাহ্মণ্য ধর্মের যাতা কলে প্রবেশের পূর্বে নম:দের ধর্ম কি ছিল সেটা পাল যুগের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ  করলেঅতি সহজে বোঝা যায় বর্তমান কালের পরিস্থিতিতে বিচার করে যদি একজন হিন্দু তথা ব্রাহ্মণকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী করার কথা মনে করা হয়, সেটা যেমন কল্পনা করা সম্ভব নয়, যেহেতু সেখানকার অধিকাংশ জনগণ ইসলাম ধর্মাবলম্বীতেমনি পশ্চিমবঙ্গে একজন বৌদ্ধ অথবা খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীকে মুখ্যমন্ত্রী বানানোর কথা কল্পনা করাও অবাস্তব বর্তমানে যদি এই পরিস্থিতি হয় তাহলে অষ্টম শতাব্দীতে বাংলার জনগণ সর্বসম্মতিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ধর্মপালকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্থানে অধিষ্ঠিত করেছিলে, সেটা কোন মতেই সম্ভব হত না যদি সেই সময় সেখানকার  অধিকাংজনগণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী না হতেন এখানে আমাদেরেএকটা কথা মনে রাখতে হবে যে গুপ্ত এবং সেন বংশ অস্ত্রবলে বঙ্গ দখল করেছিল কিন্তু ধর্ম পালকে বঙ্গের জনগণই রাজসিংহাসনে  বসিয়েছিলেন এর থেকে প্রমানিত হয় যে সেই সময় বঙ্গের বা বাঙলার অধিকাংশ জনগন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন
অতি প্রাচিন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত নম:রা বাঙলার একটি সংখ্যা-বহুল জাতি তাদের মধ্যে থেকে বহু সংখ্যক লোক ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়ার পরেও তারা পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলা মিলে হিন্দুদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি অষ্টম শতাব্দীতে যদি বাঙলার অধিকাংশ লোক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হন তাহলে সেই সময় নম:দের ধর্ম, ‘‘বৌদ্ধ ধর্ম(ধম্ম)’’ ছাড়া অন্য কিছুই হতে পারে না তাই আমরা একথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে হিন্দু ধর্মের খোঁয়াড়ে প্রবেশের পূর্বে নম:রা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল আর বল্লাল সেনের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্রাহ্মণ্য ধর্মকে স্বীকার করে নিয়েছিল
বল্লাল সেনের অত্যাচারের কথা বংশ পরম্পরায় আটশ বছর পরে এখনও নম:দের মস্তিষ্কে বিরাজ করছে নম:রা মনে করে যে বল্লাল সেনের তাদের পূর্ব পুরুষকে ব্রাহ্মণ থেকে চন্ডাল  বানিয়েছিলএই ধারনা সম্পুর্ণ রুপে ভুল বল্লাল সেনের  তাদের(নম:) পূর্ব পুরুষকে ব্রাহ্মণ থেকে নয় ,বৌদ্ধ ধম্মের ম্মানজনক স্থান থেকে বিচ্যুত করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অসম্মান জনক স্থান স্বীকার করে নিতে বাধ্য করেছিলকোন পরাজিত জাতির এরকমই পরিনতি হয়
ব্রাহ্মণ ধর্মাবলম্বীসেন-রা বঙ্গে ছিল বহিরাগত নম:রা যদি তাদের সঙ্গে একই ধর্মাবলম্বী হতেন তাহলে তাদের (নম:) উপর অত্যাচার করে দূর-দূরান্তে তাড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কোন যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না বল্লাল সেন পালবংশকে হটিয়ে বাঙলা দখল করেছিল বল্লাল সেন বাঙলা দখল করে নম:দের সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছিল কারণ নম:রা পাল বংশের সমর্থক ছিলেন  পাল এবং নম:রা স্বধর্মবলম্বী ছিল, এই সন্দেহই বল্লাল সেনকে নম:দের প্রতি অত্যাচারী করে তুলেছিল বল্লাল সেন বিদেশ থেকে ব্রাহ্মণ ডেকে এনে এবং বঙ্গের কোন কোন জাতিকে প্রলোভন দেখিয়ে নিজের দলে টেনে সংখ্যা ভারী করেছিল
আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে যে গুপ্ত যুগে খুব সামান্য সংখ্যক ব্রাহ্মণই বাংলায় প্রবেশ করেছিল আর পাল রাজত্বের শেষদিন পর্যন্ত বাংলা অঞ্চলে ব্রাহ্মণদের কিংবা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাব বিস্তার লাভ করতে সমর্থ হয়নি তাই সেই সময় বাংলার সব থেকে বড় জাতি নম:রা কোনমতেই ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুগামী হতে পারে নাহিউয়েন সাঙ্-এর ভ্রমন কাহিনি(629- 645) খৃষ্টাব্দ থেকে এটাও জানা যায় সেই সময় বাংলায় দেব মন্দির থাকলেও বৌদ্ধ বিহারের সংখ্যাই বেশী ছিলতিনি বাঙলার সব জাগায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোক দেখেছিলেন (*২)
এই আলোচনা থেকে আমরা নির্দিধায় আমরা এই সমাধানে আসতে পারি যে, নম:রা বা আজকের নম:শুদ্রদের পূর্বপুরুষরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন যে কথা হরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর উদ্ভাবনী দৃষ্টিতে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন । তাই তিনি বুদ্ধের কামনা কে পূর্ণ করার জন্য ধর্মহীন পতিতদের স্বধম্মে প্রত্যাবর্তনের জন্য ধর্মহীন পতিত হওয়া থেকে উদ্ধার করার জন্য মতুয়াধর্মের সৃষ্টি করেছিলেন । এতক্ষণে আমরা জানার চেষ্টা করলাম বুদ্ধের বা বৌদ্ধ ধম্মের সঙ্গে হরিচাঁদ ঠাকুর বা মতুয়া ধর্মের সম্পর্ক ।   

এবার আমরা দেখে নেই বাবা সাহেবের সঙ্গেই বা কি সম্পর্ক আছে হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর বা মতুয়া ধর্মের সঙ্গে
        বাবা সাহেব ১৯৩৫ সালে ঘোষণা করেন 'আমি হিন্দু হয়ে জন্ম গ্রহন করেছি । যেটা আমার হাতে ছিল না । অর্থাৎ আমার কিছু করার ছিলনা । তবে আমি হিন্দু হয়ে মৃত্যু বরণ করব না ।'আর তিনি ১৯৫৬ সালের অশোক বিজয় দশমীর দিন বৌদ্ধ ধম্ম স্বীকার করেন  বা স্বধম্মে প্রত্যাবর্তন করেন । স্বধম্মে কেন বলছি ? কারণ বাঙলার নমঃদের যেমন ব্রাহ্মণরা ধর্মহীন করে  পতিত করে রেখে ছিল । তেমনি ভারত বর্ষের বাকীদেরও  অর্থাৎ যারা ব্রাহ্মণ ধর্ম স্বীকার  করেননি তাদের অস্পৃশ্য করে রেখে ছিল । এদের ও কোন ধর্ম ছিল না । কিন্তু পূর্বে এঁরা সকলে          বৌদ্ধ ধম্মের ছিলেনতাই সামগ্রিক ভাবে দেখলে আমরা দেখতে পূর্বের বৌদ্ধরা পরবর্তিতে  পতিত ও অস্পৃশ্যে পরিনত হনবাবা সাহেব এই ইতিহাস খুব ভাল করে জানতেন তাই তিনি  স্বধম্মে প্রত্যাবর্তন করেন । এবং এই অস্পৃশ্যদের কে পূনঃরায় বৌদ্ধধম্ম স্বীকার করানোর প্রকৃয়া শুরু করেন । 

 এবার আমরা একটু অন্য ভাবে ভেবে দেখি । হরিচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলনকে অগ্রগতি দেওয়ার  কাজ করেন  গুরুচাঁদ ঠাকুর । তিনি সব চেয়ে বেশি জোর দেন শিক্ষা আন্দোলনের উপর । যার ফলে সমাজের অবহেলীত লোকেরা মুক্তির আলো দেখতে পান । অনেক সুফল উপভোগ করেন । তবে সেই আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করেন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল । তিনি তাঁর কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে বাবা সাহেবকে সংবিধান সভায় পাঠাতে সক্ষম হনবাবা সাহেবসংবিধানেরমাধ্যমেএই  অবহেলীত, পতিত, অস্পৃশ্যদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের উত্তরণের রাস্তাকে সুদূর প্রসারী করেন । সাংবিধানিক নিরাপত্তা দেন Scheduled Caste, Scheduled Tribe এবং Other Backward Class নাম দিয়ে যার ফলে এই লোকেরা এই সাংবিধানিক সুবিধা গ্রহন করে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছেন
  তো এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি হরিচাঁদের আন্দোলন কে অগ্রগতি দেন গুরুচাদ ঠাকুর । গুরুচাঁদ ঠাকুরের আন্দোলনকে আরো প্রসারিত করেন মহাপ্রাণ । আর এই আন্দোলনকে সাংবিধানিক ভাবে রক্ষা করার জন্য মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল বাবা সাহেবকে সংবিধান সভায় পাঠান । আর আজও আমরা যারা শিক্ষায় ও চাকরীতে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি  সেটা এই সাংবিধানিক কারণে । তো আমরা বিচার ধারা এবং বিচার ধারার প্রগতির আন্দোলনের ক্ষেত্রে দেখ্‌তে পাচ্ছি যে, একটা সুদৃঢ় যোগসুত্র রয়েছে । কারো অবদান অন্যের থেকে কম বা বেশি নয় একটার সঙ্গে একটা অঙ্গা অঙ্গিভাবে জড়িত । একটার অনুপস্থিতে অন্যটা ও লুপ্ত প্রায় । তাই আমরা আন্দোলনের দৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি যে, হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুররের সঙ্গে যেমন বুদ্ধের  আন্দোলন ও ধম্ম মিলেমিশে আছে, তেমনি এর সঙ্গে জুড়ে আছে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের মাধ্যমে বাবা সাহেব কে সংবিধান সভায় প্রেরণের সংগ্রামআর এই সংবিধানের রক্ষা কবচ  হচ্ছে সমস্ত আন্দোলনের ফসল । যে ফসল কে আমরা উপভোগই করে চলেছি । কাঁরা কিভাবে  আমাদের এই সুবিধা এনে দিলেন সেটা আজ আমরা জানতেও আগ্রহী নই উল্টা সেই সব মহামানবদের অবদানকে একদিকে উপভোগ করছি আর অন্য দিকে তাঁদের কে অস্বীকার করছি । এটা একটা জাতির ক্ষেত্রে মারাত্ত্বক cancerস্বরূপ । অচিরেই এর প্রভাব পড়তে বাধ্য । তাই আশাকরি, আপনারা আপনাদের  উদ্ধারের জন্য যে মহামানবরা আজীব আমরণ সংগ্রাম করেছেন তাদের যোগ্য সম্মান দেবেন এবং তাদের প্রদর্শিত আদর্শকে অনুসরণ করে pay back to the society করে ঋণ মুক্ত হওয়ার কাজে ব্রতি হবেন ।
----------------------------------------------------------------------------------
তথ্য সূত্রঃ *১ অতীতের সন্ধানে- সুধীর রঞ্জন হালদার।
          *২ ‘‘অদলবদলএর১৫ই গষ্টসংখ্যার’’ সত্যরঞ্জনতালুকদারেরলেখাচন্ডালনমশূদ্রএবংকাশ্যপগোত্র-তাদেরপরিচয়কী ?   
  



মতুয়া জীবন কেমআন হওয়া উচিৎ-১ -কালিদাস বারুরী

$
0
0
মতুয়া জীবন কেমআন হওয়া উচিৎ-১ -কালিদাস বারুরী
সংগৃহীত-মতুয়া দর্পণ ১৪বর্ষ, ৫৬ সংখ্যা,জানুয়ারী -মার্চ'২০১৪ ,মাঘ-চৈত্র'১৪২০,২০২ হরিচাঁদাব্দ।

     শ্রী শ্রী হরিচাঁদ কল্পতরু আগমনের দু-শোটি বছর পার করে এসেছি। এবার আত্ম  সমীক্ষাদীর্ঘ মতুয়া জীবনচক্রে ত্রুটি বিচ্যুতির চুলচেরা অঙ্ক কষে পাশ ফেলের ফলাফল জেনে নেবার সময় এসেছে । আলোচনা পর্বটি বিচক্ষণ দৃষ্টি দিয়ে হরি-গুরুচাঁদীয় বিপ্লবী শিক্ষা সামাজিক চরিত্রায়নে আমরা নিজেদেরকে কতটুকু সংগঠিত করতে পেরেছি তারই বিচার্য বিষয় ।
     শ্রী শ্রী হরিচাঁদ অভেদাত্মা রাজর্ষি গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রবর্তিত মতুয়া ধর্ম দর্শন সমাজের সর্বস্তরের বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বৃহৎ সংখ্যক মানুষের অগ্রগতির দিক ও দিশা তাতে কোন সন্দেহ নেই । মুষ্টিমেয় এক শ্রেনীর ধুরন্ধর স্বার্থান্বেষী মানুষের কুটকৌশলী দেবদোহায়ী  বর্ণবাদদুষ্ট সামাজিক চাপ-শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতনে পদপিষ্ট হয়ে কাতারে কাতারে বঙ্গের মানুষ যেমন ধর্মান্তরিত হয়েছে তেমনই উদেশ্য প্রণোদিত হীনমন্য প্রবর্তকহীন হিন্দুধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে অগ্রগতির দিক ও দিশা তাতে কোন সন্দেহ নেই ।  মুষ্টিমেয় এক শ্রেণীর ধুরন্ধর স্বার্থান্বেষী মানুষের কূটকৌশলী দেবদোহায়ী বর্ণবাদদুষ্ট সামাজিক চাপ-শোষণ বঞ্চনা ও নির্যাতনে পদপিষ্ট হয়ে কাতারে কাতারে বঙ্গের মানুষ যেমন ধর্মান্তরিত হয়েছে তেমনই উদেশ্য প্রণোদিত হীনমন্য প্রবর্তকহীন হিন্দুধর্মীয় ব্যবস্থাপনায় বৃহৎ সংখ্যক মানুষকে শিক্ষা অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার থেকে হাজার যোজন দূরে সরিয়ে রেখেছে ।
     এমনি এক যুগ সন্ধিক্ষণে পতিত পাবন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব(১৮১২-১৮৭৮) । শিক্ষা-জ্ঞান জীবে প্রেম, কর্ম-সাম্য এবং স্বাধীন আধ্যাত্মিক তত্ব ও দর্শন সংম্পৃত্ত "মতুয়া ধর্ম"উপহার দিলেন মৃতপ্রায় পতিত জাতিকে । ভেঙ্গে দিলেন ব্রাহ্মণ্য  ষড়যান্ত্রিক মানুষ দলনীতি বিধি বিধান । যুগ পুরুষ হরিচাঁদ ভারতের নবীনতম ঐতিহাসিক ধর্ম ও কর্মের স্রষ্টা ও দ্রষ্টা । ঘৃণক আর দোলকদের ফতোয়াকে অগ্রাহ্য করে শুরু করলেন বহুজন মুক্তির আপোষহীন সংগ্রাম ।
     তাঁর প্রবর্তিত প্রেমভক্তির পূর্ণ মায়া মমতা ভরা মত ও পথ 'মতুয়া ধর্মের'ছায়াছত্রতলে  লক্ষ কোটি মানুষ পেল মুক্তি মোক্ষ, জীবনের বিকাশ-শক্তিতে চেতনা । মন্ত্র দিলেন নিজ নাম, 'হরিবোল'
     ভক্তি ভাবের পশরা সাজিয়ে ভক্ত আর ভগবানের কথা লিখেছেন মহানন্দ হালদার এবং রসরাজ তারকচন্দ্র ।
               "নাহি চেনে কোন দেবী, ঘট পট বিম্বা ছবি ।
                জানে, মনে প্রাণে শুধু হরিচাদে ।।'
                দীক্ষা নেই করিবে না তীর্থ পর্যটন ।
                মুক্তি স্পৃহাশূন্য নেই সাধন ভজন ।
                 যাগ-যজ্ঞ তন্ত্র মন্ত্র দীক্ষা
                 কোন কিছুর নাহি প্রয়োজন ।
                 'হরিনাম মহামন্ত্র জান সর্বজন ।।"
     ঠাকুরের বাণীর মধ্যে লুকিয়ে আছে আমার জীবনের দিক নির্ণয়ের নিশানা এবং ঠিকানা । যাঁর কৃপা ও করুণায় আমি শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিন প্রতিষ্ঠা পেয়েছি -সেই করুণার সাগর পরিত্রাতা হরিচাঁদ ভিন্ন আমার জীবনে অন্য কোন দেব দেবী , ঘট পট পূজা নেই, থাকতে পারে না । দীক্ষা নেই, তীর্থ পর্যটন নেই, যাগ-যজ্ঞ, তন্ত্র-মন্ত্র কিছুই নেই । একমাত্র হরিচাঁদই আমার উপাস্য ।
     দীক্ষা-শিক্ষা মন্ত্রের অসারতার কথাও তিনি জোরের সঙ্গে ঘোষণা করলেন-
                     "দীক্ষা মন্ত্র দেয় গুরু কর্ণে মুখ রাখি ।
                      হরিনাম মন্ত্র বিনা, সব মন্ত্র ফাঁকি ।।"
তা সত্ত্বেও মতুয়াদের মধ্যে দীক্ষা মন্ত্রের প্রচলন সর্বত্র দেখতে পাই । হরিচাঁদ  দৃঢ়তার সঙ্গে ভক্তদের সাবধান করলেন এবং অভয় দিয়ে বললেন-
                      "হরিনাম  মন্ত্র বিনা, সব মন্ত্র ফাঁকি।"
     -অর্থাৎ হরিনাম-ই একমাত্র মহৌষধ-এর উপরে কোন ঔষধ নেই ।
     তিনি পূর্ণ ভরসা দিয়ে বললেন-"আমার নাম অর্থাৎ 'হরিনাম'উচ্চারণে জীবনীয় শক্তি ও মুক্তি পাবে, আর কিছুর প্রয়োজন নাই । তা সত্ত্বেও অধিকাংশ মতুয়া পরিবারে বেশ ঘটা করে বিভিন্ন দেব-দেবী পূজার প্রচলন বিদ্যমান। পাশাপাশি কৃষ্ণনাম যজ্ঞ সহ অন্যান্য অনেক(ব্রাহ্মণ্যবাদী) গুরু পূজাও বিদ্যমান । কাউকে আঘাত দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, আমার প্রশ্ন "বিশ্বাসের"আমার 'বিশ্বাস'যদি বহুমুখি হয় সে ক্ষেত্রে আমার ভক্তি-শ্রদ্ধা-পূজা সবই বহুমুখি হবে এবং জনে জনে বিভক্ত হতে থাকবে । ফলে হরি পূজা পূর্ণতা লাভ করবে না । আমার 'বিশ্বাস'ও একমাত্র 'হরি'কেন্দ্রীক হবে না, আমার উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ একজনের উপরে আমি বিশ্বাস রাখতে পারছি না, ভুলে গেছি তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা । বর্তমান প্রতিষ্টা তিনিই আমাকে দিয়েছেন । লক্ষী, সরস্বতী ,কালী, দুর্গা, রামকৃষ্ণ,অনুকুল,   নিগমানন্দ, জগদানন্দ এঁনারা আমার উদ্ধারকর্তা নন । অতএব মতুয়াদের ভাবতে হবে, দ্বি-চারিতা হচ্ছে না তো ? যেখানে হরিঠাকুর নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে বলেন-
                        "পূর্ণ আমি হরিচাঁদ অপূর্ণের পিতা
                        সাধনা আমার কন্যা, আমি জন্মদাতা ।"
এতবড় প্রমাণ আর ভরসা থাকা সত্তেও মতুয়াদের বহুমুখি হওয়া  মানেই তো হরিচাঁদে  বিশ্বাসের অভাব । পক্ষান্তরে মনগড়া ব্যবসা বিত্তিক দেব-দেবী ও মূর্তি পূজায় অগাধ বিশ্বাস, এর অর্থ ব্রাহ্মণ্য নীতি -বিধি বিধানে আমার বেশী বিশ্বাস । অথচ এই বিধানের বি রুদ্ধাচারণ করে শ্রীহরি বললেন-
                        "তিন বেলা সন্ধ্যা কর আর সন্ধাহ্নিক ।
                        স্নান পূজা সন্ধাহ্নিক মোর নাহি ঠিক ।।
                        কুকুরের উচ্ছিষ্ট প্রসাদ পেলে খাই ।
                        বেদ বিধি শৌচাচার নাহি মানি তাই ।।"
প্রশ্ন থেকে যায়-
            আমি কি মতুয়া হতে পেরেছি ? আমি কি মতুয়া বিধি বিধান মেনে চলছি ? আমি কি একমাত্র শ্রীহরিতে বিশ্বাস রাখতে পেরেছি ? আমি কি পরিবারে হরি-গুরুচাদের ধর্ম-দর্শন প্রতিষ্টা করতে পেরেছি ? আমি কি হীনমন্য হিন্দু ধর্মের প্রতিবাদী 'মতুয়া'ধর্মাবলম্বী হতে পেরেছি ? আমি কি ভেদাভেদহীন "স্বয়ং সম্পুর্ণ মতুয়া ধর্মকে"জনমানসে প্রতিষ্ঠা কল্পে প্রচারে ও প্রসারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে পেরেছি ?
       
      যদি না পেরে থাকি তবে আর সময় নষ্ট না করে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে যথার্থ মতুয়া হওয়ার লক্ষ্যে । এটা করতে পারলেই মুক্তি ও প্রাপ্তি । মহাশক্তি ও স্বস্তির পথ সুগম হবেই হবে ।

(২)   (মতুয়া ধর্মে নারীর মর্যাদা ও অধিকার)
       নারী মাত্রই মাতৃসমা । শ্রদ্ধা-ভক্তি ভালবাসা বা স্নেহের পাত্রী । মতুয়া ধর্মে ব্রাহ্মণ্য নীতি  বিধি অনুযায়ী নারী জাতিকে মর্যাদাশীল পরনির্ভরশীল 'নরকের দ্বার'করে রাখা হয় নাই । নারী ও পুরুষের সমান অধিকার, একথা মতুয়াধিপতি হরি গুরুচাঁদ ধর্মীয় ও মানবীয় ব্যাখ্যায় প্রথম জাতিকে প্রকাশ্যে দিবালোকের অক্সিজেন যোগান দিয়ে হরি-গুরুচাঁদ গড়লেন এক নয়া ইতিহাস । মায়েদের হাতে ধুপ-দ্বীপ-শঙ্খ দিয়ে, দিলেন পূজার অধিকার, ধর্মের অধিকার । নারী শিক্ষা বিদ্যালয় গড়ে, দিলেন শিক্ষার অধিকার । ঘটল মাতৃত্বের পূর্ণ বিকাশ । হরি-গুরুচাঁদ কল্পবৃক্ষে সোনার মানুষ, সাধু -সাধক, শিক্ষিত যুবক-যুবতীর ফসল ফলল । নারী জাতিকে মতুয়া কি নজরে দেখবেন তাও বলে দিলেন প্রাণারাম-
                   "পর নারী মাতৃজ্ঞানে দূরেতে থাকিবে ।
                   পরিহাস বাচালতা কভু না করিবে ।।
                   মেয়ে পুরুষেতে বসি একপাতে খায় ।
                  মেয়েদের এঁটো খায় পদধুলা লয় ।।
                   ----------------------------
                  পুরুষ ঢলিয়া পড়ে মেয়েদের পায় ।
                  এক নারী ব্রহ্মচারী সৎচরিত্র রবে ।
                  ------------------------------
                  নিজ নারী ভিন্ন অন্য নারীতে গমন ।
                  মহাপাপী ব্যভিচারী সেই একজন ।।
প্রশ্ন থেকে যায়,-
      আমরা নারী জাতিকে মাতৃজ্ঞানে সম্মান করি তো ? আমি নিজ নারী সহ ব্রহ্মচারীর ন্যায়
সৎ চরিত্র বহন করছি তো ? আমি হরিনামামৃত পান করে দেহের ইন্দ্রিয় নিজের করায়াত্বে এনেছি তো ? আমি নারী মাত্রই 'মা'সম্বোধন করি তো ? মায়েদের সুখ-দুঃখের সমান  ভাগীদার হই তো?
      যদি না করে থাকি তবে আমার মতুয়া জীবন বৃথা মনে রাখবেন, হরি-গুরুচাঁদ প্রবর্তিত  ধর্ম-দর্শন অতি উচ্চমার্গের । একে জীবনদায়ী ঔষধ মেনে গ্রহন করতে পারলে আমি নিশ্চিত করে বলছি, আপনার উন্নয়নের জন্য আপনাকে ভাবতে হবে না ।
                   "সর্বধর্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থূল ।
                   শুদ্ধ মানুষেতে আর্তি এই হয় মূল ।।"

                      (প্রেমবন্ধনের দৃঢ়তা কেন এত ঠুনকো ?)
     শ্রীহরি বাসরে সরল অনাড়ম্বর জীবন সঞ্জাত 'হরিবোল'নামে ভাবোন্মোত্ত মতুয়াদের মমত্ত্বের ও সমত্বের প্রেমপ্রক্ষালনি অশ্রুসজল বাহু বেষ্টিত ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে দৃশ্যায়ন, আকর্ষণীয় প্রেমভক্তি ভালবাসা ও শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে বলছি, এই ভাব ও সম্পর্ক স্ব-স্ব এলাকায় দেখা যায় না । সেখানে সগোত্রীয় হয়েও মেলামেশায় বহুলাংশে ফারাক । হিংসা-দ্বেষ,  দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হাম বড়াই ভাবের অবাধ বিচরণ । চোখা চোখা বিশেষণ (গালাগালি) প্রয়োগে পারদর্শিতা যথেষ্ট । বাহু যুদ্ধেও পিছিয়ে নাই । মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকে , প্রতিশোধ স্পৃহা ঘুম কেড়ে নেয় । পড়শিদের ভীতি প্রদর্শনে ভীত নয় । অথচ এরাই হরিবাসরে হরিনামের অমৃত ভাব ও প্রেমের বন্যা বইয়ে দেয় । পদধুলি সংগ্রহে কাড়াকাড়ি হয় । কোলাকুলি অশ্রুবন্যায় হরিবাসর প্রেমের সাগর হয়ে ওঠে । ভাবি এই বন্ধন চিরস্থায়ী নয় কেন ? এই প্রেম সর্বত্র সর্বদা সমানভাবে সংঘবদ্ধ হয় না কেন ? যেখানে দয়াধীশ ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছেন-
                  "সর্বজাতি সমন্বয় হবে তাঁর মতে ।
                  ভাই ভাই হয়ে সব চলিবে সে পথে ।।"

                                 (গুরুগিরি)
                 অনেকে গুরুগিরি করেন ।গুরুগিরি ব্যবসা করেন, সংসার চালান, দীক্ষা দেন, শিষ্য তৈরীতে পারদর্শিতা দেখান । যে সাধন- ভজন অধ্যাবসায় দক্ষতা থাকা দরকার-ইদানিং গুরুদের মধ্যে তেমন উপযুক্ত একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না । গোপাল সাধু, তারক  গোঁসাই, লোচন, অশ্বিনী, নাটু, ব্রজনাথ ডাঃ তারিনী বলের মতো সাধক পুরুষ আছে কি ? এঁনারা জীবন দিয়ে জাতির উন্নতির জন্য গুরুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে গেছেন । বর্তমান গুরুকূল পরিবার পোষা গুরুগিরি ছেড়ে "হাতে কাম মুখে নাম"করলে উভয়ের মঙ্গল । নচেৎ মহান মতুয়া ধর্ম অদূর ভবিষ্যতে বহুধা বিভক্ত হবে সন্দেহ নেই । নিছক ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র জাতির কল্যাণ চিন্তা করাই শ্রেষ্ঠ পথ ।

                   "জাতির উন্নতি লাগি, হও সবে স্বার্থত্যাগি,
                   জাতি ধর্ম জাতি মান, জাতি মোর ভগবান,
                          জাতি ছাড়া অন্য চিন্তা নাই ।"
বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে গুরুচাঁদ ঠাকুরের এই আত্মসচেতনী উদার আহ্বান বাণী । তিনি ছত্রিশটি  বিচ্ছিন্ন জাতিকে একত্রিত করে যে পথ ও পাথেয় দিয়ে মতুয়া ধর্মকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছেন, নিছক ব্যক্তি স্বার্থে এই মহান ধর্মের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না । ঠাকুরের আসনে ঠাকুরকেই বসান । গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হৃদয় মন্দির হরি গুরুকে প্রতিষ্ঠা করুন।  তাঁর নাম মনন করুন তাতে নিজের দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে তো হবেই । গুরুর আসনে ভুল করে গরুকে বসাবেন না । গুরু-গুরুই হয় আর গরু-গরুই হয় । গরু কখনো গুরু হতে পারে না ।
                "মতুয়ার এক গুরু ভিন্ন গুরু নাই ।
                ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ করো না গোসাঁই ।।"
পাগল দলপতিদের যত্র-তত্র ছুতো-নাতায় আস্ফালন করা বা ক্রোধ প্রদর্শন শোভনীয় নয় । 'বিজ্ঞতা'প্রদর্শন অপেক্ষা 'বিজ্ঞ'হয়ে ওঠা শ্রেষ্ঠ পথ । আমার কি করা উচিৎ,ঠান্ডা মাথায়  চিন্তা করে শুভ বিবেকী সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে হবে ।


(৩)(মতুয়া পদ্ধতিতে (শ্রাদ্ধ নয়) শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান, বিবাহ ও ঠাকুর পূজার প্রচলন করা ।)
   বৈশ্যসাহা কন্যার সঙ্গে মুসলমান যুবক তিনকড়ি মিঞাঁর বিয়ে দিয়ে সেদিন গুরুচাঁদ ঠাকুর যে সেতু বন্ধন করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণ্যবাদকে পদদলিত করে বিজয় নিশান উড়িয়ে আমাদের বোঝালেন,"তোমরাও মতুয়া ধর্ম-দর্শন মেনে নিজেদের ক্রিয়াকাজ নিজেরাই সম্পন্ন কর"অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষায় রচিত দুর্বোধ্য পদ্ধতি বিসর্জন দিয়ে শুদ্ধ সহজ বাংলা ভাষায় রচিত (শ্রাদ্ধ নয়) শ্রদ্ধা অনুষ্ঠান, বিবাহ ও ঠাকুর পূজা ইত্যাদি ক্রিয়াকাজ প্রতি ঘরে ঘরে তোমরা চালু কর ।

অথচ এই কাজটিও আমরা সঠিক ভাবে সর্বত্র চালু করতে পারিনি বরং এখনও অধিকাংশ মতুয়া পরিবার ব্রাহ্মণ্য নীতিতেই বিশ্বাসী । আমরা অনেক গল্পভরা কথা বলি কিন্তু স্বীকার করতে হবে, গুরুচাঁদ ঠাকুরের যাবতীয় নির্দেশের মধ্যে একটি নির্দেশও আজ পর্যন্ত আমরা সঠিক ভাবে পালন করতে পারিনি ।

(ঠাকুর নির্দেশিত মত-পথ ও আদর্শকে কিভাবে পালন করতে হবে । )
     প্রসঙ্গক্রমে গুরুচাঁদ ঠাকুরের একটি নির্দেশ বাণী
যেমন-
                  "সবাকারে বলি আমি যদি মানো মোরে ।
                   অবিদ্বান পুত্র যেন নাহি থাকে ঘরে ।।"
প্রশ্ন থেকে যায়-
     আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরকে মান্য করতে পেরেছি ? আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরকে অন্তর দৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছি ? আমরা কি গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশ মত চলছি ? আমরা কি তাঁর দেওয়া রাজনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি সংস্কার নীতি অর্থনীতি রূপায়ণ করার জন্য নিজেদেরকে সংগঠিত করতে পেরেছি ?
     যদি গুরুচাঁদের গুরুভার বহন না করে থাকি তবে আমি মতুয়া হলাম কি করে  ? একটাই সমাধান, আসুন আমরা প্রথমে মতুয়া হই, তার পর মেতে উঠি হরি-গুরুচাঁদের প্রদর্শিত এবং নির্দেশিত কর্মকান্ড পরিপূরণে ও রূপায়ণে ।
     পরিচ্ছন্নতা মতুয়া ধর্মের একটি বিশেষ অঙ্গ । বাহ্য ও অন্তরঙ্গ শারীরিক পরিচ্ছন্নতা সহ পরিপাটি বসন ভূষণ ব্যবহার পবিত্রতার পরিচায়ক । দেহশ্রীকারক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বেশভূষা পরিধান করা মতুয়াধিরাজ গুরুচাঁদ ঠাকুরের নির্দেশ । এই নির্দেশ পালনের মধ্যে মনে প্রাণে শুদ্ধ নিঃষ্কলুষ শ্রী মন্ডিত ভক্তের ভক্তিযুক্ত আত্মনিবেদন আত্মপ্রসাদ লাভ করে সন্দেহ নাই । বহুক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতার অভাব আছে । গৃহাদি দেবতার মন্দির ভেবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিৎ
              "ধন চাই বসন ভূষণ চাই, হতে চাই জজ ম্যাজিস্ট্রেট ।
                 ----------------------------------------
                সবখানে থাকা চাই, তা ভিন্ন উপায় নাই ।
                রাজ বেশে সাজ রাজ সাজে ।।
                ------------------
               গৃহে কিংবা শ্রীহরি কীর্তনে ।
                পরিচ্ছন্ন বেশ -ভূষা পর যতনে ।।
               আপন গৃহকে কর শ্রীলক্ষ্মী আগার ।
               ধর্ম-কর্ম মিলেমিশে ভব পারাবার ।।"
            হরিকীর্তন আসরে আমরা নির্দিধায় পান-তামাক-বিড়ি সেবন করি । সম্মুখে শ্রীহরির প্রতিকৃতি বা ছবি থাকে । বিড়ির ধুম্ররাশি ঘুরপাক খেতে খেতে শ্রীহরির অঙ্গে মিশে যায় । আমার হুঁশ নাই এটা কি ঠিক ? শ্রীহরি-গুরুচাঁদ যদি আমার জীবন দেবতা হন তবে তাঁদের সামনে ধুম পান করা লজ্জাস্কর এবং নিন্দনীয় নয় কি ? ঠাকুরকে যদি ছবি বানিয়ে ফেলি বা ছবি ভাবি তবে আমার কিছু বলার নেই ।তবে তিনি অজর অমর অক্ষয় যুগপ্রহরী, আমার চতুর্দিকে বিরাজ করছেন-এমনটি ভাবলে তিনি আমার কাছে জীবন্ত প্রতিমূর্তি হয়ে আমাকে সর্বদা রক্ষা করবেন সন্দেহ নাই । তদুপরি ধুমপানে আসরের পবিত্রতা নষ্ট হয় এবং অ-ধুমপায়ীদের অসহ্য কষ্ট হয় । তাঁরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকেন । অতএব নেশা পরিত্যাগ করাই বিধেয় ।
      প্রায় সর্বত্র হরিকীর্তন আসরে, পাগল-গোসাঁই ও দলপিতিদের গান সর্বস্ব হয়ে ওঠে । প্রথমত গাঙ্গুলি অযথা দীর্ঘায়িত করে  বহু সময় নষ্ট হয়,তদুপরি গায়কদের অপটু অতি দীর্ঘ্যস্বর যুক্ত কাটা কাটা সুর ও লয়ে শব্দার্থ বা মূল শব্দ আদৌ বোধগম্য হয় না । ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় । বর্তমান বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে সময়ের এবং বোধচয়নার মূল্যায়ন একান্ত প্রয়োজন । ত ও পথ প্রত্যেকের সঠিক ভাবে জানা প্রয়োজন । এতে মতুয়া ধর্মের প্রচার ও প্রসার বাড়বে এবং গানগুলি ছোট করে সহজ বোধগম্যযুক্ত সুর ও তালে গীত হউক এবং আসরে গানের সংখ্যা   হ্রাস করে বক্তাদের সুযোগ দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন । কারন হরি-গুরুচাঁদ প্রদর্শিত ম জনমানসে সঠিক তথ্য ও তত্ত্ব জ্ঞান করা যাবে ।শুধু তাই নয়, হরিচাঁদের প্রেম, জ্ঞান, আর সাম্য স্বাধীনতার 'তত্ত্বদর্শন'সবাই সঠিক ভাবে জানতে ও বুঝতে পারলে তাদের জীবন প্রবাহ হরিপ্রেম মাধুর্যে গঠন করতে পারবেন । এতে, দেশ-জাতি ও সমাজের প্রভুত কল্যাণ হবে, জোর দিয়ে বলছি । (চলবে)




 




মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ ২ -কালিদাস বারুরী

$
0
0
মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ ২ -কালিদাস বারুরী
প্রথম অধ্যায়ে যথার্থ মতুয়া জীবন গঠনতন্ত্রের উপর হরি-গুরুচাঁদীয় দর্শনের ভাবাদর্শ আপনাদের কাছে উপস্থান করা হয়েছে । এবার দ্বিতীয় পর্ব। (মতুয়া দর্পণ ৫৮সংখ্যা  থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হ'ল) 
     রাজর্ষি গুরুচাঁদ ঠাকুরের ক্ষুরধার শিক্ষাবপ্লবের ফলে লক্ষ লক্ষ উচ্চ শিক্ষিত ফসল দিয়ে গোলা ভরেছে শত লক্ষ পরিবার। সেসব অর্থমূল্যে মূল্যায়িত শক্ষিত সমাজ এখন 'এলিট'শ্রেনীতে পৌছে গিয়ে ভুলে গেছেন হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরকে তাঁদের কাছে চালচুলাবিহীন সাদামাটা হরিভক্তরা তুচ্ছ-চাচ্ছিল্লে হরিব্বোলার দল নামে অভিহিত । কিন্তু বৈদিক অনুশাসনে সমৃদ্ধ বহিরাঙ্গ রঞ্জিত বাক্‌পটু সুকৌশলী বর্ণচোরা শোষক গুরুদের পদলেহন করে ওনারা ধন্য হন। নিজেদের পিতৃপরিচয় লুকিয়ে জাতে ওঠার সিড়ি খুঁজে বেড়ান। অথচ তপসিলী কোটায় সরকারি সুযোগ সুবিধার নিযার্সটুকু নির্লজ্জের মত চুষে খাচ্ছেন  বংশ পরম্পরায়। পিছনে পড়ে থাকা ভাইবোনদের দিকে একবারও তাকান না । সামাজিক দায়িত্ব বোধ তাদের মধ্যে কদাচিৎ দেখা যায় মাত্র।
     অথচ সরকারি চাকুরির কোটা তাদের জন্য প্রথম আদায় করেছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্য, স্ব-জাতির জন্য। দূরদর্শী গুরুচাঁদ ঠাকুর বহুপূর্বে তাঁদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন,-
                      "আজি যারা তপসিলী জাতি সাজিয়েছে।
                       শিক্ষা ছাড়া উন্নতি কি সম্ভব হয়েছে।।"
     ঘৃণক আর দলকের নিষ্পেষণি ধর্মীয় ফতোয়ার বিরুদ্ধে, আর্ত-ক্ষুধার্ত বহুজনের পরিত্রাণের জন্য হরি-গুরুচাঁদের ছিল আপোষহীন মুক্তি সংগ্রাম। এই ইতিহাস যারা স্বীকার করেন না, তাদের কি মতুয়া বলা যায় ? তাঁরা কি বিবেকীবিধানে 'মানুষ'পদবাচ্যে পড়ে ? তারা কি সত্যদর্শী শিক্ষিত? 
    শুধু মতুয়া ঘরাণায় কথা ভাবলে ভুল হবে । তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় পতিত বহুজন সমাজের ছেলেমেয়েদের যেমন শিক্ষা গ্রহণের অধিকার ছিল না তেমনি তাঁদের জন্য শিক্ষার কোনো ব্যবস্থাও ছিল না । এমন কঠিক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করে রাজর্ষি গুরুচাঁদ ঠাকুর শিক্ষার বন্ধ দুয়ার খুলে দিলেন । রাতারাতি তাঁর শিক্ষারূপ কল্পবৃক্ষ থেকে উঠে এলো শত সহস্র মাণিক রতন ।
     এখন তাদের বংশধরেরা হরি-গুরুচাঁদকে চেনে না -চিনতে চায়ও না । এভাবেই সমাজে জন্ম হয় অকৃতজ্ঞ, বেইমান, বিভীষণদের । তাঁরা নিজেদের প্রতিপত্তি নিয়েই ব্যস্ত । গুরুচাঁদের মত সমাজ গড়ার কারিগর হয়ে বন্ধুত্বের বা স্ব-জাতি উন্নয়নী চেতনাদ্দীপ্ত ভ্রাতৃত্ববোধদিপনায় হাত পম্প্রসারিত করে না । অথচ গুরুচাঁদ ঠাকুর প্রেম প্রক্ষালনী দরদী ভাষায় বারবার বললেন-
             "জাতির উন্নতি লাগি, হও সবে স্বার্থত্যাগী
              দিবারাত্র চিন্তা কর তাই
              জাতি ধর্ম,জাতিমান, জাতি মোর ভগবান
              জাতি ছাড়া অন্য চিন্তা নাই ।।"
     আহা রে ! এমন দরদ দিয়ে আমার চিন্তা অতীত এবং বর্তমান কুচক্রী সমাজ ব্যবস্থায়  আর কে করেছে ? শিক্ষিত সমাজ জীবন কেমন হওয়া উচিৎ , একটু ভেবে দেখবেন কি ?  
    গুরুচাঁদীয় শিক্ষা বিপ্লবের তীব্রতায় দ্রুতগতিতে বেরিয়ে আসা শিক্ষিত যুবকদের সরকারী চাকুরীর ব্যবস্থাও রাজর্ষি নিজ ক্ষমতায় করে দিলেন । তিনি বললেন-
              "বিদ্যাহীন নর যেমন পশুর সমান ।
               বিদ্যার আলোকে প্রাণে জ্বলে ধর্মজ্ঞান ।।
               -----------------------------------
              আইন সভায় যাও আমি বলি রাজা হও ।
               ঘুচাও এ জাতির মনের ব্যথা ।।"
    কিন্তু গুরুচাঁদ ঠাকুর পশুবৎ জীবন থেকে যাঁদের শিক্ষা, ধন, মান, যশ প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছিলেন পরবর্তীকালে তাঁদের বংশধরেরা কেউ জাতির মনের ব্যথা ঘুচাতে এগিয়ে আসেনি । গুরুচাঁদের মনের ব্যথা গুরুতর হল নাকি ? প্রশ্ন থেকে যায়,  বিদ্যার আলোকে তাঁদের অন্তরে মতুয়া ধর্মজ্ঞান জ্বলে উঠেছিল কি ? সমাজিক দায়বদ্ধতা, ঋণ জ্ঞানে ভাবা উচিৎ ছিল নাকি ?
     আমরা সংঘব্দধ হতে পারি নাই । নিজেদের মধ্যে হিংসা, দ্বেষ, ঈর্ষা, স্বার্থপরতা ছড়িয়ে দিয়েছি । আমরা ব্রাহ্মণবাদীর বর্ণাশ্রয়ী  শিক্ষা নিতে ভালবাসি । তাই নিজেদের মধ্যে বিবাদ করি, হিংসাকরি, শিক্ষিত অশিক্ষিত বিভাজন করি । হরি-গুরুচাঁদীয় শিক্ষায় আছে প্রেম-জ্ঞান-সাম্য-স্বাধীনতার তত্ত্ব-দর্শন, চেতনা প্রদীপ্ত চৈতন্য শক্তির উষ্ণ-প্রস্রবণ । ভ্রাতৃপ্রেম, সঙ্গ এবং সংঘবদ্ধ এককিভুত মানব কল্যাণকামী সৃজনশীল প্রবহমান মহানশক্তির উৎস এই মতুয়াধর্ম । আমরা এই মহান ধর্মের মর্মকথা না বুঝে মুখপোড়া বাঁদরের মত এই ধর্মকে কালিমা লিপ্ত করে বলেছি"লোকায়ত ধর্ম"পক্ষান্তরে কল্পিত হিংসাশ্রয়ী দেব-দেবী আরাধনায় মেতে উঠে  হারিয়ে ফেলেছি মাণীক রতন, ভুলে গেছি ভ্রাতৃপ্রেম, শিথিল করেছি স্ব-জাতি উন্নয়ন ।
     গুরুত্ব দিয়ে গুরুর কথা না মেনে গরুবৎ বিশৃঙ্খল জীবন-যাপন করতে করতে আমার আর রাজা হওয়া হল না বরং বরণ করেছি প্রভু ভক্ত দাসত্বের জীবন ।
                 "ইতর পশুরা আছে বেঁছে যেই ভাবে
                  তোরাও তাদের মত কাজে কি স্বভাবে
                  এমন জীবনে বল বেঁচে কিবা ফল ।
                  আকারে মানুষ বটে পশু একদল ।।"
    বহুস্থানে দলপতিদের মধ্যে ভেদাভেদ অর্থাৎ সহাবস্থানের আন্তরিক ফারাক লক্ষ্য করেছি । যেমন, মল্লিক বাবুর বাড়ির হরিসভায় 'রামের দল'গেলে শ্যামের দল যাবে না । কারণ, ওদের মধ্যে মতবিরোধ বা মনোমালিন্য । অথচ উভয় দল মতুয়া, 'হরিবোল'নামগানে আসর মাতায়, অশ্রু পাত করে, শতবার পদ ধূলি মাথায় নেয় । প্রশ্ন এখানে, আমরা কি মতুয়া না ভন্ড ? আমরা ভ্রাতৃপ্রেমে বিশ্বাসী না ভ্রাতৃবিচ্ছেদে বিশ্বাসী ?মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিৎ ভেবে দেখার সময় এসেছে ।ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তাদের সুখসুবিধার জন্য কৌশলী বর্ণ প্রকরণ করে মানুষকে  শত শত জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত করে গোষ্ঠীদাঙ্গা বাঁধিয়ে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে । আর আমরা নিজেরা নিজেদের বিচ্ছন্ন করে কি উপকার করছি ? এই বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে দলিত বহুজন পরিত্রাতা হরি-গুরুচাঁদ বললেন,-
             "যে জাতির দল নেই, সে জাতির বল নেই ।
              যে জাতির রাজা নেই, সে জাতি তাজা নেই ।।
              ------------------------------------
              ভিন্ন ভিন্ন দল কেহ কর না গোসাঁই ।
              ---------------------------------------
             দুই ভাই এক ঠাই রহ মিলেমিশে ।
              ভাই মেরে বল কেন মর হিংসা বিষে ।।"
   স্বজনের অশ্রুসিক্ত সুর মুর্ছনায় আমাকে টেনে নিয়ে গেছে বাংলার অজানা প্রান্ত সীমায় । সর্বত্র লক্ষ্য করেছি ভেদাভেদহীন অকাতরে প্রণাম নিবেদনের দৃশ্য । যে দৃশ্য স্মরণ করায়, নবদিগন্তের নিষ্পাপ আত্মজাগরণী মন্ত্র "আত্ম দীপ ভব", হে সচ্চিদানন্দময় আনন্দ এসো মোর মন মন্দিরে ।
              "প্রেমের নিগড়ে বাঁন্ধি, সবে করে কাঁদাকাঁদি
                ভ্রাতৃভাব আনিল সংসারে ।"
    কিন্তু পরক্ষণেই দেখি শিক্ষিত অশিক্ষিতের ভেদাভেদ । তাদের কথা,"নেহা ফড়া জানা বাবুরা আমাগো ফচন্দ করে না । ওয়াগো সাথে মেলামেশা নাই । ওনারা মতুয়া ধম্মে দীক্কা মানে না, গুরুকরণ মানে না, নক্কীপূজা কালীপূজা, দুগ্‌গা পূজা - কোনো পূজাই মানে না । ঠাহুর তো খ্যারোদের সাঁদ । উনি গুরু অয় ক্যাম্বালে । ওনারা বামুন ঠাহুরেও মানে না । য-ত্‌-ত্য সব নোম্বার শিক্ষিতের দল ।"--ইত্যাদি ।
    এনারা যুক্তিতর্কের ধার ধারে না । বোঝালেও বুঝতে চান না, কারণ এই শিক্ষা তাঁরা তাঁদের দীক্ষাগুরুর কাছ থেকে পেয়েছে । তাঁরা দীক্ষাগুরুর ছবি ঠাকুরের আসনে রেখে ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে ডঙ্কা কাশী বাজিয়ে পূজা করেন হরি-গুরুচাঁদ ঝুলে থাকে দেওয়ালে । এনাদের বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, ঠাকুর ক্ষীরোদের সাঁই । তিনি থাকেন অমৃতলোকে । ধরাধামের লীলা শেষ করে আবার অমৃত লোকে চলে গেছেন । যিনি ক্ষীরোদসাঁই , স্বর্গধামে যাঁর বিশ্রামাগার । তিনি দীক্ষা দেবেন কমন করে । অতএব গুরুর মধ্য দিয়ে তাঁর পূজা পূর্ণতা পায় ।
গুরুচাঁদ ঠাকুর বজ্রকন্ঠে বললেন,-
"বিদ্যার অভাবে অন্ধ হয়ে সবে ।
অন্ধকারে আছো পড়ে ।।
জ্বেলে দাও আলো মোহ দূরে ফেলো ।
আঁধার ছুটিবে দূরে ।।
    মতুয়া ধর্মে যেনারা গুরুগিরি করছেন তাদের সর্বনাশা ব্যাক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে সাবধান হওয়া উচিৎ । ভুল পথে ভক্তদের পরিচালিত করে মহান মতুয়া ধর্মের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না । ব্রাহ্মণ্য ভেদনীতি পূর্ণ বৈদিক আচরণ ও গুরুবাদ বর্জন করে ভক্তদের হরি গুরুচাঁদীয় বেদ-বিধি তন্ত্র-মন্ত্র মুক্ত শিক্ষার আলোতে নিয়ে আসুন । তাতে আপনারাও বাঁচবেন, দেশ-জাতি পঙ্কিল বাতাবরণ থেকে স্ব-মহিমায় জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে । সাবধান । বেশী চালাচালি করতে গিয়ে চুলোচুলি না হয়ে যায় । বিদ্যার অভাবে ভক্তদের অন্ধ করে রেখেছেন কেন ? তাদের জীবনে জ্ঞানের আলো জ্বালালেন ন কেন ? গুরুচাঁদের নামে ধ্বনি দিচ্ছেন অথচ তাঁর শিক্ষা নীতি মানছেন না কেন ? গুরু-গোসাঁই-পাগল-দলপতিদের একটাই প্রশ্নকরি,- গুরুচাঁদ ঠাকুর উঠে যাবার পর(১৯৩৭-২০১৪)-৭৭ বৎসরে লেখাপড়া না শিখে তাঁদের প্রবর্তিত মহান মতুয়া ধর্মের সহজ-সরল নীতি বিধির অর্থ বুঝে অথবা না বুঝে ভক্তদের ভুল পথে পরিচালিত করে এসেছেন বলেই ভক্তজন মানসে নিগুড় ভ্রাতৃত্ববোধের বিবেকী দানা বাঁধতে পারে নাই ।
          আপনাদের কাছে জানতে চাই
     ক) গুরুচাঁদ ঠাকুরের শিক্ষা বিপ্লবের প্রথম সারির সৈনিক হয়েও নিজেরা শিক্ষিত (অন্তত সীমিত শিক্ষায়) হলেন না ? আর পর্যন্ত কোনো শিক্ষা আন্দোলন করেছেন কি ?
     খ) আপনারা গুরুগিরি করছেন অথচ ঘরে ঘরে শিক্ষা বিপ্লব না করে ভক্তদের অশিক্ষার অন্ধকারে রেখে কোন চাঁদের হাট মিলিয়েছেন?
    গ) মতুয়াধর্মে বেদ-বিধি কল্পিত মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের উৎসাহে ঘরে ঘরে এসবের প্রচলন বিদ্যমান কেন ?
                 "হরিবোলা মোতোদের ভক্তি অকামনা ।
                  নাহি মানে তন্ত্র-মন্ত্র বজ্র উপাসনা ।।
                  বিশুদ্ধ চরিত্র প্রেমে হরি হরি বলে।
                   অন্য তন্ত্র-মন্ত্র এরা মাব পদে ঠেলে ।।
                   তন্ত্র-,মন্ত্র ভেক ঝোলা সব ধাঁ ধাঁ বাজী ।
                   পবিত্র চরিত্র থেকে হও কাজে কাজী ।।("হঃ লীঃ)
    ঘ) শিক্ষিত মতুয়ারা আপনাদের চক্ষুশূল কেন ? তাঁরা হরি-গুরুচাঁদের মূল আদর্শ অনুযায়ী  সমাজ পরিবর্তনের পথে বিপ্লব ঘটাতে চায়  বলেই কি আপনাদের ঘরে ঘরে অমাবস্যা নেমে আসার ভয়ে শিক্ষার বিরুদ্ধাচারণ করে ছলেছেন ?
    আপনাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আবেদন করছি,"অনুগ্রহ করে শিক্ষাকে মর্যাদা দিন, 'ভুল'কে 'ভুল'বলুন, সত্যকে জানুন এবং সত্য প্রচার করুন । গুরুচাঁদ ঠাকুরের মর্মস্পর্শী ইচ্ছা ও নির্দেশ,-
                 "অনুন্নত জাতি যদি বাঁচিবারে চাও
                  যাক প্রাণ সেও ভাল বিদ্যা শিখে লও ।"
ভক্তদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসুন ।
    বহু শিক্ষিত মতুয়া পরিবারে ও জাঁকজমকপূর্ণ বেদাচারী আচার অনুষ্ঠান ও দেব-দেবী পূজা পার্বণের প্রাচুর্যতা লক্ষ্যনীয় । আপনারা ঠাকুরের প্রিয়জন হয়ে ঠোক্কর খাবেন কেন ?আপনারা মতুয়া ঘরাণার যথার্থ ক্রিয়াকাজে উদাহরণ হয়ে উঠলে পিছনের সবাই আপনাদের অনুকরণ ও অনুসরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই । শিক্ষা আনে চেতনা । চেতনা আনে বিপ্লব । এই বিপ্লবে আপনারাই সৈনিক । ঘরে ঘরে বিপ্লবের প্লাবন বইয়ে মতুয়া ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার গুরুদায়িত্ব আপনাদের । দলিত বহুজন সমাজের হরি-গুরুচাঁদের মত পরিত্রাতা পেয়েও যদি দৈব দাসত্বের অর্গল কল্পিত ঐশ্বরিক শৃঙ্খল ভেঙে শিক্ষিত সমাজ যদি এগিয়ে না আসে তবে এই জাতি কোনোদিন জাগবে না । তাঁরা বিবেক হীন চামচেয় পরিণত হবে । আসুন আমরা স্মরণ করি দলিত মহাজনের অমৃত বাণী-
              "ব্রাহ্মণ্য ধর্মেতে পুষ্ট ভেদবুদ্ধি দ্বারা দুষ্ট ।
               স্বার্থলোভী ব্রাহ্মণের দল ।।
                ---------------------
               হিংসা দ্বেষ দন্দনীতি আনে ঘরে ঘরে ।
                আর্য মল হিন্দু হল বীর্য গেল মরে ।।
                ----------------------
               অন্ধজনে দিতে আলো অমানীরে মান ।
              ওড়াকান্দি অবতীর্ণ হলো ভগবান ।।"
    প্রশ্ন থেকে যায়, সহজ সরল দলিত বহুজন সমগোত্রীয়দের মধ্যে ভেদাভেদ দ্বন্দ্ব, বৈষম্য, হিংসা, দ্বেষ অতি সুক্ষ্মচাতুর্যে প্রবেশ করালো ব করাচ্ছে কারা ? তাকি একবার ভেবে দেখেছি ? আমার মনে হয়, আমরা যতটা মনোযোগ দিয়ে ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্র দর্শন অধ্যয়ন করি তার সিকি ভাগ মনোনিবেশ করি না শ্রীশ্রী হরিচাঁদ জ্ঞান-দর্শন তত্ত্বের উপর । যে দর্শন মতুয়াদের জীবনে এনেছে অপরা-বিদ্যা শিক্ষার তিরন্দাজী জোয়ার । আমরা ভুলে গেছি আমাদের পূর্বের অবস্থানের কথা ।
                "অনুন্নত জাতি যত এ বঙ্গ মাঝারে ।
                শিক্ষাশূন্য ছিল সবে ঘোর অন্ধকারে ।।"
    সেই অন্ধকার অজ্ঞানতা থেকে আজকের শিক্ষা সভ্যতা, গাড়ি, বাড়ি, এক কথায় বিশ্ব এসেছে হাতের মুঠোয়- যার আঙ্গুলী লেহনে, তাঁকে স্মরণ ,মনন,তর্পণ করবো না ? তিনিই তো আমার জীবন প্রদীপ, একমাত্র আরাধ্য দেবতা । সেই মধুমাখা হরিনাম বেজে উঠুক আমার মনোবীণায় । এসো হে মনের মানুষ থাকো মোর হৃদয় জুড়ে । এসো হে মতুয়াধীশ তাপিত তৃষিত প্রাণে তুমি প্রাণারাম ।
    বহুস্থানে লক্ষ্য করেছি, নানাস্থান থেকে আগত ভক্তেরা ডঙ্কা, কাশী, নিশান নিয়ে শ্রীহরি মহোৎসব আসরে মন্দির পরিক্রমা করে হরিনামের মাতাম দিয়ে ছড়িয়ে পড়েন আশে পাশের বাড়ি বা পাড়ায় । শুরু করেন আষাঢ়ে গল্প । নিন্দা মন্দের ধামা উবুড় করে জাহির করেন নিজের বুদ্ধিমত্তার কেরামতির অলীক ভক্তবিটেল চর্চা । অন্যান্য শ্রোতা বর্গ রসিয়ে কসিয়ে উপভোগ করেন । অপ্রচলিত বিশেষণ প্রয়োগ চলতে থাকে পরনিন্দা পরচর্চা এবং বক্তার বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানগরিমার পদাবলী । গপ্প দাদুর গালভরা গপ্পে  মশগুল ভক্তরা হাসি ঠাট্টায় বুঁদ হয়ে যায় । ওদিকে হরিবাসর ফাঁকা । হরি ভক্তের চলন এমন হওয়া উচিৎ কি ? তাঁদের উচিত ছিল, শ্রী বিগ্রহের মন্দির পরিক্রমা ও মাতাম দিয়ে উপবেশন করে ধ্যানস্থ হওয়া । এতে শরীর মন শান্ত হয়, কূ-চিন্তা দূরে সরে যায় ।
    মতুয়া ভক্তেরা পেটুক আখ্যা পেয়েছে । এনাদের অন্নপ্রসাদ গ্রহণ বা ভোজনের নির্দিষ্ট কোন সময় নেই । আমি নিজে দেখেছি এক বাড়ির হরিসভায় হরিভক্তরা ভোর ৪টার সময় গোগ্রাসে গরম গরম ডাল, ভাত তরকারি আহারে ব্যস্ত । রাত বারোটার পর সকাল ৬-৭টা পর্যন্ত এরূপ ভোজন করতে আমি বহু স্থানে দেখেছি । প্রত্যুষ কাল থেকে সকাল সাড়ে ছটার মধ্যেকার সময়টুকু "ব্রাহ্ম মুহুর্ত"বলে । সাধারণত ভজন সাধন-পূজা পাঠ -প্রার্থনা ইত্যাদি করার এটাই উপযুক্ত সময় । অথচ এই ঊষাকালে ভক্তদের মচমচে শুকনো লঙ্কা ভাজা দিয়ে মহানন্দে পান্তা ভাত খেতে দেখেছি । অর্থাৎ ভোজন পর্বের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাধা নিষেধ মানামানির বালাই নেই । এটা স্বাস্থের পক্ষে হানিকর । অন্ন প্রসাদ গ্রহণের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত হওয়া শরীর স্বাস্থ্য ও সাধন ভজনের পক্ষে অতি উত্তম প্রবন্ধ । একে মেনে চলা উচিত বলে মনে করি । আবার অধিক ভোজন রোগের কারণ । অতএব পরিমিত আহার করা মহাজনের নির্দেশ । এতে দেহরথ ভালো থাকে । দীর্ঘ পরমায়ু সহ গতি সম্পন্ন হয় । সাধন ভজনে মনস্থির হয় । আপনি স্থির করুন, মতুয়া জীবন কেমন হওয়া উচিত । (চলবে)







দুর্গা রূপেনঃ সংস্থিতাঃ শরদিন্দু উদ্দীপন

$
0
0
ভারতীয় ইতিহাসে অসুরভাষী রাজাদের শাসনে নারীকে সমান ভাবে মর্যাদা দোওয়া হয়েছে তার ইতিহাস নান সূত্র থেকে আমরা পাই। মূলতঃ মাতৃতান্ত্রিক সমাজের মাধুর্যতায় গড়ে উঠেছিল ভারতের কৌম সমাজের ভিত। আর অসুর রাজারা তাকে মান্যতা দিয়ে গড়ে তুলেছিল বিভিন্ন জনপদ।  সাওতাল সমাজের জোম–সিম-বিন্তির মধ্যে মানব সমাজের বিবর্তনে পিলচু হড়াম ও পিলচু বা বুড়িকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বরং নারীর ইচ্ছাকেই সৃষ্টির প্রেরণা হিসেবে দেখানো হয়েছে এই সব বিন্তিগুলিতে। হরপ্পার (আদি অস্ট্রিক শব্দ,  যা হড় ও হপ্পন দুটি শব্দের সমাহার) খননকার্যে যে প্রত্ন নিদর্শনগুলি উঠে এসেছে তাতে নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হয় যে সেকালে নারীকে পুরুষের সাথে সমান গুরুত্ব দেওয়া হত। হরপ্পায় মাতৃ মূর্তিগুলি শৈল্পিক ভাবনায় অনন্য। মহামতি গোতমা বুদ্ধের সময় ভিক্ষুনী সংঘ গড়ে ওঠে। মাতা গোতমীর নেতৃত্বে ৫০০ শতাধিক নারী প্রবজ্জা গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় ভিক্ষুনী সংঘ। ভিক্ষুদের  মতই ভিক্ষুনীরা  সমান মর্যাদায় ধম্ম প্রচারের সর্বোচ্চ সম্মান পান। নারী পুরুষের সমমর্যাদা ও সমানধিকার প্রতিষ্ঠার এটাই সর্বপ্রথম নিদর্শন। এই নারীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় লেখা “থেরীগাঁথা” যা বুদ্ধ সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।  বুদ্ধের অন্যতম অনুগামী “তারা” তার জীবিত কালেই বুদ্ধের সমান খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কালচক্রযানী, প্রজ্ঞা ও পারমিতার সুষম অভিধায় ভূষিতা ‘তারা’  তিব্বত, চীন, জাপান ও দক্ষিণপূর্ব দীপ রাষ্ট্রগুলিতে বুদ্ধের মতই আদরণীয়া। নারীর সৃজনে ও মননে আপন মহিমায় বিকশিত হওয়ার অনন্য প্রতীক এই ‘তারা’।        

 বৈদিক যুগে নারীর অধিকারঃ 
বৈদিক সমাজের প্রথম দিকেও নারীর বিভিন্ন সামাজিক অধিক স্বীকার করা হয়েছিল। ঘোষা, লোপামূদ্রা, মৈত্রেই ও গার্গীর মত মহীয়সী নারীরা বেদের শ্লোক রচনার কাজেও অবদান রাখতে পেরেছিলেন। সামাজিক নানা কাজে নারীদের স্বতন্ত্র ভুমিকা মেনে নিয়েছিল বৈদিক সমাজ। নিজের ইচ্ছায় তারা পুরুষ সঙ্গী নির্বাচন করতে পারত, এমনকি বিধবাদের পুনর্বিবাহের স্বীকৃতিও ছিল। "Women enjoyed far greater freedom in the Vedic period than in later India. She had more to say in the choice of her mate than the forms of marriage might suggest. She appeared freely at feasts and dances, and joined with men in religious sacrifice. She could study, and like Gargi, engage in philosophical disputation. If she was left a widow there was no restrictions upon her remarriage."  Will Durant - Story of Civilization: Our Oriental Heritage.
তবে পরবর্তী কালে নারীর সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হল কেন? বিশেষত মনুর কাল থেকে নারীকে কেন পশু ও শূদ্রের পর্যায়ে নামিয়ে দেওয়া হল? একজন বালিকা বা যুবতী বা বৃদ্ধা গৃহে স্বাধীন ভাবে কিছু করবেনা। স্ত্রীলোক বাল্যে পিতার বশ্য থাকবে, যৌবনে স্বামীর অধীনে, স্বামী প্রেতলোক প্রাপ্ত হলে পুত্রের অধীনে থাকবে। কোন পরিস্থিতিতে নারী স্বাধীন থাকবে না’।
(মনুস্মৃতি, ৫/১৪৭-১৫০)
অথবা mam hi partha vyapasrit ya
ye 'pi syuh papa-yonayah
striyo vaisyas tatha sudras
te 'pi yanti param gatim” ……Bhagvat Gita, Chapter Nine  text32
“নারী, বৈশ্য  এবং শূদ্রগণ পাপ যোনিতে জন্ম”।
ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যের পরতে পরতে নারীর প্রতি এই বিদ্বেষ জন্মেছিল কোন কারণে? এই বিদ্বেষ কি ব্রাহ্মন্যবাদের স্বাভাবিক নিয়ম? নাকি শিকারজীবি যাযাবরদের ভোগ্য বস্তু সংগ্রহের মত নারীও ছিল তাদের ভোগের বস্তু? ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে কিন্তু এটাই প্রমান হিসেবে উঠে আসছে যে অসুর রাজাদের সম্পদ লুন্ঠনের সাথে সাথে তাদের নারীদের লুণ্ঠনও ছিল বর্বর আর্যদের অন্যতম লালসা। নারীদের বন্দী করা। তাদের সেনা শিবিরে বা দুর্গে নিয়ে গিয়ে যার যেমন খুশি যৌন ক্ষুধা মেটানোর লালসা। মূলত আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সব থেকে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে নারী।
বেদের দশম মণ্ডলের পর বতুর্বর্ণ ব্যবস্থা সুদৃঢ় হলে ক্ষমতার বলেই বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রহ্মনেরা সব থেকে বেশী লাভবান হয়। এই সময় থেকেই শুরু হয় দেবায়নের প্রক্রিয়া। দেবশক্তি হিসেবে ব্রাহ্মনেরাই ক্ষমতার শীর্ষে  অধিষ্ঠিত হয়। আর্য বা বৈদিক সমাজের বল্গাহীন শারীরিক সুখ ভোগের আকাঙ্ক্ষা তাদের ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষের সাথে এমন ভাবে একাকার হয়ে যায় একে সার্বিক বৈধতা দিতে হয়। ধর্মের নামে, রীতিনীতির নামে, লোকাচারের নামে ব্যাভিচার হয়ে ওঠে সর্বত্রগামী। নারী পুরুষ নির্বিশেষে জৈবিক সুখ ভোগের প্লাবনে সমাজকে ভাসিয়ে দিতে চায় ব্রাহ্মণ্য দর্শন। এই দুর্দম্য লালসাকে সুরক্ষা  ও বৈধতা দেওয়ার জন্য  বৈদিক কাল থেকেই চলে নিরন্তর প্রয়াস। বেদ, ব্রাহ্মণ, পুরাণ, উপনিষদ এমনকি রামায়ণ ও মহাভারত কাব্যকে ব্যবহার করে চলে ব্যাপক প্রচার। ভোগবাদ ও যৌনাচারের এই প্রচার ও প্রসার এমন পর্যায়ে চলে যায় যে যৌন সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে মা, মেয়ে, ভাই, বোন প্রভৃতি বাঁধ বিচারের বাঁধন ধ্বংস হয়ে যায়। শতপথ ব্রাহ্মণ ও সরস্বতী পুরানেব্রাহ্মাকে তার নিজের কন্যা সরস্বতীর সাথে যৌনাচারে লিপ্ত হতে দেখা যায় এবং এই  যৌন মিলনে যে সন্তানের জন্ম হয় তার নাম স্বয়ম্ভূ মনু। মনু আবার তার মা সরস্বতীকে সম্ভোগ করে এবং তাদের একাধিক সন্তানের জন্ম হয়। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই বহুগামিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সত্যাকাম গুরু গৌতমের কাছে তার নিজের পিতার নাম বা গোত্র বলতে পারেনি। সত্য কামের মা জবালাও বলতে পারেনি কোন পুরুষ সত্যকামের আসল পিতা। দেবারত পুত্র শিশু যাজ্ঞবল্ককে কোলের থেকে নামিয়ে তার মা অন্য ঋষির সাথে সহবাস করতে বাধ্য হয়েছিল এমন কাহিনী আমরা যাজ্ঞবল্ক স্মৃতিতেই দেখতে পাই। অর্থাৎ দেবতার নামে, ঈশ্বরের নামে সামাজিক রীতিনীতির নামে নারীকেই নিষ্পেষণের সহজ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ব্রাহ্মন্যবাদ।

উত্তরকালে নারীদের উপর এই আধিপত্যবাদের চরম পরিণতি হিসেবে শুরু হয়  পতিতাবৃত্তি, বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসী ও সতী প্রথা। এবং এই সমস্ত কাদাচারই একটি বৃত্তকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বহুবিবাহএবংসম্বন্ধনির্ণয়গ্রন্থেকুল রক্ষার নামে একজন কুলিন ব্রাহ্মণ যে একাধিক বিবাহ করতেন তার তালিকা তুলে ধরেছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বিভিন্ন উপন্যাসে নারীদের উপর যে কী নিষ্ঠুর সামাজিক নিপীড়ন চলেছে তা রাজলক্ষ্মী, কমললতা, অন্নদা প্রভৃতি চরিত্রগুলির মধ্যে তুলে ধরেছেন। বামুনের মেয়ে উপন্যাসে দেখাগেছে যে, নারীর কুল রক্ষার্থে ৮০-৯০ বছরের একজন কুলীন বামুনকে মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ৯-১১ বছরের বালিকার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে। কুল রক্ষার তালিকা এত দীর্ঘ হয়েছে যে তা খাতায় লিখে রাখতে হয়েছে।  অকাল বৈধব্য হলে সেই বালিকাকে হয় সতী হিসেবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে নতুবা তার জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে বেঁচে থাকার সমস্ত উপায়। একবেলা খাওয়া, এক কাপড় পরিধান করা, মাথার চুল কেটে ফেলা এবং সমস্ত সামজিক ক্রিয়াকর্ম থেকে তাকে বঞ্চিত করা ছিল ব্রাহ্মন্যবাদী নিদান। অন্যদিকে এই নিদানগুলি পালন না করতে না পারলে তার জায়গা হয়েছে পতিতালয়। নতুবা ধর্মের  নামে নির্বাসিত হয়েছে কাশী, বৃন্দাবন বা মথুরা। জীবিকা হয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি অথবা বেশ্যা বৃত্তি। সেন আমল থেকে একেবারে লর্ড বেন্টিং এর শাসনকাল পর্যন্ত এই জুলুম চলেছে নির্বিবাদে।

নারীর ক্ষমতায়নে মঙ্গল কাব্যের অবদানঃ
বাংলায় নারীদের ক্ষমতায়নের পরিকল্পনা রচিত হয় কবিদের কল্পনায়। সম্ভবত মায়েদের উপর এই দীর্ঘ নির্যাতন গ্লানি তাদের কোমল হৃদয়কে  ব্যথিত করে তোলে। পুঞ্জিভূত যন্ত্রণা আবেগঘন করে তোলে কবি মন। বিভিন্ন কবি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অসির থেকে মসিকেই শক্তিশালী আয়ূধ হিসেবে বেছে নেয়। বাংলার পদাবলী সাহিত্য, অনুবাদ সাহিত্য ও  মঙ্গলকাব্যগুলি নারী শক্তি জাগরণের  অন্যতম অধ্যায়। পদাবলী সাহিত্যে নারী মনের আকুতি বর্ণিত হলেও তা পুরুষ মননে নারীর প্রতি প্রেম ভালবাসারই বহিঃপ্রকাশ। নারী এখানে ভোগের বস্তু থেকে প্রেমের নম্র সহচরী হিসেবে উঠে আসে।  

কৃত্তিবাসের পণ্ডিতের অমৃত লহরীঃ
অকালবোধনকৃত্তিবাসেরকীর্তিবাল্মীকিরামায়ণেরামকোনদুর্গাকেপূজাকরেননি।বাদুর্গাপূজাকরারজন্যরাবণকেপুরোহিতহতেহয়নিবরংরাবনেরবিরুদ্ধেযুদ্ধেজয়লাভকরারজন্যরামসূর্যেরপূজাকরেছিলেনএবংসেইপূজায়পুরোহিতছিলেনঅগস্তমুনি।Valmiki Ramayana - Yuddha Kanda in Prose Sarga 105কৃত্তিবাসপণ্ডিত তবে মিথ্যে ঝুঁকি নিলেন কেন? তিনি তো জানতেন কালে তার এই শঠতা মিথ্যে বলে প্রতিপাদিত হবে। সম্ভবত কৃত্তিবাসজেনেবুঝেই এই ঝুঁকি নিয়ে ছিলেন কেননা মিথ্যের শাস্তির থেকে তিনি ব্রাহ্মন্যবাদী সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার উপর বেশি চিন্তিত ছিলেন। এ বিষয়ে ভাষাবিদ্সুকুমার সেন তা'ভারতীয় আর্য সাহিত্যে ইতিহাস 'পুস্তকে বিশেষভাবেযা আলোচনা করেছেনতার খানিকটা তুলে দিলামঃ
বাংলায় প্রথম শারদীয় দূর্গাপূজা আরম্ভ হয় ১৫ শতকের শেষ ভাগে নদীয়া জেলার তাহেরপুরের জমিদার রাজা কংসনারায়ণ খান মহাশয়ের রাজবাটিতে ৷ নদীয়ার ফুলিয়ার কবি কৃত্তিবাস ওঝা সেই রাজা কংসনারায়ণ খানের সভাপন্ডিত ছিলেন ৷ নিজের প্রতি-পত্তি জাহির করবার জন্য রাজা কংসনারায়ণ প্রাচিন কালের দিগ্বিজয়ী সম্রাটদের মত "অশ্বমেধ "যজ্ঞ করিবার বাসনা করেন ৷ কিন্তু তাঁহার কুলপুরোহিত রমেশচন্দ্র শাস্ত্রমহাশয় বলেন যে এই যুগে 'অশ্বমেধ 'যজ্ঞ সম্ভব নয় ৷ তবে সভা পন্ডিত কৃত্তিবাস ওঝা  মহাশয়ের সহিত সলাপরামর্শ করিয়া পুরোহিত রমেশ শাস্ত্রী মহাশয় রাজাকে বুঝাইলেন যে কলিযুগে অকালবোধন 'শারদীয় দূর্গাপূজা 'করিলে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমতুল্য রাজ-খ্যাতি প্রচারিত হইবে ৷ রাজা  কংসনারায়ণ খান তাহাইকরিয়াছিলে”......... 
এই পূজায় রাজা  কংসনারায়ণ খানতৎকালীন ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়  করে বিপুল লোক লস্কর লাগিয়ে পূজা শুরু  করলেন। কয়েক বছর ধরে এই পূজার অর্থ যোগান দিতে গিয়ে তিনি সর্বস্বান্ত হলেন। তার রাজ্য এবং রাজবংশ নিশ্চিহ্ন হল কিন্তু ঠিকে গেল কৃত্তিবাসী রামায়ন এবং তারঅকালবোধন”। এখানে রচিত হল নতুন রাম কাহিনী। এই রাম্যানের রাম বসন্ত কালের পরিবর্তে  যুদ্ধে  জয় লাভ করার জন্য শরত কালে করলেন দুর্গা পূজা। আর সেই পূজায় নিজের মৃত্যু মহিমান্বিত করার জন্য রাবণ হলেন পুরোহিত! অর্থাৎ কৃত্তিবাসপুনরায় প্রতিষ্ঠা করলেন যে প্রজাপতি ব্রহ্মার বিস্তারের জন্য পুরুষকে বলি প্রদত্ত হতে হবে এবং ব্রাহ্মণের ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্য শূদ্র নিজের মৃত্যুকে ডিভাইন মৃত্যু হিসেবে মেনে নেবে। আর একটি কথা এখানে একান্ত বলা প্রয়োজন যে বাংলার ব্রহ্মনেরা তখন বেশ বুঝতে পেরেছিলেন যে নারী শক্তি আত্মস্ত করার মধ্য দিয়েই ব্রাহ্মণের ভবিষ্যৎ টিকে থাকবে এবং এই কথা বুঝতে পেরেই নারীকে “দুর্গা রুপেন সংস্থিতায়” রূপদান করার জন্য রাজশক্তি ব্যবহার করে ঝাঁপিয়ে পড়লেন নব নির্মাণে। এই নির্মাণ প্রক্রিয়াকে সংবদ্ধতা দিলেন মঙ্গল কাব্যে। নিজেদের প্রয়োজনেই ব্রাহ্মনেরা মঙ্গলকাব্যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার উপরে  নারীদের দেবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং এই নারী শক্তি ব্যবহার করেই প্রচলিত লোকাচার ও লোকসংস্কৃতিকে  ধ্বংস অথবা তাকে পরিবর্তিত করে দেবায়নের মোড়কে বাজারজাত করলেন। বিদ্যাপতি কালীকা পুরাণের থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে এমন এক শবরোৎসবের উদাহরণ দিয়েছিলেনঃ ‘কুমারী, বেশ্যা, নর্তকীদের নিয়ে শঙ্খ, তূর্য, মৃদঙ্গ, ঢোল বাজিয়ে বহুবিধ ধ্বজা বস্ত্র সহ খৈ, ফুল ছড়িয়ে, পরস্পরের প্রতি ধুলো কাঁদা ছিটিয়ে ক্রীড়া ও কৌতুক গান করতে করেতে যাত্রা করবে। ভগলিঙ্গ, যৌনউত্তেজক গান এবং তদৃশ্য বাক্যালাপ করে আনন্দ করবে, এই সময় যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ভালোবাসেনা বা নিজেও অপরের বিরুদ্ধে এরূপ শব্দ ব্যবহার করেনা ভগবতী ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে শাপ দেবেন এবং বিনাশ করবেন’।
বৃহদ্ধর্ম পুরাণেও এই শবরোৎসবের বর্ণনা আছেঃ
‘ভগ লিঙ্গাভিধানৈশ্চ শৃঙ্গার বচনৈ স্তথা –
গানং কার্যং ভোজয়চ্চ ব্রাহ্মনাৎ স্তোষয়েস্ত্রিয়া’।
(  বৃহদ্ধর্ম পুরাণ ২২ অধ্যায় ২০-৩০পৃ )       
পৌরাণিক আখ্যান কাব্যের উপর রচিত অন্নদামঙ্গল ও শাক্ত পদাবলীতে কবিরা সযত্নে  দেবদেবীদের স্বর্গের মহিমা পরিত্যাগ করে বাংলার নরনারীতে পরিণত কারেছেন যাতে দেবায়ন লোকায়ত হয় এবং দেবসমাজ আরো বেশী গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। অর্থাৎ কার্যত পূজার ছলে নারীকে আবার বাজারী পণ্যদ্রব্যে পরিণত করে খোলাহাটে পশরা সাজিয়ে বসলেন ব্রাহ্মণ সমাজ। এতে বৈষ্ণবীয় প্রেমের  মাধুর্য নিস্প্রভ হল বটে ভোগের বজার বন্ধ হলনা। বন্ধ হল না পতিতাবৃত্তি,বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ, গুরুকরণী এবং সতী প্রথা। বরং ব্রাহ্মণ্যবাদীদের  ভোগের বাজারে আর একটি নতুন গণসম্মোহনী পণ্য যুক্ত হল।

সতীদাহ বা সহমরণপ্রথা এবং বিধবা বিবাহঃ   
সম্ভবত মানব সমাজের বিবর্তনের ইতিহাসে নারীর উপর পুরুষতান্ত্রিক বর্বরতার সবথেকে নিষ্ঠুর প্রথা সতীদাহ বা সহমরণ। যেখানে পরলোকের লোভ দেখিয়ে নারীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হত। কিশোরী, গর্ভবতী বা শিশু সন্তানের জননী হলেও তাকে রেহাই দেওয়া হতনা। বরং এই মৃত্যুকে স্বর্গীয় মহিমাতে রূপদান করার সার্বিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত ছিল ব্রাহ্মণসমাজ। ব্রাহ্মণ সমাজপতিরা একে সর্বশ্রেষ্ঠ পুণ্যকাজ বলে পরচার করতেন। ১৮১৩ সালের “লর্ড মিন্টোর সংস্কার আইন” অনিচ্ছুক নারীকে পুড়িয়ে মারা যাবেনা বলে ঘোষণা করে। ১৮১৭ সালে সতীদাহকে নরহত্যার পর্যায়ভুক্ত করে শাস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। সতীদাহ নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন রামমোহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুর। ১৮২৮ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক আইন করে সতীদাহ বন্ধ করে দেন। সতীদাহ বন্ধ হলে ভূদেবতাদের সব রাগ গিয়ে পড়ে বিধবাদের উপর। তারা দুর্বিষহ সামাজিক ও ধর্মীয় শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলতে চাইল বিধবাদের। নিরম্বু উপবাস, একাদশী পালন, দিনে একবার খাওয়া, একবস্ত্র পরিধান, তেল না মাখা, নিরামিষ ভোজন এমন নানাবিধ অনুশাসনের নাগপাশে রুদ্ধ হল তাদের জীবন। অন্যদিকে গোপনে ভুদেবতাদের জৈবিক কামনার শিকার হতে লাগল বিধবা যুবতীরা। এই সব যুবতী মহিলাদের পুনর্বিবাহের কোন সুযোগ ছিলনা। ফেলে সমাজের অভ্যন্তরে দিনে দিনে  বাড়তে লাগল অনাচারের আবর্জনা। কিন্তু লাম্পট ও চরিত্রহীনদের কদাচারের ফল ভোগ করতে হল নারীকে। বহু নারী পতিতাবৃত্তিতা বেছে নিল। ধর্মান্তরিত হল অনেকে। আবার অনেকে কাশী, বৃন্দাবনে আশ্রয় নিয়ে ভিখারির জীবন অথবা পতিতার জীবন গ্রহণ করতে বাধ্য হল।
বিদ্যাসাগর বিধবাদের উপর প্রভূসমাজের এই নির্যাতন বন্ধ করার জন্য তার পাণ্ডিত্য, বাগ্মিতা ও বিতর্ককে অস্ত্র করলেন। বামুন সমাজের প্রবল বাঁধা পেরিয়ে ১৮৬৫ সালে বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ হল। এখানে বলে রাখা ভাল যে সতীদাহ বা বিধবা বিবাহের সমস্যা কৌম সমাজ বা অসুর  সমাজে একেবারেই ছিলনা। তাদের সামাজিক আন্তর্গঠনের মধ্যে নিহিত ছিল নারীর সমানাধিকারের সম্মান।                           

অসুর নয়, বামুনই কদাচারের আসল মুখঃ  
মানবেতিহাসে অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তির বিকাশ হল দুর্গা পূজার অন্যতম অভিধা। কিন্তু এই ধাঁধার উত্তর খোঁজা জরুরী যে বাংলার ইতিহাসে কারা এই অশুভ শক্তির প্রতীক! কাদের দুর্দম্য, দুর্বিনীত আচরণের জন্য বাংলা কলুষিত হয়েছে বার বার? কারাই বা নারীকে ক্লেদাক্ত পঙ্কে  নিক্ষিপ্ত  করেছে। কারা নিমজ্জিত হয়েছে লুন্ঠন, ধর্ষণ ও জিঘাংসায়? কারা পূজার অছিলায় দুর্গা শক্তির নামে সমগ্র নারীসমাজকে গণিকার পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে? কারা এখনো পর্যন্ত নারীকে নরকের দ্বার মনে করে? কারাই বা শুধুমাত্র পুত্র কামনার্থে নারীকে ভোরগের সামগ্রী মনে করে? কারাইবা নারীকে বহুগামিতা ও বহুবিবাহে প্রলুব্ধ করে? এই সমস্ত কাজ যদি সমাজ বিকাশে অকল্যাণকারী হয় এবং এদেরকেই যদি অশুভ শক্তির ধারক বাহক হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়; তবে নিশ্চিত ভবেই ভারতের ব্রাহ্মণ সমাজ এই অশুভ  শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে। সেই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার জন্য অসুর মূরতির পরিবর্তে টিকি এবং পৈতেধারী ভুঁড়িওয়ালা বামুনের মূর্তি বসানো হোক। লোভ, লালসা, কামনা, বাসনা, জিঘাংসা ও কদাচারের বীভৎস মুখোশ খুলে যাক। কদাচারীদের মুখ মানুষের সামনে প্রকাশিত হোক যাতে কল্যাণকারী সমাজ পুনর্গঠনে মানুষ আরো সচেতন প্রয়াস গ্রহণ করতে পারে।     


Upper caste Indian male more European

$
0
0
THE TIMES OF INDIA
Mumbai, Monday, May 21, 2001
Upper caste Indian male more European, says study
By Chidanand Rajghatta
WASHINGTON: The upper caste Indian male population is genetically closer to Europeans than the lower castes. Which are more "Asian," according to a potentially controversial new study being published in the forthcoming issue of the journalHuman Genome.
   The authors of the study say their findings support historical data indicating that last 10,000 years were mostly male. An analysis of the genetic material also shows that the "ancestors of India men and women came from different parts of the world," says Michael Bamstad of the University of Utah, who led the research group.
    The researchers say this difference in gender and genetic makeup may also hold the key to the origin of the caste system. The migrating of invading male population left descendents in the higher than lower castes and may have even devised the caste system. Bamstad said in an interview with this correspondent on Thursday.
    Bamstad's study showed that each caste's mitochondrial DNA, which is derived from the mother only, has a greater similarity to Asians than to Europeans, but the upper castes show less similarity than do the lower castes.
     Conversely, Y-chromosome data, derived from the father only, show each caste more similar Europeans, with the upper castes being most similar, probably because more Eurasian males migrated to India than did Eurasian females.
    Such a finding could also imply that the women of the sub-continent are more Indian than are men.
    To "increase the power of the study," Bamstad and his associates also examined 40 additional genes that are inherited from the father and the mother. All of these data strongly supported the conclusion that upper castes have a higher genetic similarity to Europeans than do lower castes, the study says.
    "These are potentially controversial results," Bamstad said. "But we are able to demonstrate unequivocally that the upper castes are more similar to Europeans than lower castes, and that women are more mobile-mostly upwardly -in the caste system."
     The study in fact says the genetic distance is closest between Europeans and Brahmins (0.10), followed by Kashatrivas (0.12) and Vaishyas (0.16).
    "Assuming that contemporary Europeans reflect West Eurasian affinities, these data indicate that the amount at West Eurasian admixture with Indian population may have been proportionate to caste rank, the study says.
     Bamstad’s collaborators in the study include researchers from the Andhra University, University of Madras and the Anthropological Survey of India. The group has done work in this area before. In a previously published paper inNature magazine, Bamstad's team said each Indian caste had developed a distinctive genetic profile, particularly among men, and more so when there was little intermarriage. But the women's genes suggested greater social mobility.
     The discovery suggests that women on occasion marry men from higher castes producing children that have their husband's social rank, the researchers said, claiming the stratification of the Hindu caste system is driven by women."
                              _____________________________




পুরুলিয়ায় অসুর পরবঃ একটি প্রতিবেন

$
0
0
MAHISASSURA in Terracotta Art, Adra Rly Station 
গত ৩রা অক্টোবর পুরুলিয়া জেলায় কাশীপুর থানার অন্তর্গত ভালাগাড়া  উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভাব গম্ভীর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হল অসুর উৎসব। বিহার,  ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের ৩০টি মূলনিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই বিস্মৃত মহান  যোদ্ধা হূদুড় দুর্গার স্মরণ সভায় উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটিকে মূল ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীকী সভার মর্যাদা প্রদান করেন। সভা থেকে প্রত্যেক প্রতিনিধিদের মনে মূলভারতীয় সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের শপথ সঞ্চারিত হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গের মধ্যে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজ সংগঠক সৃষ্টিধর মাহাত, ম্নোহ্র মৌলী বিশ্বাস, আই পি এস নজরুল ইসলাম এবং প্রখ্যাত আদিবাসী দিসম মাঝি ডঃ নিত্যানন্দ হেম্ব্রম মহাশয়। 

সকাল ১১টার সময় আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী নাইকে  কুডাম নাইকে মহান হুদুড় দুর্গার মূর্তির সমানে করম গাছের ডাল পুতে স্মরণ অনুষ্ঠান উদযাপন করেন। আগত প্রতিনিধিরা মাতৃভূমিনর স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে নিহত হূদুড় দুর্গার মূর্তিতে মালা দিয়ে সম্মান জানান। 
এর পরেই আরম্ভ হয় মহান সম্রাটের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা। বিভিন্ন রাজ্যের থেকে আগত প্রতিনিধিরা এই আলোচনায়  অংশগ্রহণ করেন। আলোচক সৃষ্টিধর মাহাত মহাশয় হুদুড় দুর্গার মহান যুদ্ধের সাথে সাথে মূল নিবাসী সংস্কৃতির স্বতন্ত্রতা রক্ষার লড়াইয়ে রাঢ় অঞ্চলের অংশগ্রহণের বিশদ আলোচনা করেন। মাননীয় নজরুল ইসলামের আলোচনায় উঠে আসে আর্য-অনার্য লড়াইয়ের দ্বান্দ্বিক বাস্তবতা। আর্য শাসন ব্যবস্থা এখনো কি ভাবে মূলনিবাসীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে চলেছে এবং সেই বঞ্চনার কাজ সুচারু রূপে সংঘটিত করার জন্য কোন ধরণের ষড়যন্ত্র করে চলেছে তার বিশদ বর্ননা করেন। তিনি এ কথা বলতে ভোলেন নি যে, এদেশের মুসলমান সমাজ এই মূলভারতীয় সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর্য-অনার্য লড়াইয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি দলিত মুসলিম সংহতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। এই লড়াইয়ে এদেশের মুসলমানদের কী করনীয় তাও তিনি আলোচনা করেন।

হুদুড় দুর্গা স্মরণের মূল উদ্দেশ্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর বিশেষ ভাবে আলোকপাত করেন শ্রদ্ধেয় দিশম মাঝি ডঃ নিত্যানন্দ হেম্ব্রম। তিনি নানান ঐতিহাসিক তথ্য থেকে উল্লেখ করেন যে প্রাচীন কালে এই জনপদের নাম ছিল  “বোঙ্গাদিশম” এবং যার মহান সম্রাট ছিলেন এই বোঙ্গাসুর বা মহিষাসুর। হূদুড় (বজ্রের ধ্বনি কে হুদুড় বলা হয়) বা বজ্রের মত ছিল তার প্রভাব ও প্রতাপ। তাই তার আর এক নাম হুদুড় দুর্গা। মহাতেজা এই রাজার পরাক্রান্ত শক্তি ও যুদ্ধ কৌশলের কাছে আর্য বাহিনী মুহুর্মুহুর  পর্যুদস্ত হয়। কোন ভাবেই বোঙ্গাদিশমে জয় করতে পারেনা আর্য বাহিনী। অবশেষে ছলনা ও কপটতাকেই তারা বঙ্গ বিজয়ের উপায় হিসেবে বেছে নেয় এবং স্বর্গের অপ্সরা মেনকার কন্যা দুর্গাকে মহিষাসুর বধের জন্য প্রেরণ করে। মাননীয় নিত্যান্দ হেম্ব্রম উল্লেখ করেন যে দেবতাদের স্বর্গকে মহান অসুরেরা পতিতালয় বলে মনে করতেন। দেতারা মূলভারতীয় রাজাদের পরাজিত ও নিহত করার পর তাদের স্ত্রী ও নারীদের এই দুর্গ বা স্বর্গে নিয়ে আসত এবং যথেচ্ছ যৌন নিগ্রহ করে তাদের নর্তকী বা  দাসীতে পরিণত করত এবং পরবর্তী কালে যুদ্ধের প্রকৌশল হিসেবেই এই নারীদের ব্যবহার করত। দুর্গাও দেবতাদের পতিতালয় থেকে আসা এমন এক নারী যে মহিষাসুরের সাথে প্রেমের ছলনা করে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হয় এবং সুযোগ বুঝে মহিষাসুরকে হত্যা করে। এই ঘটনায় অসুরপুরিত শোকের ছায়া নেমে আসে। অসুর যোদ্ধারা নারীর ছদ্মবেশ ধারণ করে যাতে এবং “ ও হায়রে ও হায়রে’ গানের সুরে ভুয়াং নাচ করতে করতে বেরিয়ে পড়ে। শোক পালনের এই লোকাচারকে “দাশাই পরব” ও বলা হয়।
আলচনা সভার মাঝে মাঝে চলে প্রাচীন এই ঘটনার উপর সংগৃহীত লোকসঙ্গীত। যে লোকসঙ্গীতগুলির কথা ও ভাবের মধ্যে হরপ্পা সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হিসেবে আর্য বাহিনীকেই দায়ী হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কিছু গানে উঠে আসে আক্ষেপের সুর। নিজস্ব সংস্কৃতি ত্যাগ করে আর্য সংস্কৃতির বশ্যতা স্বীকার করার অনুতাপ। ত

রাত ৮টার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়। ফলে ভুয়াং, করম, শড়পা ও দাশাই নাচের অনুষ্ঠান করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। আগত প্রতিনিধিরা বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে মিলিত হয়ে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেবার জন্য শপথ করেন। মাননীয় নজরুল ইসলাম সাহেব আগামী বছর এই অনুষ্ঠান কোলকাতায় করার জন্য সকলকে অনুরোধ করেন এবং সেই অনুষ্ঠানে সকলকে সহযোগিতা করার জন্য আবেদন জানান।    

আড়ম-ওনাম-ভাইফোঁটা অসুর ধম্ম পালনের লোকোৎসব ঃ

$
0
0

ছোটবেলায় মেজকাকু গদাধরের সাথে নৌকা করে “আড়ম” বা “আড়ং”য়ে যাওয়া ছিল আমাদের জীবনের একটি অন্যতম আকর্ষণ। এই আড়ং মিলত রামদিয়াতে। বর্তমান বাংলাদেশের ওড়াকান্দি গ্রামের ঠিক পশ্চিম দিকে যে খালটি গোপালগঞ্জ থেকে কাশিয়ানী হয়ে পদ্মার সাথে মিশেছে ওই খালের পাড়েই রামদিয়া। নিজামকান্দি, মাঝকান্দি, ঘেত্তকান্দি, তারাইল, খাগাইল, নড়াইল, ঢিলাইল, সাফলিডাঙ্গা, সাতপাড়, শিঙাসুর, ঘেনাসুর, সুখতোইল, বোলতোইল এরকম কয়েকশো গ্রামের মাঝে এই রামদিয়া। ফলে রামদিয়ার আড়ং ছিল এই বিশাল অঞ্চলের মানুষের কাছে এক বাৎসরিক মিলন ক্ষেত্র শ্রেষ্ঠতম আড়ম্বর। আর এই আড়ংয়ে জনপুঞ্জের আন্তরিক আগ্রহে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হত প্রাচীন ভারতের নৌকেন্দ্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠতম সাংস্কৃতিক উপস্থাপন “নাও বাইচ” বা “নৌকা বাইচ”আমাদের কাছে এই নৌকা  বাইচ দেখার একটা প্রগাঢ় আগ্রহ ছিল। বড় হয়ে ঐ নাও বাইচের একজন প্রতিনিধি হয়ে নিজেদের শৌর্য-বীর্য ও কলা-কৌশল উপস্থাপনের এক পারম্পরিক উন্মাদনা তৈরি হত আমাদের মধ্যে।

আড়মের আবহঃ  
সকাল থেকেই সাজ সাজ রব উঠত প্রত্যেকটি বাড়িতে, বাহান্দে বাহান্দে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই আমরা নতুন পোশাক পরে নিতাম। পারিবারিক নোউকাগুলি বাঁধা থাকত ঘাটে। পাশাপাশি থাকত একটি বাচাড়ি নৌকা।  মেজকাকু তাঁর সাথে যারা আড়ংয়ে যাবে তাদের সকলকে দেখে নিতেন। নাওয়ের চরাটের উপর বয়স অনুসারে সকলকে বসিয়ে দিতেন। নৌকা প্রস্তুত  হলে আমরা মা, পিসিমা আসতেন বরণকুলা নিয়ে। তেল, সিন্দুর, ধানদূর্বা দিয়ে বরণ করা হত নোউকাকে। বরণ শেষে মা তাঁর বা পায়ের হালকা ধাক্কা দিয়ে নৌকাকে একটু ভাসিয়ে দিতেন। আমাদের উদ্দেশ্যে বলতেন, “জয় করে এস”। বাচাড়ি নৌকা বরণ করতেন ঠাকুরমায়েরা কারণ ওই নৌকায় উঠতেন আমাদের জেঠামশাইয়ের নেতৃত্বে ২০-২২ জন বাছাই করা জোয়ান। বরণ শেষ হলে মেয়েরা জুয়াড় দিয়ে নৌকাগুলিকে ভাসিয়ে দিত। জ্যাঠামশাইয়ের হাতের রামদা ও ঢাল। ঝলসে উঠত সড়কি-বল্লম। কাঁসির আওয়াজ, বৈঠার টান ও বাইছাদের হেইয়া- হেইয়া রবে নিমেষে চোখের সমানে থেকে উধাও হয়ে যেত বাচাড়ি।        

নাও বাইচ আড়মের অন্যতম আকর্ষণঃ  

আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি চারিদিকে জলমগ্ন গ্রামগুলি তখন এক একটা দ্বীপ। আমন ধান আর দীঘা ধানক্ষেতের পাশের নোলদাঁড়া দিয়েসারিবদ্ধ ভাবে পারিবারিক নৌকা, ব্যবসায়ীক নৌকাগুলি এসে ভিড়ত রামদিয়ার খালপাড়ে। আসতো করফাই, সাম্পান, পানসি, টাবুরিয়া। আসতো বিদিরা বা বজরার মতো কিছু  শৌখিন নাও।  হাজার হাজার নৌকা নিয়ে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ হত এই আড়ংয়ে। আসতো বাইচের বাচাড়িআমরা তাকিয়ে থাকতাম নদী বক্ষের দিকে কখন ঐ বাইচের বাচাড়িগুলি কাঁসির ছন্দবদ্ধ আওয়াজের সাথে সাথে বৈঠার ঝড় তুলে একে অন্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেএই বাচাড়িগুলির পিছেনে হাল সামলাত হালিয়া, নৌকার গুরার দুপাশে সারিবদ্ধ   ভাবে বসে থাকত বৈঠা হাতে তাগড়া জোয়ান বাইছাগণএদের শক্তির জোরে ও বৈঠার টানে জয় পরাজয় নিষ্পত্তি হত। সামনের দিকে থাকত ঢাল, সড়কি, লাঠি ও রামদা হাতে সেরা ঢালি বাহিনী। এ যেন ভাবি কালের জন্য কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি অথবা প্রাচীন ঐতিহ্য ও পারম্পরিক  অভিজ্ঞতার এক গর্বিত অভিব্যক্তি। রামদা,  লাঠি, ঢাল ও সড়কির নিপুন কলাকৌশল দেখতে দেখতে একটি সহজাত সাহস আমদেরও সংক্রামিত করতওই  বিপুল উদ্দামতা, প্রতিকুলতার মধ্যে স্থির থেকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য আবেগে আমরাও উৎসাহিত হয়ে উঠতাম। সহজাত স্বভাবের টানেই আমদের একান্ত গভীরে সঞ্চারিত হত লোকায়িত সংস্কৃতির এক সহজপাঠ। ঐকান্তিক ইচ্ছার এই বিপুল সমারোহ এই বঙ্গ এই ভারতবর্ষের বিবর্তনের ধারাপাতের সাথে আমরা নিবিড় ভাবে একাত্ত হয়ে যেতাম ছোটবেলা থেকে।

আড়মের সাথে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনঃ
বাংলায় ১৫ শতকের শেষ ভাগে বাংলায় দুর্গা পূজা শুরু হয়। আর সুকৌশলে আড়মের দিনেই এই বিসর্জনের প্রক্রিয়াটিকে সংযুক্ত করা হয় যাতে দুর্গাপূজাও লোকাচারের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং কালক্রমে লোকাচার ও লোকোৎসবের পরিবর্তে দুর্গাপূজাই প্রধান হয়ে ওঠে। আমদের ছোট বেলাতেই দেখেছি প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বাইচের প্রতিযোগিতাকে অনেকটাই ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। দুর্গা প্রতিমা বোঝাই নৌকাগুলি বাইচের নৌকার গতিপথের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং বাইচের আনন্দ অনেকটাই মাটি করে দিয়েছে।             

আড়ম বা আড়ং শব্দের তাৎপর্য
প্রাগার্য ভারতের অসুর ভাষার শব্দভাণ্ডারে আড়ম বা আড়ং শব্দের অর্থ প্রচুর, পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট পরিমাণ। আড়মধোলাই, আড়ম্বর, সাড়ম্বর সব্দগুলি যে আড়ম বা আড়ং থেকে এসেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পুরাকালের জনবহুল গ্রাম ও গঞ্জের নামের সাথেও আড়ং শব্দটি জুড়ে আছে। কিন্তু যে অর্থে আড়মের মেলা বলা হয় তা কেবল প্রচুর বা পর্যাপ্ত অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংস্কৃতিক সমারোহ এবং নিশ্চিত ভাবে এই সমারোহের একটি আর্থসামাজিক উদ্দেশ্য আছে। যা বিবর্তিত হতে হতে লোকাচার ও লোকোৎসবে পরিণত হয়েছে।
যে কাল ও সময়ে আড়মের মেলা হয় সেটাও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিনের ঝড়, ঝঞ্ঝা ও বৃষ্টি খানিকটা কেটে গেলে মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশংকা অনেকটা কেটে যায়। ক্ষেতের ধানগুলো বাড়ন্ত জলকেও হার মানিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভাদ্দরের প্রথম দিকে বাড়িতে আসে আউস ধান। অন্যদিকে দীঘা ধান ও আমন ধানের ক্ষেতগুলি চাষির বুক ভরিয়ে তোলে। কাজের চাপ কম। অনেকটা অবসর। প্রিয়জনদের মুখ মনে পড়ে। জানতে ইচ্ছে করে তারা কেমন আছে। জানাতে ইচ্ছে করে নিজের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা। স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার এটাই উপযুক্ত কাল। জনপুঞ্জের এই একান্ত আবেগের সম্মিলিত মিলন ক্ষেত্রই আড়ম।  
সাধারণত কৃষিনির্ভর শ্রমজীবী মানুষের জীবনযাপনের জন্য যে সব সামগ্রীর প্রয়োজন তার যোগান দেয় আড়মের মেলা। মনোহারী সামগ্রীরও খামতি থাকেনা। ফলে পুরুষের সাথে সাথে নরীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। তবে আড়ং থেকে ঘরে ফেরার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের মিষ্টির সাথে প্রচুর আখ কিনে বাড়ি ফেরে পরিবারকর্তা। চার-পাঁচদিন ধরে চলে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। আত্মীয় স্বজনের বাড়ি বাড়ি চলে নিমন্ত্রণের পালা। মাছ, মাংস, পিঠে, পুলীর ভরপেট আয়োজন।

আড়ম এবং ওনামঃ  

বাংলায় যে সময় আড়ম অনুষ্ঠিত হয় ঠিক একই সময় তামিলনাড়ুর সমুদ্রতটবর্তী অঞ্চল বিশেষত কেরালায় অনুষ্ঠিত হয় ওনাম উৎসব। ওনাম সম্ভবত প্রাচীন অসুর শব্দ আড়মের সংস্কৃতিকরণ। এই ওনাম উৎসবে বাইচের মতোই অনুষ্ঠিত হয় বাল্লাম কেলি (Vallum Kali)মালাবার উপকুলের নৌপ্রতিযোগিতার সর্বাধিক প্রচলিত প্রচলিত আনন্দদায়ক খেলা। এই প্রতিযোগিতা ওনাম উৎসবের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ওনাম একটি কৃষি উৎসব। ফসল ঘরে তোলার পরে উপকুলের মানুষেরা আত্মীয়স্বজনের সাথে নিরলস আনন্দে মেতে ওঠে। চারদিন ধরে চলে নাচ, গান ও ভোজনের উৎসব। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ হল বাল্লাম কেলি। রংবেরংয়ের শতাধিক নৌকা নিয়ে আন্নামালাই, কোট্টিয়াম ও কোবালাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষ মেতে ওঠে নৌপ্রতিযোগিতায়। কাড়া, নাকাড়া ও করতালের দ্রুত ছন্দে চলে বৈঠার টান। নৌকা বাইচের গানের মতোই বাল্লাম কেলির গানে থাকে একই ছন্দ, একই আবেগ ও একই দ্যোতনা।          
ফলে আড়ম-ওনাম, বাল্লাম কেলি ও বাইচ যে সম সংস্কৃতি সম্পন্ন জনপুঞ্জের লোকায়ত বিদ্যা সে বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

অসুর উপাখ্যান ও লোকোৎসবঃ     

অনেক লোক উৎসবের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এক একটি পৌরাণিক কাহিনী। এই পৌরাণিক কাহিনীর বিশ্লেষণ  করলে আড়মের মেলায় যাবার জন্য প্রস্তুত নৌকাগুলিকে বরণ করার সময় মা, পিসিমা  ঠাকুরমায়েরা কেন “জিতে এস” বলতেন তার খানিকটা অর্থ বোধগম্য হতে পারে। এই পৌরাণিক কাহিনীটি ভগবত পুরানে লিপিবদ্ধ হয়েছে।  বিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করে কী ভাবেঅসুর  রাজা মহাবলীকে হত্যা করেছিল তা এই কাহিনীতে বর্ণিত হয়েছে। কে এই রাজা বলী? যিনি মহা বলী নামে খ্যাত তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করি।  রাজা বলীর বংশ পরিচয় জানা যায় কয়েকটি পুজাণে ও রামায়ন কাহিনীতে। বিষ্ণু পুরানে বর্ণিত আছে যে অসুর রাজা হিরণ্যকাশ্যপ ছিলেন দক্ষিণ ভারতের পরাক্রান্ত রাজা। তাঁর কারণেই দক্ষিণ ভারতে ব্রাহ্মন্যবাদী শক্তির প্রসার সম্ভব হচ্ছিলনা। দেবরাজ ইন্দ্র কিছুতেই এটে উঠতে পারছিল না হিরণ্য কাশ্যপের সাথে। হিরণ্য কাশ্যপের ভাই হিরন্যাক্ষ ছিলেন আরো দুর্ধর্ষ। ফলে সম্মুখ সমরে উত্তীর্ণ না হয়ে কৌশল অবলম্বন করলেন দেবশক্তি। বিষ্ণু বরাহ রূপ ধারণ করে  হিরন্যাক্ষকে হত্যা করলেন। নিরপরাধ ভাইকে এই নৃশংস ভাবে হত্যার বদলা নিতে হিরণ্য কাশ্যপ সৈন্যবল আরো বাড়িয়ে দেবশক্তিকে পর্যুদস্ত করতে লাগলেন। ফলে ছলনার আশ্রয় নিতে হল বিষ্ণুকে। বালক প্রহ্লাদকে কবজা করে ঢুকে পড়লেন রাজ প্রাসাদে। সুজোগ বুঝে ব্রাহ্মণ সেনাপতি নরসিংহের মূর্তির ছদ্মবেশ ধারণ করে রাজা হিরণ্যকাশ্যপকে হত্যা করে তাঁর নাবালক পুত্র প্রহ্ললাদ কে সিংহাসনে বসিয়ে দেবনীতি রুপায়নের ষড়যন্ত্র শুরু করলেন। তাদের ধারনা ছিল যে এই ব্যবস্থায় প্রজারা মনে করবে যে প্রহ্ললাদই শাসন করছে। ব্রাহ্মন্যবাদ কায়েম হলে প্রহল্লাদকেও হত্যা করা হবে।   
রাজা হিরন্যকের বোন ছিলেন হোলিকা। এই ষড়যন্ত্রের কথা তিনি জানাতে পেরে যান এবং প্রহল্লাদকে বাঁচানোর জন্য তাকে নিয়ে তিনি সুরক্ষিত স্থানে চলে যান। কিন্তু  আর্য দস্যুদের কুটিল নজর এড়িয়ে যেতে তিনি ব্যর্থ হন। দস্যুরা তাঁকে ঘিরে ফেলে। তাঁকে ধর্ষণ করে। তার রক্ত নিয়ে উন্মত্ত খেলায় মেতে ওঠে দেবশক্তি এবং গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয় হোলিকাকে। এই প্রহ্লাদের ছেলে বিরোচনকে হত্যা করে ইন্দ্র। বিরোচনের পুত্রের নাম বলী ও কন্যার নাম মন্থরা। এই মন্থরা কিন্তু রামায়নে রামের দ্বিতীয় মাতা কৈকেয়ীর কুটিলা দাসী মন্থরা নন। ইনি রাজা মহাবলীর বোন মন্থরা। তবে রামায়নে উত্তরা কান্ডে দেখা যায় রাবণ রাজা বলীর নাতনী বজ্রজ্বালার সাথে কুম্ভকর্ণের বিবাহ দেন। এই সূত্রে কুম্ভকর্ণ মন্থরার নাতজামাই।

বলী কাহিনী ও দীপাবলিঃ  
অসুর রাজা বলী ছিলেন প্রজাপালক কল্যাণকারী রাজা। তাঁর শাসনে প্রজারা অত্যন্ত শান্তিতে বাস করতেন। দানশীল রাজা মহাবলী প্রজাদের সুখদুঃখে পাশে থাকতেন। রাজকোষ থেকে প্রচুর দান করতেন অতিথি ও প্রজাবর্গকে। এনিয়ে প্রজারা ভীষণ গর্ব বোধ করতেন। প্রাজ্ঞতা ও বলবীর্যে মহা বলীর রাজ্য ক্রমে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়ে ওঠে। এতে বিষ্ণুর প্রভাব কমে যায়। তাই বলীর গর্ব খর্ব করার জন্য তিনি বামনের ছদ্মবেশে রাজা বলীর কাছে তিন পা জমি দান পাবার জন্য আবেদন করেন। রাজগুরু শুক্রাচার্য তিন পা জমির মধ্যে গভীর কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে বলে রাজাকে সতর্ক করেন। মহাবলী আপন পৌরুষ ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তিন পা জমি দিতে রাজি হয়ে যান। আর এই সুজোগেই বামনবেশী বিষ্ণু এক পা দিয়ে সমগ্র পৃথিবী ঢেকে ফেলেন, আর এক পা দিয়ে আকাশ আচ্ছাদিত করেন এবং তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন বলে বলীকে জিজ্ঞাসা করেন। বলী সবকিছু বামনের করায়ত্ত হয়েগেছে দেখে নিজের মাথা বাড়িয়ে দেন। আর তৃতীয় পা দিয়ে বামন বলীরাজাকে নরকে প্রথিত করেন। কিন্তু লোকায়ত কাহিনী অনুসারে তাকে হত্যা করে লুকিয়ে ফেলা হয়। যাতে প্রজা বিদ্রোহ না ঘটে তার জন্য রটিয়ে দেওয়া হয় যে  বলী নরক থেকে  বছরে একবার চার দিনের জন্য ঘরে ফিরতে পারবে। প্রচলিত ওনাম উৎসবের চারদিন সে প্রিয়জনদের সাথে মিলিত হবে। মহাবলীর এ হেন পরিণতিতে দেবসমাজে  মহা ধুমধামের মধ্য দিয়ে পালিত হয় আলোর উৎসব। এই উৎসবের নাম দীপাবলি।

ভাই ডুজ বা ভাই ফোঁটাঃ  
কিন্তু লোকসাহিত্য বা লোকগাথাগুলিতে লুকিয়ে আছে বলী রাজার অমর কাহিনী। বলী রাজার প্রজাগণ এই জঘন্য হত্যা মেনে নিতে পারেননি। বিশেষত বোন মন্থরা ঘোরতর অসন্তোষ প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি দেবলোক ধ্বংস করে দেবার প্রতিজ্ঞা করেন।  রাজ্যের সমস্ত সৈন্যদের ভাই হিসেবে নিমন্ত্রণ করেন মন্থরা। কপালে শ্বেত চন্দনের ফোটা ও মিষ্টি খাইয়ে বাহিনীকে সাজিয়ে তোলন। যে মিষ্টিগুলি মন্থরা তৈরি  করেছিলেন তার প্রত্যেকটি ছিল এক একটি শস্ত্রের আকার। নৌবাহিনীকে সাজিয়ে তোলেন। বিষ্ণু পা দিয়ে বলীকে করেছিলেন তাই বাম পা দিয়ে নৌকা গুলিকে ধাক্কা দিয়ে মহড়ার জন্য ভাসিয়ে দেওয়া হয় বন্দরের জলে। মন্থরা তাদের উৎসাহিত করেছিলেন এই কথা বলে যে, তারাই যুদ্ধে জিতবে। মন্থরার এই যুদ্ধ প্রস্তুতি দেবকুলকে শঙ্কিত করে তোলে। দেবরাজ ইন্দ্র সসৈন্যে মন্থরাকে আক্রমণ করেন এবং হত্যা করেন। কিন্তু লোকায়ত কাহিনী অনুসারে মন্থরার এই দৃঢ় আদেশ নিয়ে শুরু হয় বাল্লাম কেলী। আজও কেরালার ছড়িয়ে থাকা সমুদ্রতট শায়িত অঞ্চলগুলিতে ওনামের চার দিন ধরে চলে বাল্লাম কেলি। বাল্লাম কেলী মালাবার উপকুলের সর্বাধিক প্রচলিত নৌকা প্রতিযোগিতা। বাংলার মা ঠাকুরমায়েদের বাইচের নৌকা  বরণের সাথে কোথায় যেন মন্থরার ওই বরণ একাত্ম হয়ে যায়। মন্থরার ওই শান্ত দৃঢ় কণ্ঠই আমরা শুনতে পেতাম আড়মের মেলাতে যাবার সময় মা ঠাকুরমার মুখে “জিতে এস”।      
মধ্য ভারতের জনসাধারণের মধ্যে বলী রাজার প্রত্যাবর্তনের সমারোহ হিসেবে পালিত হয় ভাই ডুজ বা ভাই ফোঁটা।  বছরের  এই একটি দিন ভাইয়েরা বোনের কাছে ফিরে আসে। বোনের জন্য নিয়ে আসে নতুন পোশাক। বোন একটি আসনের উপর ভাইদের বসিয়ে কপালে ফোঁটা দেয়। 
“ইনা মিনা ডিকা
ভাই কা শরপে টিকা
বহনা কহে ইয়ে মিঠাই লাও
বলী কা রাজ ফির সে লাও” এই ছড়াটি কাটতে কাটতে ভাইয়ের কপালে শ্বেত চন্দন পরিয়ে দেয়। এই ছড়ার বাংলা করলে দাড়ায়ঃ
ইনা মিনা ডিকা,
ভাইয়ের কপালে টিকা
বোন বলে এই মিঠাই খাও
বলীর শাসন ফিরিয়ে দাও।
ঘরে ঘরে বোনেরা লোকাচারের মাধ্যমে বলীর সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য ভাইয়েদের এভাবে উৎসাহিত করায় প্রমাদ গোনে দেবসমাজ। তাঁরা আবার পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে যম ও যমুনার গল্প ঢুকিয়ে দিয়ে এই বিশাল অঞ্চলের লোকাচারকে ব্রাহ্মন্যবাদী ধারায় প্রবাহিত করার চক্রান্ত শুরু করে। রচিত হয় ভাই ফোঁটার ছড়াঃ
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা”।

মানুষ যুক্তিবাদী ও সুশিক্ষিত হলে ব্রহ্মন্যবাদ টেকেনাঃ  
ব্রাহ্মন্যবাদ বা দেবসমাজের রচিত কল্পকাহিনীগুলি থেকে একটি বার্তা আমাদের কাছে প্রকট হয়ে ওঠে যে, যখন যখন ভারতে ব্রাহ্মন্যবাদের উপর আক্রমণ এসেছে তখন তখন প্রলয়, সংকট, জিঘাংসা, নৃশংসতা, যুদ্ধ বা গুপ্ত হত্যার আশ্রয় নিয়েছে ব্রাহ্মণসমাজ। ঈশ্বরের নামে, ধর্মের নামে চালিত করা হয়েছে এই সব নরহত্যার জঘন্য ঘটনাগুলিকে। রচিত হয়েছে অবতার কাহিনী। ইতিহাস ধ্বংস করে রচিত হয়েছে মিথ। এই মিথ মিথ্যার বেসাতি কিনা তা কালে বিচার হবে।  তবে এই কল্প কাহিনীগুলিকে চোলাইয়ের মত  গেলাতে  গেলাতে ইতিহাস বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণসমাজ যে কতটা নৃশংস তা তাদের সৃষ্ট দেব দেবীদের ছবি দেখলেই স্পট বোঝা যায়। আর এই সব দেব দেবীর ভিত্তি হল আজগুবি পৌরাণিক কাহিনীগুলি। অর্থাৎ একথা স্পষ্ট যে বিজ্ঞানের আলোকে ইতিহাসের পর্যালোচনা করলে ব্রাহ্মন্যবাদী আজগুবি তত্ত্বগুলি প্রচুর হাস্যরসের খোরাক যোগায়। প্রজ্ঞা ও যুক্তিবাদের কাছে ধোপে টেকেনা ব্রাহ্মন্যবাদ। এটি কেবল মাত্র টিকে থাকে অজ্ঞতা ও  কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে। হিংসা, বীভৎসতা, বিচ্ছিন্নতা, নৃশংসতা, নারীর প্রতি অবমানতা ও কদর্যতার জন্য পৃথিবীর কোথাও ব্রাহ্মন্যবাদের প্রসার ঘটেনি। গায়ের জোরে যেটুকু প্রসারিত হয়েছিল তাও সংকুচিত হতে হতে প্রাদেশিকতায় পরিণত হয়েছে। মানুষ আরো শিক্ষিত হলে, দেশের ও জনগণের আরো আর্থিক সয়ম্ভরতা এলে এই সংকোচন আরো বাড়বে এবং কালে কালে বিলোপ সাধন ঘটবে এই কলঙ্কিত মতবাদের। কিন্তু বিবর্তনের নতুন নতুন বাঁকে এসে শ্রম ও উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত জনপুঞ্জের মধ্যেই মানবিক কারণেই বেঁচে থাকবে আড়ম, ওনাম, ভাইফোঁটা, নাওবাইচ, বাল্লাম কেলীর মত লোকাচার ও লোকসংস্কৃতি।                            

       



কবীর সুমনের “মমতা ব্যানার্জী বাচাও অভিযান”ঃ

$
0
0

বর্ধমানকান্ডে এনআইএবাএনএসজিযেগুরুত্বদেখিয়েছেবাতদন্তেরহালহকিকতযেভাবে যে দিকেএগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে যে  দেশকে,   সমাজকে একটি  পরিকল্পিত খাতে প্রবাহিত করার জন্য বা বিশেষ কোন রাজনৈতিক উত্থানের জন্যই এগোলো ব্যবহার করা হচ্ছে।       
একদা তৃণমূলী সাংসদ কবির সুমন কিন্তু তেমনি মনে করছেন। সাম্প্রতিক এক সাংবাদিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দাবী  করেছেন যে এই সন্ত্রাসবাদের আবহাওয়া একটি পরিকল্পিত ঘটনা এবং যে ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের সমস্ত মুসলমানের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। তিনি এটাও দাবী করেছেন যে বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এবং তাদের জন্মদাতা  সংগঠন আরএসএস পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনৈতিক ভাবেই এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি এও মনে করেন যে এই আরএসএস বা বিজেপিকে আটকানোর একমাত্র ক্ষমতা রাখেন মমতা ব্যানার্জী এবং জয়ললিতার মত কতিপয় জননেত্রীরা। এরপর মাননীয় কবীর সুমন মহাশয় ভারতবর্ষের আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জগতে মুসলিমদের অবদানের কথা বর্ণনা করে আক্ষেপ করেছেন যে তথাকথিত স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৬৫ বছর ধরে ভারতবর্ষের মুসলিম সমাজ চরম বঞ্চনার স্বীকার হয়েছে। মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার  জন্য মমতা ব্যানার্জীর অবদানকেও তিনি প্রশংসা করতে ভোলেননি।

এতে প্রবল হাততালি কুড়িয়েছেনতো তিন। একেবারে খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে নিশ্চিত পতনের থেকে নিজেকে খানিকটা সামলে নিতে পেরেছেনএবং মমতা ব্যানার্জীর প্রতি তাঁর আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ভাঙ্গা সেতু খানিকটা মেরামত করে নিয়েছেন। তা তিনি করুন, কেননা বাঁচার অধিকার সকলের আছে। সংবিধানে এটি একটি মৌলিক অধিকার এবং সেই অধিকার অর্জনের জন্য তার আকুতি অগ্রাহ্য করার নয়।
কিন্তু কথা হল সুমনবাবু কেন ঠিক এই সময় এ হেন ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন? বলা ভাল কোন প্রবল আবেগ তাকে এই ভূমিকা গ্রহণ করতে উৎসাহিত  করল? যখন চিটফান্ডগুলির সাথে মমতা ব্যানর্জীর দলের সরাসরি যোগাযোগ নিয়ে অভিযোগ উঠছে। জড়িয়ে পড়ছে তাবড় তাবড় নেতানেত্রী। ইডি বা সিবিআইকে  এড়ানোর জন্য মন্ত্রীরা পালা করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আশ্রয় নিচ্ছেন নার্সিংহোমে। মানুষের সলিল সমাধি নিশ্চিত করার পর শ্যামল সেন কমিশন যখন ঝাঁপ বন্ধ করে দিচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জী মুখে কুলুপ এঁটে বসেছেন এবং যে মুহূর্তে সারদার টাকা তাঁর দলের সাংসদের মাধ্যমে দেশ বিরোধী চক্রান্তকারীদের  হাতে পৌঁছে যাবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মমতা ব্যানারর্জীর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দপ্তরের নাকের ডগায় বসে যখন জামাত-উল-মুজাহিদিন (জুম) পশ্চিমবঙ্গকে তাদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত করে ফেলে অবাধে সন্ত্রাসবাদী কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারকে খতম করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করছে। হত্যা, ষড়যন্ত্র ও অন্তর্ঘাতে লিপ্ত হয়েছে। আর এ সমস্ত কিছুর পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ মদতদাতা হিসেবে নবান্নের সর্বোচ্চ চেয়ারটির দিকে আঙুল উঠছে  ঠিক সেই মুহূর্তে কবীর সুমনের এই বিশুদ্ধ ভাষণ নিশ্চয়ই তাৎপর্য পূর্ণ।  তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে যে তিনি সুমন চট্টপাধ্যায় থেকে এখন কবীর সুমন। কুলীন থেকে কবীর জোলার সমগোত্রীয় এবং তিনি ধর্মান্তরিত মুসলমান হলেও সেকুলার বাংলার প্রতিবাদী মুখ।  সগোত্রীয় সহযাত্রীর দুঃসময়ে তাঁর হয়ে উচিৎ ভাষণকে তিনি কর্তব্য বলে মেনে নিয়েছেন। একদা যেভাবে তিনি “তারা নিউজের” একজন সাংবাদিক, অনুষ্ঠান পরিচালক হিসবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পালে প্রবল হাওয়া তোলার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। গীটারের সুরঝংকারে মহিমান্বিত করে তুলেছিলেন মমতা ব্যানার্জীর আমরণ অনশন।
সুমনবাবু কবি মানুষ। আবেগ কবিতার প্রধান উৎস। এক্ষেত্রেও হয়ত কোন নিশ্চিত কারণে তাঁর বিবেক ও আবেগ প্রবলতর হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি স্বভাব সুলভ আবেগের উপর আস্থা রেখে কর্তব্যশীল হয়ে উঠেছিলেন।        

কিন্তু এই আবেগী অভিভাষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন আগেও ছিল। বিশেষত যখন সুমনবাবু ছত্রধর মাহাতোর নির্বাচনের প্রচার করার ইচ্ছা থাকলেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকার জন্য প্রচার করতে পারলেন না বলে দুঃখ করেছিলেন। টুইট করেছিলেন। ভুল হয়েছে বলে মেনে নিয়েছিলেন। অনেকে তা তির্যক ভাবে দেখেছিলেন এবং তাঁর প্রতি কদর্য ভাষা ব্যবহার করেছিলেন।  এবার বোধ হয় তিনি ভুল শুধরে নিলেন। ছত্রধরের বেলায় না পারলেও মমতা ব্যানার্জীর বেলায় তিনি ভুল শুধরে নিতে পিছপা হলেন না। একক ভাবেই মমতা ব্যানর্জীর দক্ষতা ও সততা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন জনগণের সামনে। প্রমান করতে চাইলেন যে মমতা ব্যানার্জী গঙ্গাজলের মত পবিত্র এবং তিনি রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান আতঙ্কবাদীদের আটকানোর রাখেন।

কিন্তু রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে, নীতি নির্ধারণ ও রুপায়নের ক্ষেত্রে কোন কোন খামতি ও সংযোগ থাকলে জালিয়াতরা, আতঙ্কবাদীরা,  বিচ্ছিন্নতাবাদীরা, মৌলবাদীরা ও দেশদ্রোহীরা রাজ্যে নিশ্চিত ভাবে জমি পেয়ে যায় তা একবার ও উল্লেখ করলেন না। যে যে মডিউল গুলির মাধ্যমে পরিবর্তনের পালা সূচীত হয়েছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজ্য পরিচালনার জন্য যে যে মডিউলগুলি  নেওয়া হয়েছে তার অনিবার্য পরিণতিই যে আর্থিক দুর্নীতি, অপশাসন, মানবাধিকারের চরম অবমাননা, সাম্প্রদায়িক হানাহানি এবং সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে তা বললেন না। তিনি এও বললেন না যে রাজ্যের এই শোচনীয় পরিণতির দায় মমতা ব্যানার্জীর উপরই বর্তায় কেননা তিনিই রাজ্যের প্রধান পরিকল্পক, পরিচালক, নীতি নির্ধারক এবং রূপায়ক। কোন ভাবেই মমতা ব্যানার্জী এই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
 সুমন বাবু বোধহয় এসবই জানেন এবং জেনে বুঝেই যা বলার বলেছেন। লোকে যতটাই তাকে ভাবুক, খেয়ালী বা আবেগ প্রবন বলুন না কেন তিন কিন্তু যথেষ্ট কান্ডজ্ঞানী দ্রষ্টা। হয়ত তিনি লক্ষ্য করছেন যে সারদা পরবর্তী পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মডিউল “সন্ত্রাসবাদ” যে ভাবে প্রকাশ্যে এসে গেছে তাতে মুসলিম সমাজের দিকে আঙুল উঠবে। মুসলিম সমাজ বিভাজিত হয়ে পড়বে। তারা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে জড়িয়ে পড়বে। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সম্ভাবনা প্রকট হবে। মুসলিমদের সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের দূরত্ব বাড়বে। লাশ পড়বে। গ্রাম জ্বলবে। মানুষ ভিটেমাটি ছাড়া হবে এবং এই অসহায়, আতঙ্কিত, নিরন্ন মুসলিমদের বরাভয় দেবার জন্য বিজেপি ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই মহতি রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় বিজেপি তার আজন্ম মুসলিম বিদ্বেষী দুর্নাম খানিকটা ঝেড়ে ফেলতে পারবে। ২৮% মুসলিম জনগণের ১০% নিজেদের পকেটে পুরতে পারলেই যথেষ্ট। শাসক শ্রেণির মক ফাইটের জন্য কিছু সাধারণ মানুষের কুর্বানি হলেও উজ্জ্বল ভারতের জন্য, স্বচ্ছ  ভারতের জন্য কেল্লা ফতে।

কিন্তু এই মডিউলের সবথেকে বড় ঝুঁকি হল মমতাদেবীর জড়িয়ে পড়া। কারণ পশ্চিমবঙ্গের তিনিই বর্তমান প্রযোজক এবং পরিচালক। যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও তার ঘাড়ে। পশ্চিমবঙ্গের আপামর জনসাধারণ বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে রাখা মানুষগুলি যদি শাসক শ্রেনীর এই মক ফাইটের কৌশল বুঝে ফেলে তবে বিপদ! ফলে গোলক ধাঁধার বাতাবরণ তৈরি করার জন্য এক সম্মোহনী কলাকার। যিনি সুরঝংকারে মানুষকে বশীভূত করতে পারেন। দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে পারেন এবং সেই ফাঁকে সগোত্রীয় সহযাত্রীকে কলঙ্কের পঙ্ক থেকে উদ্ধার করতে পারেন। মাননীয় কবীর সুমনের এই সুভাষিত সুকথন আসলে “মমতা ব্যানার্জী   বাচাও” অভিযানের নবতম সংযোজন।                           

Article 13

$
0
0
কুলঙ্গারদের হাতে মতুয়া সমাজের ভার !

  
বেছন ধান ভাল না হলে বতরের ফলনে যে তার প্রভাব পড়ে তা ঠাকুরনগরের ঠাকুরবংশের বর্তমান প্রজন্মকে দেখলেই বোঝা যায়। আজ খবরে প্রকাশ নিজের মাতৃসমান জেঠিমাকে খুনের হুমকি দিয়েছেন মঞ্জুল পুত্র সুব্রত ঠাকুর। দুর্দান্ত! বাপকা বেটাই বটে! কিছুদিন আগে মঞ্জুল ঠাকুর যেমন দাদা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে খুনের হুমকি দিয়েছিলেন। মতুয়া মহাসংঘের বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরকে পুলিশ ডাকতে হয়েছিল। তেমনি সুব্রত ঠাকুর ও তার মদ্যপ চেলা চামুণ্ডাদের হুমকির জন্য সদ্য প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের স্ত্রী মমতা ঠাকুরকেও পুলিশ প্রহরার আশ্রয় নিতে হল। মহামতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের বংশের এ হেন কদর্য পরিণতি যে আপামর মতুয়া ভক্তদের বিভ্রান্ত করে তুলবে তার কোন সন্দেহ নেই। অনেকে আঘাত পাবেন তাদের প্রনম্য ঠাকুর বংশধরদের আত্মঘাতী প্রবণতা দেখে। কিন্তু ঠাকুর বংশের এই প্রশাখার বাড় বৃদ্ধি সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল তারা কিন্তু ওবাক হননি। কারণ তারা জানেন যে বিষবৃক্ষ থেকে বিষফলই পাওয়া যায়।

কদাচারের উৎসঃ  
ঠাকুরনগরের এই ছোপের উৎপত্তিই হয়েছে কদাচারের মাধ্যমে। মহামতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের বড়ছেলে শশিভূষণ থেকেই কদাচারের সূচনা। নানা কারণে গুরুচাঁদ ঠাকুর শশিভূষণকে ত্যাজ্যপুত্র করতে চেয়েছিলেন। শশিভূষণের বড় ছেলে প্রমথরঞ্জন ঠাকুর গুরুচাঁদের মতকে অগ্রাহ্য করেই জোদ্দার জমিদারদের দ্বারা পরিচালিত কংগ্রেস পার্টির সাথে সখ্যতা শুরু করেন। গুরুচাঁদ চেয়েছিলেন স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল যেখানে সংখ্যা অনুপাতে ভাগিদারী পাওয়া যাবে। শিক্ষা, চাকরী, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে ক্রমশ উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে পারবে বাংলার দলিত, নিষ্পেষিত জাতি সমূহ। কিন্তু ১৯৩৭ সালে গুরু চাঁদের মৃত্যু হলে প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে এক ঝাঁক নেতা কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হয়। অন্যদিকে মুকুন্দ বিহারী মল্লিকের নেতৃত্বে একদল নেতা গুরুচাঁদের দেখানো পথেই ব্রিটিশ শাসনের প্রতি নৈতিক সমর্থন ধরে রাখেন। প্রমথ রঞ্জন চেয়েছিলেন সকল ক্ষমতা তার হাতেই নিয়ন্ত্রিত হবে তাই তিনি মুকুন্দ বিহারী মল্লিককে ও সহ্য করতে পারেন নি, পরবর্তী কালে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলকেও সহ্য করতে পারতেন না। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিডিউলড কাস্ট লীগ। যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল হন সভাপতি। এই বছরেরই প্রতিষ্ঠিত হয় সর্ব ভারতীয় তপশিলি জাতি ফেডারেশনের বঙ্গীয় শাখা। যোগ্যতা অনুসারে এই বৃত্তর সংগঠনের সভাপতিও হন মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল। ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জে আয়োজিত প্রাদেশিক সম্মেলনে মহাপ্রাণ যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডল ঘোষণা করেন যে এই ফেডারেশনের দায়িত্ব হবে তপশিলি জাতিগুলির জন্য পৃথক রাজনৈতিক আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তপশিলি জাতির নেতাদের মধ্যে বিভাজনের ফলে বাংলার ৩০টি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে ২৪টিই কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা জয় লাভ করে। প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর নির্দল হিসেবে জয়লাভ করলেও ক্ষমতার লোভে কংগ্রেসে যোগদান করেন।

আম্বেদকর বিরোধী শিবিরে প্রমথ রঞ্জনঃ
স্বাধীন ভারতের স্বতন্ত্র সংবিধান রচনা করার জন্য গণপরিষদ গঠনের ঘোষণা করা হলে সারা ভারত তপশিলি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ডঃ বি আর আম্বেদকরকে গণপরিষদে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুকুন্দবিহারী মল্লিক এই গণপরিষদে নির্দল প্রার্থী হতে চাইলেও পরে তিনি আম্বেদকরকে ভোট দিতে মনস্থির করেন। কিন্তু কংগ্রেস পার্টির ষড়যন্ত্রে সামিল হয়ে পি আর ঠাকুর ডঃ বি আর আম্বেদকরের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান। যদিও যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডলের উদ্যোগে ও প্রথিতযশা নেতা নেতৃদের  অক্লান্ত পরিশ্রমে কংগ্রেস ও পি আর ঠাকুর আম্বেদকরের গণপরিষদে যাওয়া আটকাতে পারেননি।

পাপেট-পুতুল এবং পি আর ঠাকুরঃ
জাতীয় ক্ষেত্রে ডঃ আম্বেদকরকে আটকানোর জন্য কংগ্রেস তৈরি করেছিল জগজীবন রাম নামে এক তাবেদার এবং বাংলায় যোগেন্দ্র নাথ মণ্ডলকে আটকানোর জন্য ব্যবহার করেছিল পি আর ঠাকুরকে। জাতীয় নির্বাচনে পি আর ঠাকুর কয়েকবার নির্বাচিত হলেও জনগণের জন্য তিনি প্রায় কিছুই করেননি। কিছু করার দক্ষতাও তার ছিলনা। মূলত তিনি ছিলেন কংগ্রেসের হাতের পাপেট। দম দেওয়া পুতুল। ফলে আচিরেই কংগ্রেস তাকে প্রত্যাখ্যান করে। এর পরে বার কয়েক নির্বাচনে দাঁড়ালেও তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তার নিজের মানুষেরাই তাকে অপাংক্তেয় হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ বয়সে শুধু পদধূলি বিতরণ করে ভক্তের দান-দক্ষিণা গ্রহণ করা ছাড়া তার কোন উপায় ছিলনা।

বিষবৃক্ষের ফলঃ  
এই পি আর ঠাকুরের বড় ছেলে সদ্য প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। মতুয়া মহাসংঘের প্রাক্তন সভাপতি এবং বনগাঁ কেন্দ্রের নির্বাচিত সাংসদ। সামাজিক উন্নয়নে তাঁর অবদান কতটুকু ছিল তা অণুবীক্ষণেও দেখা যাবেনা। পি আর ঠাকুরের ছোট ছেলে মঞ্জুল ঠাকুর। বর্তমান তৃণমূল সরকারের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী।  তাঁর বেড়ে ওঠার কাহিনী একালের রগবাজদেরও লজ্জা দেবে। গুরুচাঁদের পথ ও মতুয়া দর্শনের সাথে তাঁর কোন যোগাযোগ নেই। কোন কালে ছিলও না।  নিরীহ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের প্রতি তাঁর অভব্য আচরণ ঠাকুর বাড়ির ঘোরতর সংকটের মূল কারণ। মূলত মতুয়া মহাসংঘের পদ নিয়ে এদের মারামারি। কপিল ঠাকুর জীবিত কালে ছিলেন মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি। তখন মঞ্জুল ঠাকুর ছিলেন সহসভাপতি আর তাঁর পুত্র সুব্রত ঠাকুর সম্পাদক। এখন মঞ্জুল ঠাকুর সভাপতি এবং তাঁর ছেলে সুব্রত ঠাকুর সম্পাদক। মোদ্দা কথায় মতুয়া মহাসংঘ এঁদের পারিবারিক রাজতন্ত্র। এই রাজতন্ত্রের সর্বোচ্চ পদে থাকতে পারলে আজন্ম গোলাম অসংখ্য মতুয়া ভক্তদের প্রণামির টাকায় পেট ভরানো যায়। মতুয়া শক্তি  দেখিয়ে রাজনীতিতে কল্কে পাওয়া যায় এবং নির্বাচিত হতে পারলে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া যায় বিষ বৃক্ষের ফল।    

সুব্রত ঠাকুর যথার্থই বাপ কা বেটা !!  

মঞ্জুল ঠাকুরের ছেলে এই সুব্রত ঠাকুর। তৃণমূলের পঞ্চায়েত স্তরের নেতা। কিছুদিন আগে ফেশবুকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য বিজ্ঞাপন দেন। পরবর্তী কালে জানা যায় যে তৃণমূল দল তাঁর জেঠিমা মমতা ঠাকুরকে বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে মননয়ন দিচ্ছে। এ জন্য বেজায় চটেছেন সুব্রত। আরো খবর পাওয়া যায় যে তিনি গোপনে গোপনে বিজেপির সাথে যোগাযোগ করছেন এবং সেই কারণেই তৃণমূলের পদ ছাড়তে মনস্থির করছেন। কিন্তু সেখানেও বাঁধ সেধেছে কেডি বিশ্বাস। কারণ কেডি বিশ্বাস পূর্বে এই কেন্দ্র থেকেই বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন। তাই সুব্রত বিষ ছড়াতে শুরু করেছেন।  আজন্ম বেড়ে ওঠা হিংসা প্রতিহিংসার কাদা ছড়াচ্ছেন। মাতৃসম জেঠিমাকে মাতাল বন্ধুদের দিয়ে খুনের হুমকি দিচ্ছেন। 

ধিক্কার জানাই তাঁর এই অভব্যতার। ধিক্কার জানাই তাদের পারিবারিক সংস্কৃতির এই নিম্নগামী প্রবণতাকে। সাবধান হতে আহ্বান করি সমস্ত মতুয়া ভক্তদের। কারণ এই স্খলিত পরিবারের কাছ থেকে মতুয়াদের পাওয়ার কিছু নেই। এরা শুধু নিতে শিখেছে, দিতে শেখেনি। তাই সাধু সাবধান...।।     

উদারীকরণ গণতন্ত্রের সবথেকে বড় বিপদঃ

$
0
0

বাজারি অর্থনীতির হাত ধরে গোটা বিশ্ব এখন কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের হাতের মুঠোর মধ্যে এসে পড়েছে। অর্থাৎ এই মুষ্টিমেয় মানুষের ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপরই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে গোটা বিশ্বের মানুষের ভবিষ্যৎ। এরাই নিয়ন্ত্রন করছে রাষ্ট্র। এরাই লালন-পালন ও ধ্বংসের সর্বময় কর্তা হয়ে উঠেছে। এরাই চালক, এরাই নিয়ন্ত্রক। এদের মর্জির উপরই নির্ভর করেই হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির উত্থান ও পতন। অর্থাৎ আর্থিক সংস্কারের ও উদারীকরণের এই বাজারমুখী প্রবণতা গণতন্ত্রকেই শিকেয় তুলে ছাড়ছে। মানুষের হাতের সম্পদ বাজারপ্রভুদের চকচকে মোড়কে পাইকেরি হারে বিক্রি হচ্ছে ভুবনডাঙার খোলা হাটে।

উদারনৈতিক এই বাজারি দর্শনই গণতন্ত্রের এখন সবথেকে বড় বিপদ। বিগত কয়েক দশক ধরে সর্বময় প্রভুদের এই বাজারি দর্শন ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রকে পিষে ফেলে কায়েমীতন্ত্রে পরিণত করে ফেলেছে। এতে পুঁজির বাড়বাড়ন্ত হলেও গণতন্ত্রের যে আসল ভিত্তি ও উপভোক্তা “জনগণ” তারাই অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতি গণতন্ত্রের অন্যতম পীঠস্থান আমেরিকার ১৮০০টি পলিসির উপর একটি অনন্য গবেষণার থেকে এমনি তথ্য পাওয়া গেছে যে শীঘ্রই অ্যামেরিকার গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে কায়েমীতন্ত্র শুরু হবে। ১৯৮১ থেকে ২০০২ সংগৃহীত এই তথ্যগুলি থেকে জানা যাচ্ছে যে অ্যামেরিকার কতিপয় সংগঠিত এলিট সম্প্রদায়ের লাভালাভের ভিত্তিতেই সেখানকার সরকারি পলিসিগুলি নির্ধারণ করা হয় যেখানে বিপুল জনসংখ্যার কোন প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। গবেষক মার্টিন ও বেঞ্জামিন এই রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে এই সময়ের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি বা ডেমোক্রেটিক পার্টি যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন এই কতিপয় এলিট সমাজই রাষ্ট্রের ৯০শতাংশ পলিসির নিয়ন্ত্রক। গবেষণা পত্রের মূল্যায়নে তাই তারা অ্যামেরিকায় গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
মুষ্টিমেয় বিত্তশালীর হাতে এভাবে ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হওয়ার কারণে ব্যাপক মানুষের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল অকুপাই ওয়াল ষ্ট্রীটের আন্দোলনের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের ভাগিদারী যে ভাবে সংকুচিত হয়েছে এবং সমস্ত ক্ষমতা ও সম্পদ যেভাবে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে অকুপাই ওয়াল ষ্ট্রীটের আন্দোলন তার প্রতি অনাস্থাই ব্যক্ত করেছিল। এই অনাস্থার তীব্র প্রতিবাদ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন মিনিস্টেরিয়াল কনফারেন্সকেও প্রভাবিত করেছিল। আন্দোলনকর্মীরা সহস্র বাঁধা অতিক্রম করে বালিতে গিয়েও বাজার প্রভূদের তীব্র ধিক্কার জানিয়েছিল।

যে পুঁজিবাদ বা উদারীকরণের নীতির ফলে অ্যামেরিকার গণতন্ত্র আজ খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে এবং যে মুহূর্তে অ্যামেরিকার জনগণ গণতন্ত্রের রক্ষার জন্য চিন্তিত ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতবর্ষকে ভূবনডাঙার পাইকেরি বাজারে তুলে দেবার জন্য তুরিভেরি বাজিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি। সমীকরণ সেই একটিই। রাজনীতিতে ভারতীয় বিত্তশালীদের প্রভাব বিস্তার করা। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্য দিয়ে বাজারের উপযুক্ত পলিসি তৈরি করা এবং জনগণের প্রভাবকে সংকুচিত করে সমস্ত সম্পদের উপর নিজেদের দখলদারী প্রতিষ্ঠিত করা। ইতিমধ্যেই রিলায়েন্স সহ অন্যান্য বাজারপ্রভূদের সাথে তার যে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং যে ভাবে বিশ্ববাজারিরা ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেছে তাতে অচিরেই ভারতবর্ষে অ্যামেরিকা সিন্ড্রোম তৈরি হবে। পণ্যমূল্যে নির্ধারিত হবে ভারতীয় মূল্যবোধ। আর এই মূল্যবোধের নিরিখেই “শাইনিং ইন্ডিয়া”র রূপান্তর ঘটবে “স্বচ্ছ ভারতে”।

জেহাদের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে মালালার দীপ্ত আভা

$
0
0

পেশোয়ারের সৈনিক স্কুলে ঢুকে নির্বিচারে গুলি করে নিস্পাপ শিশুদের হত্যা করার পর তেহরিক–ই-তালিবান মুখে যা খুশি স্বীকার করুক না কেন আসলে তারা যে মালালার উদাত্ত আহ্বানে এবং সামাজিক পুনর্গঠনের কর্মসূচীতে ভয় পেয়ে গেছে তার নানা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ১০ই সেপ্টেম্বর নোবেল পুরস্কার ভাষণে মালালা উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিল,
“ প্রিয় বোন এবং ভাইয়েরা... কেন আমারা সেই দেশগুলিকে শক্তিশালী বলি যারা যুদ্ধে বলশালী কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠায় দুর্বল?  যে হাতে বন্দুক তুলে দেওয়া এত সহজ সেই হাতে বই তুলে দেওয়া এত কঠিন কেন?
আমরা এখন আধুনিক যুগে বাস করছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। আমরা ৪৫ বছর আগে চাঁদে পৌঁছে গেছি এবং তাড়াতাড়িই মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করতে পারব। তারপর এই ২১ শতকে অবশ্যই আমরা প্রত্যেক শিশুকে উৎকর্ষ মূলক শিক্ষা দিতে সক্ষম হব।
 প্রিয় বোন এবং ভাইয়েরা, সহকর্মী শিশুরা, আমাদের কাজ করতে হবে...ওপেক্ষা করলে চলবে না। শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ বা আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ নয়, আমাদের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমি, তুমি আমরা, এটাই আমাদের কর্তব্য।
আমরা যেন সেই প্রথম প্রজন্ম হোই যারা শেষ শূন্য শ্রেণিকক্ষ, নষ্ট শৈশব এবং সম্ভাবনার জঞ্জাল দেখার সিদ্ধান্ত নিই। এটা যেন শেষের দিন হয় যখন একটি মেয়ে একটি ছেলে খারখানার ভিতরে তার শৈশব অতিবাহিত করে। এটা যেন শেষের দিন হয় যখন একটি মেয়ে বাল্যবিবাহের জন্য বাধ্য হয়। এটা যেন শেষের দিন হয় যখন একটি শিশু যুদ্ধে প্রাণ হারায়। এটা যেন শেষের দিন হয় যেন আমরা একটি শিশুকে বিদ্যালয়ের বাইরে দেখি। এই পরিস্থিতি যেন আমাদের সাথে সাথেই শেষ হয়। এই শেষের শুরু হোক... এক সাথে...আজ...এখানেই...এখনি। এই শেষ লগ্নের এখনই শুরু হোক”।  Nobel Lecture by Malala Yousafzai, Oslo, 10 December 2014. 
এর ঠিক কদিন পরেই গত ১৬ই ডিসেম্বর সংঘটিত হয় এই নারকীয় হত্যালীলা। পাকিস্তানে সদ্য গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদী দল তেহরিক–ই-তালিবান স্বীকার করে যে, পাকিস্তানী সৈনিকদের শিক্ষা দিতে এই নিরপরাধ ১৩২ জন  শিশু, ১০ জন শিক্ষক এবং ৩জন পাকিস্তানী সেনা সহ ১৪৫ জন মানুষের রক্ত স্নানের মাধ্যমে তারা ইসলামের পবিত্রতা রক্ষা করেছে। একই সঙ্গে পালন করেছে জেহাদী  ধর্ম।  পৈশাচিক হত্যার দায় এভাবেই স্বীকার করে নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে তেহরিক –ই-তালিবান এর সর্বেসর্বা ‘ফয়জল হায়াত’ ওরফে ‘মোল্লা  ফয়জুল্লা’  বা ‘রেডিও মোল্লা’।
এখানে বলে রাখি যে, এই ‘মোল্লা  ফয়জুল্লা’  বা ‘রেডিও মোল্লা’ গত ২০১২ সালে মালালাকে হত্যা করার জন্য শরিয়তি ফরমান জারি করেছিল। মালালা গুলি বিদ্ধ হলে সারা দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছিল প্রার্থনা। মোমবাতির পবিত্র আলোকে মিলিত হয়েছি সারা বিশ্ব। একটি অন্বেষী প্রাণের করুণ আকুতি মানব মিলনের এক মহাক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল সেদিন। মহামানবের অনুভূতি, অবধ্য প্রাণশক্তি, অদম্য সাহসিকতা নিয়ে মালালা বেঁচে ওঠে। মোল্লাতান্ত্রিক কালাকানুন, আইএসআইএস এর ঘোষিত “লাভ জেহাদের” রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই চালিয়ে যেতে থাকে তার প্রগতিশীল কর্মধারা। বিদগ্ধ মনন ও দীপ্ত আভাতেই নোবেল পুরস্কারের তালিকায় স্থান করে নেয় মালালা। নোবেল পুরস্কারের সমস্ত অর্থ মালালা ফাউন্ডেশন দান করে তার মাতৃভূমি পাকিস্তানেই শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলার সংকল্প গ্রহণ করে।  অশিক্ষা, শিশুশ্রম, অন্ধবিশ্বাস, বাল্যবিবাহ, যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে নিরন্তর কাজ করে বিশ্বের সমস্ত শিশুকে তাদের কাঙ্ক্ষিত মার্গে পৌঁছে দেবার মহান ব্রত ধ্বনিত হয় তার কণ্ঠে।
সম্ভবতএখানেইরেডিওমোল্লাদেরবিপদ।তারামোল্লাপন্থী, গোড়া, সুড়ঙ্গেরজীব। 
আধুনিকবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাসপ্রগতিতাদেরনীতিরপরিপন্থী।তারাবিশ্বাসকরেবাল্যবিবাহে।বহুবিবাহেরমাধ্যমেনেকীবাপুণ্যঅর্জনকরাযায়বলেতারামনেকরে।তারামনেকরেযেনারীরচোখ, ঠোট, চিবুকপরপুরুষকেকামনারআগুনেদগ্ধকরতেপারেতাইগোটানারীশরীরকেবোরখার  অন্তরালেলুকিয়েরাখাইতাদেরফরমান।নারীস্বাধীনতা, নারীশিক্ষাএবংনারীরস্বশক্তিকরণতাদেরকাছেঅবান্তরবরংএগুলিকেগুনাহবলেমনেকরেএবংএইগুনাহগারদেরকাফেরহিসেবেহত্যাকরতেপারলেইতাদেরজান্নাতপ্রাপ্তিনিশ্চিতহয়।
কিন্তু মালালার অদম্য কর্মকাণ্ডে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে এই সুড়ঙ্গ জীবীরা।  জনপুঞ্জের বিপুল সমর্থন পাচ্ছে মালালা। আর সেই কারণেই ধর্ম যুদ্ধ, জেহাদ বা লাভ জেহাদের ভিত ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। তাই যে শিশুদের নিয়ে মালালা এক কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে চায় সেই শিশুদেরই টার্গেট করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে জল্লাদেরা। সংঘটিত করেছে এই পৈশাচিক শিশুমেধ।  
অত্যন্ত মর্মবেদনার সাথে জানাচ্ছি যে, এই যদি জেহাদ বা ধর্মযুদ্ধের নমুনা হয়,  নিরপরাধ শিশুদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে যদি সেই ধর্মের বিজয় উল্লাস ঘোষিত হয় তবে নিঃসন্দেহে এটা শয়তানের ধর্ম, পিশাচের ধর্ম, নরখাদকদের ধর্ম। আর কোন ফরমান যদি এই হত্যালীলা সংঘটিত করার জন্য উৎসাহ জোগায় নির্দ্বিধায় তা শয়তানী ফরমান।  কোন ভাবেই এই পথ ইসলাম বা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ হতে পারেনা, কোন ভাবেই এই কদর্যত পন্থায় বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মালালা এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য নিন্দা প্রকাশ করেছে। আমরাও এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাই। 

Nobel Lecture by Malala Yousafzai, Oslo, 10 December 2014.

$
0
0
Nobel Lecture
Nobel Lecture by Malala Yousafzai, Oslo, 10 December 2014.
Bismillah hir rahman ir rahim.
In the name of God, the most merciful, the most beneficent.

Your Majesties, Your royal highnesses, distinguished members of the Norweigan Nobel Committee,
Dear sisters and brothers, today is a day of great happiness for me. I am humbled that the Nobel Committee has selected me for this precious award.
Thank you to everyone for your continued support and love. Thank you for the letters and cards that I still receive from all around the world. Your kind and encouraging words strengthens and inspires me.
I would like to thank my parents for their unconditional love. Thank you to my father for not clipping my wings and for letting me fly. Thank you to my mother for inspiring me to be patient and to always speak the truth- which we strongly believe is the true message of Islam.  And also thank you to all my wonderful teachers, who inspired me to believe in myself and be brave.
I am proud, well in fact, I am very proud to be the first Pashtun, the first Pakistani, and the youngest person to receive this award.  Along with that, along with that, I am pretty certain that I am also the first recipient of the Nobel Peace Prize who still fights with her younger brothers. I want there to be peace everywhere, but my brothers and I are still working on that.
I am also honoured to receive this award together with Kailash Satyarthi, who has been a champion for children's rights for a long time. Twice as long, in fact, than I have been alive. I am proud that we can work together, we can work together and show the world that an Indian and a Pakistani, they can work together and achieve their goals of children's rights.
Dear brothers and sisters, I was named after the inspirational Malalai of Maiwand who is the Pashtun Joan of Arc. The word Malala means grief stricken", sad", but in order to lend some happiness to it, my grandfather would always call me Malala – The happiest girl in the world" and today I am very happy that we are together fighting for an important cause.
This award is not just for me. It is for those forgotten children who want education. It is for those frightened children who want peace. It is for those voiceless children who want change.
I am here to stand up for their rights, to raise their voice… it is not time to pity them. It is not time to pity them. It is time to take action so it becomes the last time, the last time, so it becomes the last time that we see a child deprived of education.
I have found that people describe me in many different ways.
Some people call me the girl who was shot by the Taliban.
And some, the girl who fought for her rights.
Some people, call me a "Nobel Laureate" now.
However, my brothers still call me that annoying bossy sister. As far as I know, I am just a committed and even stubborn person who wants to see every child getting quality education, who wants to see women having equal rights and who wants peace in every corner of the world.
Education is one of the blessings of life—and one of its necessities. That has been my experience during the 17 years of my life. In my paradise home, Swat, I always loved learning and discovering new things. I remember when my friends and I would decorate our hands with henna on special occasions. And instead of drawing flowers and patterns we would paint our hands with mathematical formulas and equations.
We had a thirst for education, we had a thirst for education because our future was right there in that classroom. We would sit and learn and read together. We loved to wear neat and tidy school uniforms and we would sit there with big dreams in our eyes. We wanted to make our parents proud and prove that we could also excel in our studies and achieve those goals, which some people think only boys can.
But things did not remain the same. When I was in Swat, which was a place of tourism and beauty, suddenly changed into a place of terrorism. I was just ten that more than 400 schools were destroyed. Women were flogged. People were killed. And our beautiful dreams turned into nightmares.
Education went from being a right to being a crime.
Girls were stopped from going to school.
When my world suddenly changed, my priorities changed too.
I had two options. One was to remain silent and wait to be killed. And the second was to speak up and then be killed.
I chose the second one. I decided to speak up.
We could not just stand by and see those injustices of the terrorists denying our rights, ruthlessly killing people and misusing the name of Islam. We decided to raise our voice and tell them: Have you not learnt, have you not learnt that in the Holy Quran Allah says: if you kill one person it is as if you kill the whole humanity?
Do you not know that Mohammad, peace be upon him, the prophet of mercy, he says, do not harm yourself or others". 
And do you not know that the very first word of the Holy Quran is the word Iqra", which means read"?
The terrorists tried to stop us and attacked me and my friends who are here today, on our school bus in 2012, but neither their ideas nor their bullets could win.
We survived. And since that day, our voices have grown louder and louder.
I tell my story, not because it is unique, but because it is not.
It is the story of many girls.
Today, I tell their stories too. I have brought with me some of my sisters from Pakistan, from Nigeria and from Syria, who share this story. My brave sisters Shazia and Kainat who were also shot that day on our school bus. But they have not stopped learning. And my brave sister Kainat Soomro who went through severe abuse and extreme violence, even her brother was killed, but she did not succumb.
Also my sisters here, whom I have met during my Malala Fund campaign. My 16-year-old courageous sister, Mezon from Syria, who now lives in Jordan as refugee and goes from tent to tent encouraging girls and boys to learn. And my sister Amina, from the North of Nigeria, where Boko Haram threatens, and stops girls and even kidnaps girls, just for wanting to go to school.
Though I appear as one girl, though I appear as one girl, one person, who is 5 foot 2 inches tall, if you include my high heels. (It means I am 5 foot only) I am not a lone voice, I am not a lone voice, I am many.
I am Malala. But I am also Shazia.
I am Kainat.
I am Kainat Soomro.
I am Mezon.
I am Amina. I am those 66 million girls who are deprived of education. And today I am not raising my voice, it is the voice of those 66 million girls.
Sometimes people like to ask me why should girls go to school, why is it important for them. But I think the more important question is why shouldn't they, why shouldn't they have this right to go to school.
Dear sisters and brothers, today, in half of the world, we see rapid progress and development. However, there are many countries where millions still suffer from the very old problems of war, poverty, and injustice.
We still see conflicts in which innocent people lose their lives and children become orphans. We see many people becoming refugees in Syria, Gaza and Iraq. In Afghanistan, we see families being killed in suicide attacks and bomb blasts.
Many children in Africa do not have access to education because of poverty.  And as I said, we still see, we still see girls who have no freedom to go to school in the north of Nigeria.
Many children in countries like Pakistan and India, as Kailash Satyarthi mentioned, many children, especially in India and Pakistan are deprived of their right to education because of social taboos, or they have been forced into child marriage or into child labour.
One of my very good school friends, the same age as me, who had always been a bold and confident girl, dreamed of becoming a doctor. But her dream remained a dream. At the age of 12, she was forced to get married. And then soon she had a son, she had a child when she herself was still a child – only 14. I know that she could have been a very good doctor.
But she couldn't ... because she was a girl.
Her story is why I dedicate the Nobel Peace Prize money to the Malala Fund, to help give girls quality education, everywhere, anywhere in the world and to raise their voices. The first place this funding will go to is where my heart is, to build schools in Pakistan—especially in my home of Swat and Shangla.
In my own village, there is still no secondary school for girls. And it is my wish and my commitment, and now my challenge to build one so that my friends and my sisters can go there to school and get quality education and to get this opportunity to fulfil their dreams.
This is where I will begin, but it is not where I will stop. I will continue this fight until I see every child, every child in school.
Dear brothers and sisters, great people, who brought change, like Martin Luther King and Nelson Mandela, Mother Teresa and Aung San Suu Kyi, once stood here on this stage. I hope the steps that Kailash Satyarthi and I have taken so far and will take on this journey will also bring change – lasting change.
My great hope is that this will be the last time, this will be the last time we must fight for education. Let's solve this once and for all.
We have already taken many steps. Now it is time to take a leap.
It is not time to tell the world leaders to realise how important education is - they already know it - their own children are in good schools. Now it is time to call them to take action for the rest of the world's children.
We ask the world leaders to unite and make education their top priority.
Fifteen years ago, the world leaders decided on a set of global goals, the Millennium Development Goals.  In the years that have followed, we have seen some progress. The number of children out of school has been halved, as Kailash Satyarthi said. However, the world focused only on primary education, and progress did not reach everyone.
In year 2015, representatives from all around the world will meet in the United Nations to set the next set of goals, the Sustainable Development Goals. This will set the world's ambition for the next generations.
The world can no longer accept, the world can no longer accept that basic education is enough.  Why do leaders accept that for children in developing countries, only basic literacy is sufficient, when their own children do homework in Algebra, Mathematics, Science and Physics?
Leaders must seize this opportunity to guarantee a free, quality, primary and secondary education for every child.
Some will say this is impractical, or too expensive, or too hard.  Or maybe even impossible.  But it is time the world thinks bigger.
Dear sisters and brothers, the so-called world of adults may understand it, but we children don't. Why is it that countries which we call strong" are so powerful in creating wars but are so weak in bringing peace? Why is it that giving guns is so easy but giving books is so hard? Why is it, why is it that making tanks is so easy, but building schools is so hard?
We are living in the modern age and we believe that nothing is impossible. We have reached the moon 45 years ago and maybe will soon land on Mars. Then, in this 21st century, we must be able to give every child quality education.
Dear sisters and brothers, dear fellow children, we must work… not wait. Not just the politicians and the world leaders, we all need to contribute.  Me. You. We. It is our duty.
Let us become the first generation to decide to be the last , let us become the first generation that decides to be the last that sees empty classrooms, lost childhoods, and wasted potentials.
Let this be the last time that a girl or a boy spends their childhood in a factory.
Let this be the last time that a girl is forced into early child marriage.
Let this be the last time that a child loses life in war.
Let this be the last time that we see a child out of school.
Let this end with us.
Let's begin this ending ... together ... today ... right here, right now. Let's begin this ending now.

Thank you so much.

http://www.businessinsider.in/Watch-Malala-Yousafzais-Nobel-Peace-Prize-Speech-That-Has-Everyone-In-Awe/articleshow/45465332.cms

http://www.businessinsider.in/Malala-Just-Gave-A-Jaw-Dropping-Speech-To-Accept-Her-Nobel-Peace-Prize/articleshow/45459612.cms


ইতিহাসের আলোকে মোগলমারি বৌদ্ধবিহার : শরদিন্দু উদ্দীপন

$
0
0




প্রিয়দর্শীরাজাএমনবলছেনযে, আমিপথেপথেবটবৃক্ষরোপণকরেছি, তারাপশুমানুষকেছায়াদানকরুক।আম্রবাটিকাপ্রস্তুতকরেছিতারাসকলকেফলদানকরুক, আধক্রোশব্যবধানঅন্তরসরবরকুপখননকরেছিতারাসেইসকলস্থানেজলদানকরুক, আশ্রয়স্থাননির্মাণকরেছিতারামনুষ্যপশুদেরআশ্রয়দানকরুক (সম্রাটঅশোকের৭মশিলালিপি)
পশ্চিমমেদিনীপুরেরদাঁতনশহরেঅবস্থিতভট্টরকলেজথেকেকিলোমিটারদূরেঅবস্থিতশরশঙ্কাদীঘিটিদেখতেদেখতেকেনজানিপ্রিয়দর্শীরাজাসম্রাটঅশোকেরজনকল্যাণকারীএইশিলালেখটিরকথামনেপড়েগেল।এইশিলালেখস্তম্ভলিপিগুলিতেইতিনিব্যক্তকরেছিলেনতারজীবনেধর্মেরঅবস্থানকোথায়এবংতারস্বরূপকি।তিনিব্যাক্তকরেছিলেনযে, অহিংসা, জীবেরপ্রতিপরমমমত্ব, পিতামাতারপ্রতিকর্তব্য, সাধুদেরপ্রতিযথার্থ শ্রদ্ধাইতারধম্মদর্শনেরভিত্তিভূমি।সুনীতিকল্যাণইযারমূলাধার           
দীঘিটি১৪৭একরজমিরউপরবিস্তৃত।চৌদিকেসুউচ্চমাটিরবাঁধ।চারিদিকেউর্বরকৃষিক্ষেত্র।কিছুদূরদিয়েইপ্রবাহিতসুপন্নখাবাসুবর্ণরেখানদী।এমনএকটিজনহিতকরনিবিড়প্রকল্পেরনিরবঅবস্থানথেকেসহজেইঅনুমানকরাযায়যে, পুরাকালেএলাকাটিজনবহুলছিলএবংএইবৃহত্তরজলাধারথেকেনানাঅভিধায়মানুষউপকৃতহত।
শোনাযায়রাজাশশাঙ্কেরনামানুসারেএরনামহয়েছেশরশঙ্কাদীঘি।অর্থাৎঅনুমানকরাযেতেপারেযেএইপ্রাচীনজনপদেরাজাশশাঙ্কেরপদার্পণঘটেছিলএবংসেইকাহিনীইজনশ্রুতিতেমিশেআছে।প্রাসঙ্গিককারণেইএইজনপদেরাজাশশাঙ্কেরউপস্থিতিআলোচনাকরাযাবে।তবেআপাততআমাদেরমূলআলোচ্যবিষয়কোলকাতাবিশ্ববিদ্যালয়পুরাতত্ত্ববিভাগেরযৌথউদ্যোগেআবিষ্কৃতসখীসেনারঢিবিবামোগলমারিরবুদ্ধবিহার।
গত০৩/০৫/১৪তারিখেবৌদ্ধধর্মাঙ্কুরসভাকনসাসবেঙ্গলএরপক্ষথেকেভিক্ষু বোধিপাল, ভিক্ষু বিনয়শ্রী, হেমেন্দুবিকাশচৌধুরী, সদানন্দ বড়ুয়াশরদিন্দুউদ্দীপনসহযে৫জনপ্রতিনিধিএইপ্রত্নস্থলপরিদর্শনকরেনতাদেরক্ষেত্রাবলোকনেরভিত্তিতেএইপ্রতিবেদন।                  

মোগলমারিরঅবস্থানঃ  
শরশঙ্কাজলাধারের১০কিলমিটারেরমধ্যেঅবস্থিতসখীসেনারঢিবিযাবর্তমানেমোগলমারিনামেপরিচিতি লাভ করেছেবিদ্যাধরনামেঅনুরূপআরএকটিদীঘিআছেদাঁতনশহরেরসন্নিকটে মোগলমারি থেকে এই দীঘিটির দূরত্ব ৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এই প্রত্নস্থলের পূর্ব দিকে ৬০নং জাতীয়সড়কযারমধ্যদিয়ে উড়িষ্যাহয়েদক্ষিণভারতেরমধ্যেযোগাযোগব্যবস্থাবিস্তৃতহয়েছে। খড়গপুররেলষ্টেশন  থেকে দাঁতন শহরের দূরত্ব ৪৬ কিমি। আর পূর্বগামী জাতীয় সড়কের ১৮০ কিমি দূরে অবস্থিতকোলকাতাশহর।অর্থাৎঅবস্থানগতদিকদিয়েমোগলমারিবাসখীসেনারঢিবিপুরাকালেগ্রামপত্তনেরনিরিখেএকটিআদর্শগ্রাম।অধ্যাপকনীহাররঞ্জনরায়তারবাঙালীরইতিহাসগ্রন্থে (তৃতীয়অধ্যায়,দেশ-পরিচয়, পৃ৯১)উল্লেখকরেছেনযে, “যেসবগ্রামেরউল্লেখপ্রাচীনবাংলারলিপিগুলিতেপাওয়াযায়সেগুলিএকটুবিশ্লেষণকরিলেদেখাযায়, গ্রামেরপ্রান্তসীমায়রাজপথেরউল্লেখ; অনেকসময়এইপথগুলিএকবাএকাধিকদিকেগ্রামসীমাঅথবাকোনভূমিসীমানির্দেশকরে, এবংসেইহিসাবেইপথগুলিরউল্লেখএমনহওয়াটাইস্বাভাবিকযেপূর্বজনপদেরআদিজনেরাক্রমবিবর্তনক্রমবিকাশেরনানাধাপেজঙ্গলকেটেমাটিভরাটকরেনতুননতুনগ্রামনগরপত্তনকরেছিলএবংসেইগ্রামনগরেরসাথেসম্পর্কেরসেতুনির্মাণেরজন্যতৈরিহয়েছিলনানাপথ।এইসবস্থলপথগুলিযুক্তহয়েছিলনানাজলপথেরসাথেকেননানদীমাতৃকপূর্বজনপদেরগৌরবজনকঅধ্যায়েরসাথেজলপথেরঅবদানছিলসর্বাধিক।তৎকালীনতত্ত্ববোধিনীপত্রিকারসম্পাদকঅক্ষয়কুমারদত্ততাঁরপ্রাচীনহিন্দুদেরসমুদ্রযাত্রাবানিজ্যবিস্তার(প্রকাশক,রজনীনাথদত্ত) গ্রন্থেউল্লেখকরেনযে, লোহা আবিস্কারেরপূর্বেবাংলারসওদাগরেরাবেতেবাঁধাডিঙ্গায়চড়েঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধসমুদ্রেরফেনিলজলধিকেহেলায়পরাভূতকরেনানাদেশেব্যবসাকরতেযেতেন।সেকালেমিশর, রোম, ফিনিসিয়বিত্তশালীবণিকদেরমতইবাংলারসওদাগরেরামর্যাদাবানিজ্যবিস্তারেসমানক্ষমতাসম্পন্নছিলেন।  তিনিআরোউল্লেখকরেছেনযে, আর্যরাযখনমধ্যএশিয়াথেকেপাঞ্জাবেএসেউপস্থিতহয়, তখন সপ্তডিঙ্গামধুকরসমৃদ্ধবাংলারবনিকেরাসমুদ্রেরবন্দরেবন্দরেসুদৃশ্যপণ্যেরপশরাসাজিয়েবিদেশীক্রেতাদেরচিত্তবিনোদনকরতেন।মিশর, রোমফিনিসিয়বনিকেরাসেইসবপণ্যসংগ্রহকরেআরবসাগরনীলনদেরমধ্যদিয়েভূমধ্যসাগরেরপথেপ্রেরণকরতেন।এখানেউল্লেখকরাযেতেপারেযে, তাম্রলিপ্তবন্দরছিলপূর্বজনপদেরঅন্যতমসমুদ্রশায়িতবন্দরযারমধ্যদিয়েবাংলারগৌরবোজ্জ্বলদীপ্তিসমগ্রবিশ্বেপ্রতিফলিতহত।প্রাচীনতন্ডবুত্তি, দন্ডভুক্তিবাবর্তমানদাঁতনছিলতাম্রলিপ্তজনপদেরইঅন্তর্ভুক্তএকটিসমৃদ্ধঅঞ্চলযারউত্তরশিমূলিয়ামৌজায়অবস্থানকরেছেএইসখীসেনারডিবিবামোগলমারিবুদ্ধবিহার

নামকরণেরঅন্তরালে
কোলকাতাবিশ্ববিদ্যালয়পুরাতত্ত্ববিভাগেরযৌথউদ্যোগে২০০৩থেক২০১২সালপর্যন্তমোট  ৬টিপর্যায়েখননকার্যহয়েছে।নির্দ্বিধায়বলাযেতেপারেএইখননকার্যঅতিসামান্যবাআংশিক।এইখননকার্যেরথেকেপাওয়াযৎসামান্যপ্রত্নবিষয়কনমুনাথেকেএইবুদ্ধ বিহারটিরসম্পর্কেপ্রায়কিছুইবলাঅনুচিত।কিন্তুতাসত্ত্বেওখননকার্যশুরুহওয়ারসাথেসাথেমোগলমারিবুদ্ধবিহারনামেএটিপ্রচারেরআলোয়চলেআসে।বিশেষজ্ঞরাআইনআকবরিগ্রন্থেরবিবরণতুলেমেদিনীপুরজেলায়সংঘটিতসম্রাটআকবরেরসেনাপতিমুনিমখাঁসেনাধ্যক্ষটোডরমলেরবিরুদ্ধেকালাপাহাড়েরযুদ্ধেরবিবরণতুলেধরেন।অমরাবতীনামকঅঞ্চলেএইযুদ্ধেমোগলরানাকিসৈন্যশিবিরহিসেবেএইবুদ্ধবিহারটিব্যবহারকরে।কালাপাহাড়েরকাছেপ্রচুরমোগলসৈন্যমারাযায়বাকিসৈন্যরাপলায়নকরারসময়এইবুদ্ধবিহারটিধ্বংসকরেদেয়।প্রচুরমোগলসৈন্যমারাযাওয়ারকারণেইঅঞ্চলেরনামহয়েছেমোগলমারি।এরকমএকটিকল্পকাহিনীঅবতারণাকরাহচ্ছেঅবলীলাক্রমে।    
সখীসেনারকাহিনীটিহয়তোআরোপুরানো।আরোচিত্তাকর্ষক।শোনাযায়এইবুদ্ধবিহারটিছিলএকটিমহাবিদ্যালয়।বাংলারকোনএকরাজারমেয়েসখীসেনাএইমহাবিদ্যালয়েপড়াশুনাকরত।একটিভিন্ন  জাতেরছেলেরসাথে তারপ্রণয়হয়।তারা উভয়েবিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলেরাজাতাকঠোর ভাবেপ্রত্যাখ্যানকরেন। উপায়ন্তর না দেখে সখীসেনাএবংতারপ্রেমিকএইমহাবিদ্যাল্যেরকোনএকটিকুয়োতেঝাঁপদিয়েপ্রাণবিসর্জনকরে।সেইথেকেএইঅভিশপ্তমহাবিদ্যালয়টিএকটিপরিত্যক্তখন্ডহর।ভয়েকেউএখানেবাড়িকরারসাহসদেখায়নি।শুধুএলাকারতরুণেরামিলেঢিবিটিরএকেবারেমাথারউপরেসখীসেনাঢিবি, মোগলমারীতরুণসংঘপাঠাগারনামেএকটিসংঘগড়েতুলেছে।
সাম্প্রতিগবেষকেরামোগলমারীবুদ্ধবিহারেরপ্রাচীননামবান্দানহিসেবেউল্লেখকরেছেন।শব্দটিবর্তমানবন্দরশব্দেরসমগোত্রীয়।অর্থাৎএইঅঞ্চলটিজলপথেযোগাযোগেরএকটিঅন্যতমস্থানহিসেবেপরিচিতছিলতাএইঅঞ্চলেরভূপ্রকৃতিরগঠনদেখলেইঅনুমানকরাযায়। কাঁসাই, কপিশাবাকংসবতীনদীযেএকসময়এইঅঞ্চলেইসমুদ্রেরসাথেমিলিতহয়েছিলএখানকারভূমিরআন্তর্গঠনইসেইসাক্ষ্যবহনকরে।বর্তমানেকাঁসাইনদীবালিয়াপালেরকাছেগিয়েসমুদ্রেরসাথেমিলিতহয়েছে।

তাম্রলিপ্তেবুদ্ধবিহারনির্মাণেরপ্রয়াসঃ  
২৬১খ্রিষ্টপূর্বেকলিঙ্গযুদ্ধেরপরেসম্রাটঅশোকেরজীবনেএকআমূলপরিবর্তনসূচীতহয়।সম্রাটঅশোকেরনেতৃত্বেএবংতারগুরুভন্তেমোগলীপুত্ততিসসভাপতিত্বেপাটলিপুত্রেসংঘটিততৃতীয়বুদ্ধধম্মসম্মেলনধম্মবিজয়শোকাতুররাজাঘোষণাকরেন,  'অসুপুত্তপপৌত্তমেনবম্বিজয়মবিজিতব্যম আমারপুত্রএবংপ্রপৌত্ররাওকোননতুনরাজ্যযুদ্ধবিজয়করবেনাযদিবিজয়করতেহয়তাহবেধম্মবিজয়(১৩নংরকএডিক্ট)কলিঙ্গঅনুশাসনেতিনিলিখেছিলে, “সকলমানুষইআমারপুত্রতুল্য।আমারপুত্রেরাসকলমঙ্গলসুখেরঅধিকারীহোক।মানুষপশুরজন্যদাতব্যচিকিৎসালয়, বিশ্রামগৃহ, ঔষধিফলমূল, লতাগুল্মরোপণ, পানীয়জলকৃষিকার্যেরজন্যসরোবরখননশিক্ষারজন্যবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়বিশ্ববিদ্যালয়নির্মাণএবংএগুলিকেসুচারুরূপেপরিচালনারজন্যতৈরিকরলেনবুদ্ধবিহার।কালজয়ীধম্মপ্রচারকদেরপ্রেরিতকরলেনসমগ্রবিশ্বে।মানবমনেপ্রেম,ভক্তি, দয়া, করুণাস্থাপনকরেসিঞ্চিতকরলেনভগবানবুদ্ধেরচিরন্তনবাণীবসুধৈবকুটুম্ব।  দ্বিতীয়গিরিলিপিতেসমস্তসত্তারসার্বিককল্যাণেরজন্যউৎকীর্ণকরলেনতারধম্মানুভূতি।
সম্রাটঅশোকবাংলারবিভিন্নস্থানেঅসংখ্যবুদ্ধবিহারনির্মাণকরেছিলেতাপ্রমানপাওয়াযায়শিলালিপি, স্তম্ভলিপিগিরিলিপিগুলিথেকে।সাম্প্রতিডঃপরমআনন্দসাত্যজিতমৌর্যেরগবেষণায়উঠেএসেছেএরকমঅসংখ্যবুদ্ধবিহারেরনামতারাদবীকরছেনযেসমগ্রবাংলায়৭০টিরবেশিবুদ্ধবিহারপ্রতিষ্ঠাকরেছিলেন  সম্রাটঅশোক।তাম্রলিপ্তঅঞ্চলেই২২টিবুদ্ধবিহারেরহদিসপাওয়াযাচ্ছে।তাদেরকাজগুলিসমাপ্তহওয়ারপথে।খুবশীঘ্রইপ্রকাশিতহবেএইগ্রন্থ।সম্রাটঅশোককর্তৃকপ্রতিষ্ঠিতবুদ্ধবিহারেরযেতালিকাএইবন্ধুদ্বয়আমাকেপাঠিয়েছেননিম্নেসংযুক্তকরাহলঃ
১।রক্তমিত্তিকাঃ
মহানাবিকবুদ্ধগুপ্তেরলিপিথেকেজানাযায়তিনিছিলেনরক্তমিত্তিকাবারাঙামাটিরবাসিন্দা।হিউয়েন- সাংএরবিবরণীতেরক্তমিত্তিকারউল্লেখআছে।তিনিউল্লেখকরেছেনযে, কর্ণসুবর্ণেররাজধানীরসন্নিকটেছিলএইLo-to-mo-chi যেখানেগড়েতোলাহয়েছিলবৃহৎবৌদ্ধবিহার। প্রাচীন কাল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কাছে অবস্থিত রাঙামাটিও বুদ্ধধম্ম ও দর্শনের প্রাণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। সম্ভবত এই রক্তমিত্তিকা কর্ণসুবর্ণে বা বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত।      
২। আশ্রমবিহার
৩।রাজাবিহার
৪।পাত্তিকেরাবিহার
৫।ফুল্লহারীবিহার
৬।সোনাগারোবিহার
৭।শালিবর্ধকবিহার
৮।ত্রৈকূটবিহার
৯।বিক্রমপুরিবিহার
১০।ভরতপুরবিহার
১১।জগদল্লাবিহার
১২।সুবন্নবিহার
১৩।সোমাপুরিবিহার
১৪।বদনগড়িবিহার
১৫।বালান্দবিহার
১৬।কানসোনাবিহার(এটিইমুর্শিদাবাদেরকর্ণসুবর্ণ)
১৭।সিদ্ধেশ্বরবিহার(বাঁকুড়াজেলায়)
১৮।বুধপুরবিহার(পুরুলিয়াজেলারকালুহারঅঞ্চলে)
১৯।বর্গরামবিহার (বীরভূমজেলায়)
এইসবনামেরআড়ালেবর্তমানেরমোগলমারিআছেকিনেইবাকিনামেলুকিয়েআছে তাবলাদুষ্কর। স্তূপটিরসার্বিকখননকার্যসম্পূর্ণহলেএইবিভ্রমখানিকটাদূরহতেপারেবলেআমাদেরধারনা।তবেমোগলসৈন্যপলায়নকালেএইবুদ্ধবিহারটিধ্বংসকরেছে,এটাযেআরোপিতকাহিনীতাসহজেইবোঝা যায়।মোগলরাএইধ্বংসকার্যেকামানব্যবহারকরেথাকলেপ্রত্ননিদর্শনগুলিওযেগুঁড়িয়েযেতএটাবলারঅপেক্ষারাখেনা।কোদালশাবলহাতুড়ি, গাইতিরসাহায্যেএবংবেশকিছুদিনধরেযেএইধ্বংসকার্য চালানোহয়েছিলধ্বংসাবশেষেরনমুনাইতারপ্রমানইটেরইমারতগুলিকেগুঁড়িয়েদিয়েতারউপরদিয়েআলগামাটিছড়িয়েদেবারপ্রবনাতাথেকেধরাপড়েযেআক্রমণকারীবুদ্ধবিহারেরনামনিশানামাটিতেমিশিয়েদেবারজন্যকতটানিষ্ঠুরছিলেন? এইধ্বংসেরচরিত্রকেতুলনামূলকআলোচনারনিরিখেবিচারকরলেতক্ষশীলা, নালন্দা, বিক্রমশীলা, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়প্রভৃতিমহানবুদ্ধ বিহারগুলিরসাথেমিলপাওয়াযায়।পাওয়াযায়জিঘাংসাপ্রতিক্রিয়াশীলতারএকউন্মত্তইতিহাস।

ধ্বংসের নেপথ্য কারণ সমূহঃ    
রাজা শশাঙ্কের কাল পর্যন্ত প্রবুদ্ধ বঙ্গে ধম্ম ও দর্শনের মূলধারা ছিল “বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়”। সৃজন, নির্মাণ ও প্রকাশের নিবিড় ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছিল এক সমৃদ্ধ বাংলা। জৈন, বৌদ্ধ ও কৌম্য ধর্মগুলির মধ্যে ছিল পারম্পরিক সহাবস্থানের শৃঙ্খলা। এই বহু স্রোতবাহিত প্রাজ্ঞ বাংলায় বিভেদের বীজ প্রথম প্রথিত হয় পৌরাণিক যুগে। বুদ্ধের পঞ্চশীল ও অষ্টাঙ্গিক মার্গের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব সংগঠিত করার জন্য রচিত হয় পঞ্চানন তথা অষ্টবক্র শিবকাল্ট। তান্ডব, সংহার ও পুরাতনকে ধ্বংস  করে  নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান হয় শিবকাল্টের মধ্য দিয়েবাংলায় এই শিবকাল্টের পুষ্টি লাভ করে রাজা শশাঙ্কের পৃষ্ঠপোষকতায়।  
রাখালদাসবন্দ্যোপাধ্যায়বর্ণনাকরেছেনযেশশাঙ্কছিলেনগুপ্তরাজাদেরবংশধর।ইনি রাঙামাটিরসামন্তছিলেন।কালক্রমেগৌড়, রাঢ়, তাম্রলিপ্তথেকেশুরুকরেসমস্তবঙ্গদেশে তাররাজ্যবিস্তৃতহয়।৬০৬-খ্রিষ্টাব্দেরমধ্যেতিনিগৌড়েরস্বাধীনরাজাহিসেবেপ্রতিষ্ঠালাভকরেনএবংকর্ণসুবর্ণেনিজেররাজধানীপ্রতিষ্ঠাকরেন।এইসময়মৌখরীগুপ্তদেরসাথেকয়েকপুরুষধরেযুদ্ধচলতেথাকে।গৌড়মগধেরঅধিকারইএইদীর্ঘদ্বন্দ্বেরপ্রধানকারণ।গ্রহবর্মাযখনমৌখরীররাজাহনতখনদেবগুপ্তমালবেরসিংহাসনেআরোহণকরেন।গ্রহবর্মাথানেশ্বররাজপ্রভাকরবর্ধনেরকন্যাএবংরাজ্যবর্ধনহর্ষবর্ধনেরভগিনীরাজ্যশ্রীকেবিবাহকরেন।দেবগুপ্তমৌখরীরাজগ্রহবর্মারবিরুদ্ধেযুদ্ধেআগ্রসরহলেশশাঙ্কদেবগুপ্তেরপক্ষেযোগদানকরেন।এইযুদ্ধেশশাঙ্ক এবং দেবগুপ্ত গ্রহবর্মাকেহত্যাকরেনএবংরানীরাজ্যশ্রীকেবন্দীকরেকনৌজেনিয়েআসেনদেবগুপ্তএরপরথানেশ্বরেরদিকেঅগ্রসরহলেরাজ্যবর্ধনতাকেপরাজিতনিহতকরেন।রাজ্যবর্ধননিজভগিনীরশৃঙ্খলমোচনেরজন্যকনৌজের দিকেঅগ্রসরহলেশশাঙ্কতাকেবাঁধাদেন।রাজ্যবর্ধনএকদিকেসৎসাধুপ্রকৃতিরমানুষছিলেন।অন্যদিকেছিলেনপরাক্রমশালী।শশাঙ্কতারসাথেমধুরব্যবহারকরেমনেরসমস্তসন্দেহদূরকরেগৌড়েনিমন্ত্রণকরেপাঠানএবংরাজধানীতেনিয়েএসেনিরস্ত্রঅবস্থায়গোপনেহত্যাকরেন।সাময়িকভাবেকনৌজেরদখলআসেশশাঙ্কেরহাতেকিন্তুএইস্বল্পকালীনসময়েরমধ্যেইতিনিবুদ্ধেরস্মৃতিবিজড়িতসৌধগুলিধ্বংসকরতেশুরুকরেন।বানভট্টেরহর্ষচরিত, হিউএন-সাংএরবিবরণীএবংসমকালীনগ্রন্থমঞ্জুশ্রীমুলকল্পেশশাঙ্কেরএইবিদ্বেষকাহিনীরসমস্তঘটনালিখিতআছে।হিউএন-সাংএরবিবরণীথেকেপাওয়াযায়যে, রাজাশশাঙ্ককুশীনগরেরবুদ্ধবিহারথেকেসমস্তভিক্ষুদেরবেরকরেদিয়েছিলেন।বুদ্ধেরপদচিহ্নঅঙ্কিতপবিত্রপাথরগঙ্গারজলেনিক্ষেপকরেছিলেন, জিঘাংসায়উন্মত্তহয়েবুদ্ধগয়ারবোধিবৃক্ষকে  সমূলেউৎপাটন করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং বুদ্ধের মূর্তি ধ্বংস করে সেখানে শিবের মূর্তি স্থাপন করতেচেয়েছিলেনকিন্তু এই কাজে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বুদ্ধের মূর্তি ভাঙার সাহস পাননি।  তিনি একটি প্রাচীর  তুলে বুদ্ধ মূরতিকে আড়াল করে দেন।এরপরপাটলিপুত্র, কুশীনগর, কর্ণসুবর্ণ, রক্তমৃত্তিকাথেকেশুরুকরেতাম্রলিপ্তপর্যন্তসমস্তবুদ্ধবিহারগুলিধ্বংসকরারনির্দেশদেন শশাঙ্কএইগ্রন্থগুলিতেউল্লেখকরা হয়েছেযে, বুদ্ধবিহারগুলিধ্বংসকরারপরশশাঙ্কআতঙ্কগ্রস্তহয়েপড়েন।বিশেষতহর্ষবর্ধনথানেশ্বররাজহিসেবঅভিষিক্তহলেএইআতঙ্কএকবিভীষিকায়পরিণতহয়।হর্ষবর্ধনতাকেগৌড়ভুজঙ্গনামেঅভিহিতকরেন।তিনিপ্রতিজ্ঞাকরেন, ‘যেপর্যন্তএইগৌড়াধিপশশাঙ্ককেআমিহত্যানাকরিতেপারিব, সেপর্যন্তআহারবিষয়েদক্ষিণহস্তেরব্যবহারকরিবনা’ (বৃহৎবঙ্গ, দীনেশচন্দ্রসেন, পৃ২২০)কথিতআছেযে, এইকালান্তকঘোষণায় ভীতহয়েশশাঙ্করাজ্যশ্রীরবন্ধনমুক্তকরেনহর্ষবর্ধনকনৌজমুক্ত করারপররাজ্যবর্ধনেরহত্যারপ্রতিশোধনেবারজন্যগৌড়েরদিকেঅভিযানশুরুকরেন।দীর্ঘকালীনএইযুদ্ধেশশাঙ্কেররাজকোষশূন্যহয়েযায়।খাদযুক্ত স্বর্ণমুদ্রামুদ্রাপ্রচলনকরেওতিনিরাজস্বেরঘাটতি  আটকাতেঅসক্ষমহন।পরিশেষেহতাশা, আতঙ্ক, পরাজয়েরগ্লানিরোগভোগেতিনিমারাযান।
অধ্যাপকনীহাররঞ্জনরায়,শশাঙ্কেরএইবৌদ্ধবিদ্বেষেরকারনস্বাভাবিকহিসেবেবর্ণনাকরেবলেছেনযেপ্রথমত, এইযুগেব্রাহ্মণ্যধর্মসংস্কৃতিক্রমশবিস্তারলাভকরিতেছিলবাংলাআসামেরসর্বত্র...কোনকোনরাজবংশএইনবধর্মসংস্কৃতিরগোঁড়াপোষকধারক হইবেন, ইহাকিছুঅস্বাভাবিকনয়। ......দ্বিতীয়ত, শশাঙ্কেরঅন্যতমপ্রধানশত্রুহর্ষবর্ধনবৌদ্ধধর্মেরঅতিবড়পোষক; শত্রুরআশ্রিতলালিতধর্মনিজেরধর্মনাহইলেওতাহারপ্রতিবিদ্বেষস্বাভাবিক (বাঙালীরইতিহাস, পৃ৩৭৪) 

বৌদ্ধবিহারগুলিধ্বংসকরারআরএকটিপর্যায়শুরুহয়হর্ষবর্ধনেরমৃত্যুরপর।পুলকেশীরসাথেযুদ্ধেপরাজয়ঘটলেতারইব্রাহ্মণআমত্যেরহাতে নিহতহনহর্ষবর্ধনতারমৃত্যুরপরকনৌজব্রাহ্মণ্যধর্মেরপ্রধানঘাঁটিতেপরিণতহয়কুমারিলভট্টেরনেতৃত্বেশুরুহয়ধ্বংসলীলাবুদ্ধবিহারগুলিমন্দিরেপরিবর্তিতকরে তার সমস্ত সম্পদের উপর দখল নেয় কুমারিল ভট্টের বাহিনী। গুড়িয়েদেওয়াহয়বুদ্ধবিহার।  হাজারহাজারবৌদ্ধশ্রমণকেহত্যাকরাহয়জ্বালিয়েদেওয়াহয়বৌদ্ধশাস্ত্ররাশিঅনেকবৌদ্ধশ্রমণপুঁথিগুলিবাঁচানোরজন্যহিমালয়েররাজ্যগুলিতেআশ্রয়নিতেবাদ্ধহন
পালযুগেরসুশাসনেপূর্বজনপদআবারস্বমহিমায়প্রকাশিতহলেওসেনেদেরসময়বুদ্ধবিহারগুলিরউপরআবারনেমেআসেধ্বংসেরখাড়া বিশেষতলক্ষনসেনেরসময়বুদ্ধবিহারগুলিরগাত্রথেকেঅপূর্ব গান্ধার শিল্প সমন্বিত বুদ্ধের মূর্তিগুলি ভেঙ্গে ফেলে তার জায়গায় ভোগ, বিলাস, কামনা, বাসনা ও যৌনাচারের মূর্তি প্রতিস্থাপন করা হয়। ছেনি, হাতুড়ির ঘায়ে বিকৃত করে দেওয়া হয় শিলালিপি, স্তম্ভলিপি ও গিরিলিপিগুলিকে। ধ্বংস করা হয় অশোকস্তম্ভ এবং ধম্মচক্র। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা বা আসামের সমস্ত বুদ্ধ বিহারগুলির উপর দখল নিয়ে তাকে পরিবর্তিত ও হিন্দুভুত করা হয়। এই ধ্বংসকার্যের মধ্যে বীরত্বের পরম্পরা দেখে স্বামী বিবেকানন্দ গর্বের সাথে উল্লেখ করেছিলেনঃ      
 “To any man who knows anything about Indian history, that very statement proves that the whole thing was a fraud, because the temple of Jagannath is an Old Buddhistic Temple. We took this and others over and re-Hinduised them. We shall have to do many things like that yet”. (Complete Works of Swami Vivekananda, vol-3 p-264).   
এরপর বংলায় বুদ্ধ বিহার ধ্বংসের ইতিহাস পাওয়া যায় বক্তিয়ার খিলজির আক্রমণের সময়। খিলজি নদীয়ায় আসার পথে একটি বিরাট সঙ্ঘারামকে দুর্গ মনে করে তা ধ্বংস করে দেন। নিরিহ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করেন এবং গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দিয়ে বিজয়ীর গর্ব অনুভব করেন। বক্তিয়ার খিলজি পরবর্তীকালে এই বৌদ্ধ বিহার ও গ্রন্থাগার পুড়িয়ে দেবার জন্য লজ্জিত হনকেননা বাংলার ঐতিহাসিক তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে যখন বুঝতে পারেন যে তিনি নিজে হাতেই ইতিহাস ধ্বংস করেছেন তখন তিনি অনুতাপ বোধ করেন।   

ধ্বংসের এই ইতিহাসগুলি থেকে সহজেই ধরে নেওয়া যায় যে তাম্রলিপ্ত অঞ্চলে অবস্থিত বান্দান বা মোগলমারি বুদ্ধ বিহারটি শশাঙ্ক বা সেন আমলের কোন এক সময় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। কেননা বক্তিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের পরিকল্পিত পথ তাম্রলিপ্তের প্রাচীন পথ থেকে ভিন্ন।       
                    
মোগলমারির প্রত্ন নিদর্শনঃ
বান্দান, সখীসেনার ঢিবি বা মোগলমারিতে এপর্যন্ত যে ৬টি খননকার্য চালানো হয়েছে তা নিতান্তই সীমিতএখনো সিংহভাগ কাজ পড়ে আছে। এই  খননকার্য  থেকে পাওয়া প্রত্ন নিদর্শনগুলি নিয়ে পুরাতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা একটি সম্ভাব্য কালে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে মোগলমারির প্রত্ন নিদর্শনগুলি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের, দাঁতনে অবস্থিত ভট্টর কলেজের অধ্যাপক মাননীয় অন্নদাশঙ্কর পাহাড়ি মহাশয় একটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ লিখেছেনযে প্রবন্ধটি কোলকাতার বৌদ্ধ ধর্ম্যাঙ্কুর সভা পরিচালিত, মাননীয় হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী সম্পাদিত জগজ্জোতি পত্রিকায় ‘বিবেকানন্দ মননে বুদ্ধ’ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। মাননীয় অন্নদাশঙ্কর পাহাড়ি মহাশয় এখানে প্রাপ্ত প্রত্ন নিদর্শন গুলির উপরে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন। তাই এই ধরণের বিশ্লেষণের পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকছি। কিন্তু প্রাপ্ত সামগ্রীর কিছু নিদর্শন এখানে রাখলে এই বুদ্ধ বিহার সম্পর্কে পাঠকদের একটি প্রাথমিক ধারনা তৈরি হতে পারে। এই কারণেই এখানে খননকার্যে পাওয়া কিছু নিদর্শনের উল্লেখ করা হলঃ  

-      বুদ্ধ বিহারটি চতুস্কোনাকৃতি (৬০/৬০ মিটার)। চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।
-      প্রাচীরের বাইরে একটি পরিখা। পরিখাটি জলনিকাশি ব্যবস্থার সাথে যুক্ত।
-      দেয়ালগুলিতে সুচিত্রিত নানা মূর্তি।
-      পাওয়া গেছে ভগবান বুদ্ধের একটি প্রস্তর মূর্তি।
-      এছাড়া পাওয়া গেছে নানা রঙের মাটির বাসন, মাটির প্রদীপ এবং পিলসুজ
-      বিহারটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ৪০ প্রকার বিভিন্ন আকারের ইট।
-      একটি জাঁতাকল, হামানদিস্তার মোটা পাথর।
-      লাল রঙের একটি মাটির পাত্রের মধ্যে অনেক লোহার পেরেক।
-      কাঠ কয়লার স্তুপ।
-      কতগুলি কড়ি।
-      পাওয়া গেছে ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা মাটির তৈরি শিলমোহর।
-      প্রাচীরের বাইরের দেয়ালে পাওয়া গেছে বুদ্ধের উপবেশন মুদ্রায় নানা মূর্তি, যক্ষিণী-মূর্তি,  রমণী মূর্তি যার হাতে আছে প্রস্ফুটিত পদ্মফুল।           
বুদ্ধ বিহারটির পরিপূর্ণ খননকার্য শেষ হলে আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সামগ্রী আবিষ্কৃত হবে সন্দেহ নেই। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বুদ্ধ বিহারটির স্তুপমূলের খনন এখনো বাকি। এই খনন আশু প্রয়োজন। এই খননকার্য তরান্বিত হলে বেরিয়ে আসতে পারে আরো অসংখ্য প্রত্ন সামগ্রী এবং সেই সামগ্রী গুলির যথার্থ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যাবে এর সমকালীন সভ্যতার ইতিহাস।   
                  
বিজ্ঞপ্তিবিজ্ঞাপনেরতারতম্য 
নবআবিষ্কৃতএইবুদ্ধবিহারেরক্ষেত্রসমীক্ষাকরতেগিয়েআমাদেরকাছেসরকারীবেসরকারিউদ্যোগেযেব্যবস্থাপনানেওয়াহয়েছেতারনানাঅসংলগ্নচিত্রধরাপড়ে। প্রথমতঃ এমন একটি ঐতিহাসিক নিদর্শনের একেবারে স্তুপমুলে যে ভাবে একটি ক্লাব বা পাঠাগার গড়ে উঠেছে এবং তাকে সরকারি শিলমোহর দেওয়া হয়েছে তা অপরিণামদর্শিতার চূড়ান্ত নমুনা। প্রত্ন নিদর্শনগুলিকে যে অবজ্ঞায়  উপস্থাপন করা হয়েছে তা সর্বকালের সভ্য সমাজকে লজ্জা দিতে পারে। খোলা আকাশের নিচে শুধু মাত্র তাবু দিয়ে মূর্তিগুলিকে ঢেকে রেখে চোরাকারবারীদের উৎসাহিত করা হয়েছে। কোনধরনের নিরাপত্তারক্ষী রাখার তাগিদ সরকারের নেই।
এই বুদ্ধ বিহারের দক্ষিণ পূর্বদিকের জমিগুলিতে অবৈধ দখলদারী শুরু হয়েছে। একেবারে গাঁ ঘেসে তৈরি হয়েছে বসতি। এই দখল করা জমির উপর গড়ে উঠেছে কংক্রিটের বাড়ি। বর্তমান প্রবেশ পথের ডানদিকে একটি বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটিতে জানান হয়েছে যে, এই পুরাকীর্তিটি “পশ্চিমবঙ্গ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ও পুরাবস্তু সংরক্ষণ এবং প্রত্নক্ষেত্র খনন আইন, ১৯৫৭(৩১নং আইন, ১৯৫৭) –এর ৩ ধারার ১ উপধারা অনুসারে, ‘রাজ্য সংরক্ষিত’ (বিজ্ঞপ্তি নং ৪১৯৫/ আই.সি.এ তাং মার্চ ৭, ২০১৩) হিসাবে ঘোষণা করা হইয়াছে।
কোন ব্যক্তি এই পুরাকীর্তির ক্ষতি, অঙ্গনাশ, বিকৃতি সাধন, স্থানচ্যুত, অপসারণ, পরিবর্তন বা ধ্বংস করিলে উক্ত আইনের ১৬ ধারা অনুসারে তাহার অর্থ–দন্ড অথবা ৩ মাস পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হইবেন”।

এই বিজ্ঞপ্তির পাশেই আর একটি বিজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে দাঁতন ভট্টর কলেজ এবং তরুণ সংঘ ও পাঠাগারের পক্ষ থেকে। অর্থাৎ জ্ঞাতে হোক বা অজ্ঞাতে হোক বিজ্ঞপ্তি আর বিজ্ঞাপনের মধ্যে একটি দ্বান্দ্বিক অসামঞ্জস্য ইতিমধ্যেই প্রকট হয়ে উঠেছে। ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা আরোপিত কাহিনী। কয়েকটি মূর্তিকে যে ভাবে সিমেন্ট-বালি দিয়ে জোড়াতালি বা বিকৃত করে প্রদর্শন করা হচ্ছে তাতে “পশ্চিমবঙ্গ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ও পুরাবস্তু সংরক্ষণ এবং প্রত্নক্ষেত্র খনন আইন, ১৯৫৭(৩১নং আইন, ১৯৫৭) –এর ৩ ধারার ১ উপধারার প্রত্যক্ষ অবমাননার সামিল! সরকারী ব্যবস্থাপনা বা নিরাপত্তার অভাবে স্থানীয় মানুষেরা বুদ্ধ বিহারটির ইট এবং নানা মূল্যবান প্রত্ন সামগ্রী বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছেসব মিলিয়ে প্রত্ন খনন, সংরক্ষণ, তার পরীক্ষা নিরীক্ষা, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের আন্তরিকতার অভাবে নানা অনভিপ্রেত জটিলতা দেখা যাচ্ছে। দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস উদ্ঘাটনের স্বার্থে এগুলি বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার স্বচ্ছতার ও বিশ্বাসযোগ্যতার।

নির্বাক ইতিহাস, ধবংসের মলিন চাদর জড়িয়ে শুয়ে  আছেবিগত কোন বিস্মৃতির এক অজ্ঞাত   আস্তরণের নীচে ঢাকা পড়ে আছে তার আত্তপরিচয়। নিথর, নির্লিপ্ত পাষাণ বুক জুড়ে হয়তো লেখা আছে কোন কালের কবিতা। বর্ণে বর্ণে হয়তো ছড়িয়ে আছে পুঞ্জিভূত অভিমান। একটি ভরসার জন্য হয়তো সে এখনো আগলে রেখেছে ভাঙ্গা বুকের সমস্ত সম্পদভাবিকালের কাছেই তার দাবী, তার সমস্ত অভিযোগআমরা সচেতন হলে,  একটু যত্নবান হলে হয়তো অর্থবোধক হয়ে উঠতে পারে তার সরল সাঙ্কেতিক ভাষাএটাই বিবর্তনের পথ, উত্তরণের নবতম সিঁড়িঅতীত সজীব হলে, উত্তরণের এই সিঁড়ি বেয়ে আমরাও উজ্জ্বল ইতিহাসের উত্তরসূরি হিসেবে দাবী জানাতে পারব।           



তথ্য সূত্র ঃ
   পরিদর্শক দলের প্রাথমিক ক্ষেত্রসমীক্ষা,  ০৩/০৫/১৪
  বাঙালীর ইতিহাস, অধ্যাপক নীহার রঞ্জন রায় (তৃতীয় অধ্যায়, দেশ-পরিচয়, পৃ ৯১)
 প্রাচীন হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রা ও বানিজ্য বিস্তার, অক্ষয় কুমার দত্ত(প্রকাশক,রজনী নাথ দত্ত)
 বাংলার ইতিহাস, রমেশচন্দ্র দত্ত, প্রথম খণ্ড।
বৃহৎ বঙ্গ, দীনেশচন্দ্র সেন, প্রথম খণ্ড।
সোনার দাঁড় পবনের বৈঠা, শরদিন্দু বিশ্বাস, গণশক্তি শারদ সংখ্যা, ১৯৯৯
Complete Works of Swami Vivekananda, vol-3 p-264
মোগলমারি বৌদ্ধ বিহারঃ বিহঙ্গ অবলোকন, অন্নদা শঙ্কর পাহাড়ী, জগজ্জোতি,‘বিবেকানন্দ মননে বুদ্ধসংখ্যা
দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ও গঙ্গারিডি সংস্কৃতি, নরোত্তম হালদার, পশ্চিমবঙ্গ, ১৪০৬
বাঙালীর ধর্ম ও সমাজ, যতীন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নিউ এজ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড।
১০The Root of Bengali Culture, Samaren Roy, FIRMA, KLM Private Limited, Calcutta,1981.     
             
                                  

সনাতন বিচার ধারার দুই মহান যুগপুরুষ গোতমা বুদ্ধ এবং হরিচাঁদ (১) ঃ শরদিন্দু উদ্দীপন

$
0
0

  

ভূমিকাঃ 

গোতমাবুদ্ধএবংহরিচাঁদভারতীয়সূক্ষ্মসনাতনধম্মদেশনারদুইযুগপুরুষ।একজনেরজন্মহয়েছিলআজথেকে২৫৫৯বছরআগে।আরএকজনজন্মেছিলেন২০৩বছরআগেইংরেজী১৮১২সালের১১ইমার্চ।দুজনেরআবির্ভাবেরমধ্যেপার্থক্য২৩৫৬বছর।মানবসভ্যতারবিবর্তনেরনিরিখেকালচক্রেরএতদূরত্বথাকাসত্ত্বেওঅদ্ভুতভাবেদুজনেরচরিত্রেরয়েছেএকইদৃঢ়তা, একইবিভঙ্গ, একইদীপ্তি।ধম্মদেশনারপ্রতীকহিসেবেদুজনেইবেছেনিয়েছিলেনবোধিবৃক্ষ(Tree of wisdom)গোতমাউদ্ঘাটনকরেছিলেদুঃখেরকারণ, দেখিয়েছিলেনদুঃখকেজয়করারপ্রকৃতপথ, পঞ্চশীলএবংঅষ্টাঙ্গিকমার্গ।হরিচাঁদএনেছিলেন মতুয়া ধর্ম। ব্রহ্মন্যবাদের প্রভাব খর্ব করার জন্যদিয়েছিলেনদ্বাদশআজ্ঞা।অবজ্ঞারগ্লানিব্যাথায়জর্জরিতবঞ্চিত, মানুষদের স্বশক্তিকরণেরমূলমন্ত্রশিখিয়েছিলেনহরিচাঁদ। 
এই দুই যুগ পুরুষের কর্মধারা ও দার্শনিক চিন্তা চেতনার সামঞ্জস্য খুঁজে বের করার একটা অনুভূতি বহুদিন ধরে তাড়া করছিল আমাকেএই অনুভূতি আরো প্রবল হয়েছিল মায়ের কাছ থেকে পাওয়া লাল কাপড়ে বাঁধা একটি হরিলীলামৃত পড়ার পরহরিচাঁদের জীবন, কর্মধারা ও দার্শনিক চিন্তার উপর রচিত এই লীলামৃত গ্রন্থ।  এই লীলামৃতের ১৫-১৬ পাতায়  বর্ণিত হয়েছে হরি ঠাকুরের জনম বিবরণ। এই জন্ম বিবরণীর ভাষ্যে হরিচাঁদের প্রবর্তিত ধর্মের স্বরূপ, কর্ম পদ্ধতি ও ব্যপ্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে  হরিলীলামৃতে বর্ণনা করা হয়েছে যে মহামতি বুদ্ধের কামনা পূর্ণ করার জন্যই হরিচাঁদ যশোমন্তের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন 
“নীচহয়েকরিবযেনীচেরউদ্ধার।
অতিনিম্নেনানামিলেকিসেরঅবতার।।
নীচজনউচ্চহবেবুদ্ধতপস্যায়
বুদ্ধদেবঅবতারযেসময়হয়।।
বুদ্ধেরকামনাতাহাপরিপূর্ণরজন্য।
যশোমন্তেরগৃহেহরিহইলাঅবতীর্ণ”।। (হ।লী। ১৫/১৬)

হরিলীলামৃতে এমন সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও মতুয়াদের একটি বৃহত্তর অংশ মহামতি গোতমা বুদ্ধের প্রদর্শিত মার্গের সাথে হরিচাঁদের মতুয়া ধর্মের সামঞ্জস্য বিধান মেনে নিতে এখনো রাজি নয়। তারা বরং হরিচাঁদকে ব্রাহ্মন্যবাদী মাইথলজীর বিভিন্ন কাল্পনিক চরিত্র রাম, কৃষ্ণ, নারায়ন, বিষ্ণুর সাথে একাসনে বসানোর জন্য বেশি আগ্রহী। এটা নিশ্চিত ভাবেই মতুয়াদের একটি আত্মঘাতী প্রবণতাএই প্রবণতারএকমাত্র পরিণতি মতুয়া ধর্ম এবং মতুয়া সমাজের সার্বিক অবলুপ্তিতার নমুনা বা চিহ্ন আমরা সর্বত্র লক্ষ করছি।  লক্ষ করছি মতুয়া সমাজের অন্দরে অন্দরে কাল সাপের মত ঢুকে পড়েছে এই বিষাক্ত ব্রাহ্মন্যবাদ। মতুয়া পরিবারের জন্ম  থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটা পর্যায়ের প্রতিটি আচার অনুষ্ঠানই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে  ব্রাহ্মণ সমাজ। ঘটনাটি এমন নয় যে, দোর্দণ্ড প্রতাপ কোন রাজা বা জমিদার নিষ্ঠুর ভাবে ব্রাহ্মন্যবাদী   শাসন চাপিয়ে দিচ্ছে মতুয়া সমাজের উপরবরংএ কথাটি চরম সত্য যে, আজন্ম সেবাদাস  হয়ে বেঁচে থাকার জন্যই দশ গ্রামের মতুয়ারাই খুঁজে নিচ্ছে একজন অশিক্ষিত ব্রাহ্মণ প্রভুকে যে মতুয়াদের  গোলামীর মন্ত্রে বশীভূত করতে পারে। এমন স্বেচ্ছা মৃত্যুর প্রতিফলন মতুয়া সমাজের সর্বত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। পরিতাপের বিষয় এই মারন  ব্যধির প্রকোপ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। থামার কোন লক্ষণ নেই।
ঘরের নিভৃত কোনে যে আসনে হরিচাঁদকে বসানো হয়েছে, ঠিক তার পাশের জায়গা দখল করে নিয়েছে কাল্পনিক হিন্দু দেবদেবীগণ। যোগে জাগে শুরু হয়েছে নৈবেদ্যর ঘনঘটা। বারো মাসে তেরপার্বণের উচ্চকিত উল্লাস। আর এই গগনভেদী উল্লাসের জৌলুসে ফ্যাকাসে হতে বসেছে জয়ডঙ্কার ধ্বনি। ত্রিকোন লাল নিশানের মোচা দখল করে নিচ্ছে ত্রিশূল। এ যেন হাড়িকাঠের দিকে স্বেচ্ছায় গলা বাড়িয়ে দেবার জন্য ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে বলীর উৎসর্গকৃত পশু। 
অথচ এই আত্মঘাতী মোহমুদ্গরের থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যই বজ্রনির্ঘোষে হরিচাঁদ উচ্চারণ করেছিলেন “হরিনাম”, এর গূঢ়ার্থ এবং নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন মতুয়াদের আসল পথ।
হরিবোলা সাধুদের ভক্তি অকামনা।  
তন্ত্র মন্ত্র নাহি মানে ব্রজ উপাসনা।
 বিশুদ্ধচরিত্র প্রেমে হরি হরি বলে।
অন্য তন্ত্র মন্ত্র এরা বাম পদে ঠেলে।। (হ লী)

কালের দাবীতে এই আলোচনাআমার কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ। একে অস্বীকার করা সম্ভব হল না। পরিসরের অভাবে সমস্ত তথ্য এখানে তুলে ধরা সম্ভব হল না। কেননা এত স্বল্প পরিসরে বুদ্ধ এবং হরিচাঁদ এই দুই যুগপুরুষের অন্তহীন কর্মধারার পরিমাপ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবন্ধ, ক্ষেত্রসমীক্ষা ও ভিক্ষুদের সন্নিধানে এসে এই দুই মহামানব সম্পর্কে মনের মধ্যে যে ভাবের সঞ্চারণ ঘটেছে এই প্রবন্ধটি তারই এক  বিনম্র নিবেদন   

গোড়ার কথাঃ সনাতন ধর্ম বা ধম্মসনাতন
আলোচনার গোড়াতেই বৈদিকসাহিত্যতথাব্রাহ্মণসাহিত্যেসনাতনধর্মসম্পর্কেকিবর্ণনাআছেতাদেখেনিতেচাই। বারবারএমনই দাবী করা হয়ে থাকে যে, সনাতনএবং ধর্মদুটি শব্দই প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা থেকে নেওয়া হয়েছেএবং এই শব্দদুটির মাধ্যমে এমন ভাব বিস্তার করা হয়েছে যে যার আদি নেই বা অনাদিএবং অন্ত নেই বা অনন্ততাই সনাতন”এমনও বোঝান হয়েছে যে সনাতন হল অজর, অমর এবং  অক্ষয়। “ধৃ” ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে ধর্ম যার প্রকৃত অর্থ ধারণ করা। সুতরাং সনাতন ধর্মের প্রকৃত অর্থ করা হয়েছে “প্রকৃতির নিয়ম”বা “প্রাচীন প্রাকৃতিক শাশ্বত পথ” যা ধারণ করে নশ্বর এবং অবিনশ্বর জগৎ দাঁড়িয়ে আছে।      
এমন ও দাবী করা হয়েছে যে বৈদিক সাহিত্যেই নাকি কেবল এই সনাতন ধর্মের উল্লেখ আছে এবং শব্দ  দুটি অন্য কোন ভাষাতে এই শব্দ নেই।
এখন বৈদিক সাহিত্য বলতে আমারা বুঝি বেদ, ব্রাহ্মণ, আরন্যক ও উপনিষদকে, শ্রুতি ও পুরাণকে। এখানে বলতে দ্বিধা নেই যে ঋক, সাম, যজু, অথর্ব এই চারটি বেদ, ব্রাহ্মণ, আরন্যক বা উপনিষদে সনাতন শব্দের বা ধর্মের কোন উল্লেখ নেই। সনাতন ধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায় মনুস্মৃতির চতুর্থ অধ্যায়ের ১৩৮ শ্লোকে           
·  Manusmriti (4-138), ... "Satyam bruyatpriyam bruyanna bruyatsatyamapriyam. Priyam cha nanrtam bruyadesa dharmah sanatanah."
(Translation: "Speak the truth, speak the truth that is pleasant. Do not speak the truth to manipulate. Do not speak falsely to please or flatter someone. This is the quality of the eternal dharma")
সত্যকথাবল, সত্যকথাবলযামধুর।তেমনকথাবলনাযাবিকৃত।কাউকেসন্তুষ্টকরারজন্যমিথ্যেবলনা।এটাইসনাতনধর্মেরশ্রেষ্ঠগুন  

ভগবতপুরানেলেখাহলযে, চারযুগেরপ্রত্যেকবিবর্তনেরশেষেঋষিগণধ্যানযোগেসংগৃহীতশ্রুতিসকলঅবলোকনকরলেন, কণ্ঠেধারণকরলেনএবংতারপরেইসনাতনধর্মপ্রতিষ্ঠাকরলেন।   
Bhagvata Purana,(12)... "At the end of each cycle of four yugas, the rishis, through their asceticism, saw the collections of srutis swallowed up by time, after which the eternal dharma (was re-established)  

ব্রাহ্মন্য সাহিত্যের অন্যতম মূল গ্রন্থ হল গীতাগীতার কয়েকটি অধ্যায়ে সনাতন শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ বর্ণনাই আত্মার অবিনশ্বরতা এবং সৃষ্টিকর্তার সর্বময় ক্ষমতা সম্পর্কিত। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ২৪ শ্লোকে বলা হয়েছেঃ
Acchedyo 'yam adahyo 'yam
akledyo 'sosya eva ca
nityah sarva-gatah sthanur
acalo 'yam sanatanah”.
The soul cannot be cleft, he cannot be burnt, he cannot be wetted, and
he cannot be dried. He is eternal, all pervading, unchangeable, immovable and
ever lasting.
আত্মা কখন খণ্ডিত করা যায়না। তাকে পোড়ানো যায়না, তাকে সিক্ত করা যায়না, তাকে শুকনো করা যায়না, সে অনড় এবং অব্যয়,সর্বত্র পরিব্যাপ্ত।
গীতার একাদশ অধ্যায়ের ১৮ শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ    
“Tvam aksaram paramam veditavyam
tvam asya visvasya param nidhanam
tvam avyayah sasvata-dharma-gopta
sanatanas tvam puruso mato me"
You are inexhaustible, the Supreme Being, worthy to be known, the best
in all the universes; You are unchangeable, the maintainer of religion and the
eternal personality of Godhead.

তুমিঅক্ষয়,  মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার মধ্যে তুমিই মহত্তর, তুমি অপরিবর্তনীয় সনাতন ধর্মের নিয়ন্ত্রক ও রক্ষক। 
 
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, যে সনাতন ধর্মনিয়ে এত কথা, এত গরিমা প্রকাশ করা হল তার স্বরূপ এবং সংজ্ঞা নির্ধারণে জন্য কোথাও কোন  ব্যাখ্যা করা হল না? আবার অদ্ভুত ভাবে এটাও দেখা গেল যে, গীতায় যেখানে ধর্মের স্বরূপ ও তার সংস্থাপনের অব্যর্থ কারণ দর্শানো হল সেখানে সনাতনকথাটিই উচ্চারণ করা হলনা! গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ৭ এবং ৮ শ্লোকে কৃষ্ণের মুখে উচ্চারিত হল ধর্ম সংস্থাপনার মূল কারণ।   
yada yada hi dharmasya
glanir bhavati bharata
abhyutthanam adharmasya
tadatmanam srjamy aham
TEXT 8
paritranaya sadhunam
vinasaya ca duskrtam
dharma-samsthapanarthaya
sambhavami yuge yuge
এখানে সনাতন ধর্মের মূখ্য বার্তাকার সদম্ভে ঘোষণা করলেন যে, “O descendant of Bharata, whenever there is decline of religion and rise ofirreligion, I manifest Myself.I descend Myself in all ages to deliver the devotees, to annihilate themiscreants and to re-establish the principles of religion.
অর্থাৎ ধর্ম সংস্থাপনের জন্য দরকার হয় অভ্যুত্থানের। সাধুদের পরিত্রাণের জন্য দরকার হয় দুষ্কৃতের বিনাশ। ধর্ম সম্পর্কে এটাই বৈদিক সাহিত্যের বা ব্রাহ্মণ সাহিত্যেরমূল ভাষ্য।

প্রশ্ন উঠতেই পারে এটাইকি সনাতনের মূল বাণী!? এটাই কী সেইচিরন্তনপ্রাকৃতিক বার্তা। এই গভীর বার্তার মধ্যে দিয়ে কি সকল সত্ত্বার মঙ্গল সাধিত হয়?এই ধর্ম ধারণ করে কিপ্রত্যেক জীবকে নিজেরসত্ত্বা, নিজের আপনজন, নিজের আত্মীয়, পরমাত্মীয়, হিসেবে আলিঙ্গন করা যায়? অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কি ন্যায়, সাম্য, স্বাধীনতা ও শান্তির বাণী প্রতিষ্ঠা সম্ভব ? একজনকে হত্যা করে অপরজনকে পালন করার মধ্য দিয়ে কি বিশ্বমানবতা রক্ষিত হয়?

এই সমস্ত প্রশ্নের যথার্থ উত্তর পেতে হলে পাহাড় প্রমান সংস্কৃত সাহিত্যের মধ্যে কী প্রহেলিকা লুকিয়ে আছে তা আমাদের বুঝে নিতে হবেখুঁজে দেখতে হবে সংস্কৃত সাহিত্যের প্রদর্শিত এই ভাষ্যপ্রকৃত সনাতনের পথকিনা। যুক্তি, বুদ্ধি ও জ্ঞানের আলোকে জহুরীর মত যাচাই করে  নিতে হবে আসল ও নকল।বিজ্ঞান, দর্শন, ভাষাতত্ত্বও ঐতিহাসিক উপকরণগুলির সাহায্যে নিয়ে একটি নিশ্চিত গন্তব্যে পৌঁছাতে হবেএবং এই নিরন্তরক্রিয়াপ্রক্রিয়ায় মাধ্যমে মিথ্যাকে বিসর্জন দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার কাজে ব্রতীহতে হবে।    

সনাতন ধর্ম সম্পর্কে সংস্কৃত ভাষ্যের ঐতিহাসিক সত্যতাঃ     
সমস্ত ব্রাহ্মন্য সাহিত্য বেদকে কেন্দ্র করেগড়ে উঠেছে। চারটি বেদকে তাই সংস্কৃত সাহিত্যের মূলাধার বলা যেতে পারে। বেদের স্বীকৃতিনা থাকলে কোন ধারনা, মত, ধ্বনি বা শব্দ কৌলীন্য লাভ করতে পারেনা।পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেদ, ব্রাহ্মণ, আরন্যক বা উপনিষদে সনাতন ধর্মের কোন ব্যাখ্যা নেই। সনাতন ধর্মের উল্লেখ  পাই মনুস্মৃতিতে, ভগবত পুরাণে এবং গীতায়। তাই একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে এই শাস্ত্রগুলি রচনার  কাল পর্যন্ত “সনাতন” শব্দ বা তার মূল অর্থের সাথে ব্রাহ্মন্য শাস্ত্রের কোন পরিচয় গড়ে ওঠেনি। কেননা খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ সাল থেকে সম্রাট অশোকের প্রোপৌত্র বৃহৎদ্রোথের শাসন কাখ্রিষ্টপূর্ব ১৮৫ সাল পর্যন্ত আর্যরা কোল, চন্ডাল, অসুর, নাগ প্রভৃতি মূলনিবাসী ভারতীয় রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ বিগ্রহে ব্যস্ত ছিল। ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীর ধ্বংস, নারী ও সম্পদ লুন্ঠন এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে তার উপরে আর্য ধর্মের বিজয় কেতন উড়াতে ব্যস্ত ছিল ব্রাহ্মণ সমাজ।যুদ্ধের এই ক্রান্তিকালেই আর্যদের সাথে ভারতীয় ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটে। পরবর্তীকালে আর্যরা এই ভাষা, লিপি ও সাহিত্যের উপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করে এগুলিকে তাদের সংস্কৃতির সাথে সংযুক্ত করে নেয় এবং নিজেদের সুবিধার্থে এগুলিকে আর্যধর্ম প্রচারের মাধ্যম করে নেয়। এই প্রসঙ্গে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা সাহিত্যের প্রসঙ্গে আলোচনাটি প্রনিধান যোগ্য।  
"...বৈদিক কাল ও বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কেও আমরা সেই কাথা বলতে পারি। এই সুদীর্ঘ সময় ছিল  ধ্বংসের যুগ, অনুকরণের কাল। প্রাচীন দেশীয় শব্দ, লিপি, ভাষা আত্মসাৎ করার অন্ধকার যুগ। অর্থাৎ মূলত এদেশের ভাষা ও শব্দ সম্ভার,সাহিত্যরচনার রীতি এবং লেখকদের আশ্রয় করেই বিজয়ী আর্যরা নিজেদের প্রয়োজন সিদ্ধিমূলক বৈদিক রচনা করে নিয়েছিল। বেদ বা বৈদিক সাহিত্য তাই মূলতঃ ঔপনিবেশিক সংবিধান। ............... এ সাহিত্য তাই উপনিবেশবাদের মূল সুর, ঘৃণা এবং জাত বিদ্বেষ, শোষণ ও পীড়নের কাহিনী কথায় ভরা। ........চূড়ান্ত বর্ণ -বিদ্বেষ চলেছে, ঈশ্বরের নামে ও ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে"।

প্রাচীন দেশীয় লিপি, ভাষা, শব্দগুলিকে আত্মসাৎ করেপরিবর্তন করেই যে ব্রাহ্মণ সাহিত্য গড়ে উঠেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখেন। এই প্রক্রিয়ার গোড়ার দিকে বিজয়ী আর্যরা ভারতীয় জনপুঞ্জের ভাষার শব্দ ভান্ডার থেকে নিজেদের প্রয়োজন মত শব্দ সংগ্রহ করে সুবিধা মত পরিবর্তন করে আর্যিকরণ বা সংস্কৃতায়ণ করে নেয়। একটু এদিক ওদিক করে দেশি শব্দগুলিকেই ঢুকিয়ে নেওয়া হয় সংস্কৃত শব্দকোষে এবং পরবর্তী কালে শব্দগুলিকে সংস্কৃত শব্দ হিসেবে দাবী করা হয়।
একটিমিথ্যাতথ্যকেহাজারবারবলতেবলতেসত্যবলেপ্রতিয়মানহয়এরকমইহেঁয়ালিরউপরইদাঁড়িয়েআছেসমগ্রব্রাহ্মণসাহিত্য।এরপ্রতিটিপরতেপরতেসংশয়ছিলবলেইএইমিথ্যারমিথোলজিকেধর্মেররসায়নেজারিতকরে সচতুরভাবেপরিবেশনকরাহয়েছে।যাতেপ্রশ্নউঠেলেবাঐতিহাসিকতথ্যযাচাইয়েরপ্রয়োজনপড়লেধর্মেআঘাতেরঅজুহাততোলাযায়এবংমিথ্যাধারনাকেইলালিতপালিতকরেঅচলাবস্থাসৃষ্টিকরাযায়।বর্তমানেরবাবরিমসজিদরামজন্মভূমিবিতর্কএইসুচতুরপরিকল্পনারজ্বলন্তউদাহরণ।
এইসমস্তব্রাহ্মণসাহিত্যেরক্ষেত্রেওএকইপরিকল্পনাগ্রহণকরাহয়েছেবিভিন্নলেখকচিন্তাবিদদেররচনায়এইসবসাহিত্যরচনারসময়কালনির্ধারিতহলেওশুধুমাত্রপ্রচারেরজোরেএগুলিকেকালজয়ীকরেতোলাহয়েছেএবংএইসাহিত্যগুলিযেমানুষেরজন্মেরআগেকোনস্বর্গীয়ছাপাখানায়মূদ্রিতহয়েপারিজাতবাগানেরকোনগ্রন্থাগারেগচ্ছিতছিলএমনবদ্ধমূলধারনাচালানকরেদেওয়াহয়েছে।এখনোএইপ্রচারেরক্ষামতিনেই।অধিকাংশব্রাহ্মন্যবাদীসংঘএবংসংগঠনএকযোগেএইমিথ্যাপ্রচারকেইহাতিয়ারকরেব্রাহ্মণসাহিত্যকেটিকিয়েরাখারব্যবস্থাকরছে।         
অধিকাংশগবেষণাথেকেইপ্রতিপাদিতহচ্ছেযে, মনুস্মৃতি, রামায়ন, মহাভারত, ভগবৎপুরাণগীতাররচনাকালমহামতিগোতমাবুদ্ধেরঅনেকপরে।গত২০১৩সালেভারতবিখ্যাতপ্রতিষ্ঠানরামকৃষ্ণমিশনআলোচনাসহশ্রীমদ্ভাগবতগীতাএকটিসংস্করণপুনঃ প্রকাশকরেছে।তারমুখবন্ধেদাবীকরাহয়েছে যে, “গীতাররচনাকালগৌতমবুদ্ধেরআগেএইপ্রসঙ্গেবন্ধুপ্রতিমচন্দনবড়ুয়ারএকটিখোলাচিঠিআত্মনিরীক্ষণপত্রিকার২১শেডিসেম্বর, ২০১৩সংখ্যায়প্রকাশিতহয়।এটিএকটিগুরুত্বপূর্ণগবেষণাধর্মীচিঠি।তাতেচন্দনবড়ুয়াবিভিন্নলেখক, গবেষক, স্বনামধন্যব্যক্তিত্বঐতিহাসিকদেরলেখাগুলিকেপরপরসাজিয়েপ্রমানকরেছেনযেগীতাতথাঅধিকাংশব্রাহ্মনবাদীসাহিত্যগুলিইমহামতিগোতমাবুদ্ধেরঅনেকপরেলেখাহয়েছে। এই লেখায় সেই ধরণের কিছু তথ্য সংযোজিত হল। এতে ব্রাহ্মন্যবাদী সাহিত্যকে কেন্দ্র করে যে কুহেলিকার বাতাবরণ সৃষ্টি করা হয়েছে তা কেটে গিয়ে সত্য প্রকাশিত হবে বলে মনে করি।
প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, দীর্ঘকাল ধরে গীতাকে মহাভারতের সারাংশ বলে প্রচার করা হয়েছে। এই  “গীতাসার” মহাভারত কাব্যের অন্তর্গত কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের (যদিও এই যুদ্ধের কোন ঐতিহাসিক সমর্থন পাওয়া যায় না) প্রাগকালীন বর্ণনা। অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়ের মুখ থেকে এই যুদ্ধকালীন বর্ণনার সাথে সাথে কৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে যে কথোপকথন হয় তা শ্রবণ করেন। ভ্রাতৃঘাতি এই যুদ্ধে অনিচ্ছুক অর্জুনকে কৃষ্ণ যে ভাবে ইতিহাস, দর্শন, নীতিকথা ও নির্দেশের মাধ্যমে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তারই সংক্ষিপ্তসার এই গীতা।
নিশ্চিত ভাবে গীতার এই সংক্ষিপ্তসার মহাভারতের যুদ্ধের পরবর্তী সংকলনকেননা যুদ্ধের অভিজ্ঞতার বর্ণনা যুদ্ধের পরবর্তীকালেই সংকলিত হবে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা।   

এ বিষয়ে আমরা সর্বপ্রথম ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, ভারতীয় সংবিধানের মূল কারিগর বাবা সাহেব ডঃ বি আর আম্বেদকরের উদ্ধৃতি থেকে শুরু করতে পারি। “The writings of Mahabharata was not completed till 1200 A.D. ( W&SVol.3)
ভগিনী নিবেদিতা তার “Foot Falls of the Indian History” গ্রন্থে লিখেছেন যে, মহাভারত সংকলিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ৪০০ সালে।           
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর “ভগবান বুদ্ধ ও তাঁর বাণী” গ্রন্থে লিখেছিলেন, “কতশত ব্রহ্মা আদি এই মানব দেবতার চরণে প্রণত। ভারতবর্ষের এই যে সব সন্ন্যাসীর মঠ-ফট দেখতে পাচ্ছিস-এ সব বৌদ্ধদের অধিকারে ছিল, হিন্দুরা সেই সকলকে এখন তাদের রঙে রাঙিয়ে নিজস্ব করে বসেছে। ভগবান বুদ্ধদেব হতেই যথার্থ সন্ন্যাসাশ্রমের সূত্রপাত হয়েছিল।
মহামান্য তিলক ভগবৎ গীতা সম্পর্কে একেবারে খোলাখুলি স্বীকার করেছিলেন যে, বুদ্ধের বাণীকে আত্মস্থ করেই গীতার কলেবর বাড়ানো হয়েছিল। “Geeta barrowed ideology from Buddhism. The illustration I have given will be enough to show how greatly the Bhagvat Geeta is permeated by Buddhistic ideology and how much the Geeta has has borrowed form Buddhism”. (WUS-vol-3-P-371)
পণ্ডিত অঘোরনাথ গুপ্ত তাঁর “শাক্যমুনিচরিত নির্বাণতত্ত্ব” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, বাল্মিকী রামায়নের অযোধ্যা কান্ডে লিখিত হয়েছেঃ
“যথা হি চোরঃ স’তথা হি বুদ্ধ
স্তথাগতং নাস্তিকসত্র বিদ্ধি।
ন নাস্তিকে নাভি মুখো বুধঃ স্যাত”।
প্রখ্যাত অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্য তাঁর “প্রাচীন ভারত- সমাজ ও সাহিত্য” গ্রন্থে আলোচনা করেছেন যে, “ পণ্ডিতেরা বলেন মহাভারত রচনার কাল খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যে.....আমার মনে হয় বেদ রচনার কাল ছিল সেই সময়টা’।  
বেদ রচনার কালেও আর্যরা ভারতীয় মূলনিবাসীদের যজ্ঞহীন, যজ্ঞবিরোধী, যজ্ঞরোহিত, অন্যব্রত হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। “ইন্দ্র যেন চোরের মত এই সব যজ্ঞ বিরোধীদের সব সম্পদ লুন্ঠন করে যারা যজ্ঞ করে তাদের মধ্যে বন্টন করে এমন প্রার্থনা ঋকবেদের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়”   

গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের ৪০, ৪২ এবং ৪৩ শ্লোকে বুদ্ধকে ইন্দ্রিয়, বস্তু, মন ও বুদ্ধির সর্বোচ্চজ্ঞান হিসেবে মেন নেওয়া হয়েছে। এই জ্ঞানকে আত্মা এবং পরমাত্মার সাথে তুলনা করলেও বুদ্ধের নাম প্রকট ভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে গীতায়                    
Indriyani parany ahur
indriyebhyah param manah
manasas tu para buddhir
yo buddheh paratas tu sahGeeta text 42,Chapter -3

evam buddheh param buddhva
samstabhyatmanam atmana
jahi satrum maha-baho
kama-rupam durasadam (Geeta text 43,Chapter -3)    (চলবে...)

ফেরুর পালে সিংহসাবক : শরদিন্দু উদ্দীপন, কোলকাতা।

$
0
0


“...সিংহ শিশু হায় ভুলি পরিচয়
মেষ দলে রহে পড়ি’। ...
আঁধার গুহায় সিংহ ঘুমে রয়
দুরন্ত ফেরুর দল।
সিংহে মৃত ভাবি মিশিয়াছে সবি
করিতেছে কোলাহল” ।। (গুরু চাঁদ চরিত/ ১৩১)


(গুরু চাঁদের বাণী অবলম্বনে ছোট গল্প)


সে ছিল প্রসব যন্ত্রণা পীড়িত একটি সিংহী। পেটে দীর্ঘ দিন অভুক্ত থাকার মরণ খিদে। সন্তানের সুস্থ্যতার জন্য তার কিছু একটা খাওয়া ভীষণ জরুরী। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে সিংহীটি শিকারের জন্য উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা তাড়া করে ঝাঁপিয়ে পড়ে একপাল ভেড়ার পালে। অভ্যাস মত লাফিয়ে পড়ে ভেড়াদের লক্ষ্য করে। বিফল হয় সিংহীটি। তার নখ ও থাবার আওতা থেকে ভেড়াগুলো পালাতে সক্ষম হয়। পাথরের গায়ে আছড়ে পড়ে সিংহীটি। প্রসব যন্ত্রণায় ছট ফট করতে করতে মারা যায়।
ভেড়ার পাল তো অবাক! কৌতুহল হয় সিংহীকে পড়ে থাকতে দেখে! সিংহীর  পেটের কাছে তুলতুল করে নড়ছে কি ওটা ? কোন বাচ্চা ভেড়া নয়ত? ভেড়া সর্দার সকলকে নিয়ে আক্রমণ করে মৃত সিংহীকে। ঝটিতি আক্রমণে ছিনিয়ে নিয়ে আসে বাচ্চাটিকে। কিন্তু কি কান্ড! এটাতো ভেড়ার বাচ্চা নয়! একেবারে সিংহের বাচ্চা!  সিংহ এদেশের রাজা! তার বাচ্চা নিয়ে ভেড়ারা কি করবে?  একে ছেড়া যাওয়াই নিরাপদ হবে মনে করল সবাই। পালের গোদা ভেড়ার মনে এল এক জটিল অঙ্ক। ম্যাতকারে ঘোষণা করল সিংহের বাচ্চাটি ভেড়াদের সাথেই থাকবে। অগত্তা যাযাবর ভেড়ারা সিদ্ধান্ত নিল যে,তারা বনের রাজা সিংহের বাচ্চাকে ভেড়ার মত প্রতিপালন করবে। ভেড়া মায়ের দুধ খাইয়ে ভেড়ার আচরণ শেখাবে। ঘাস পাতা খাওয়ানো শেখাবে। আর সিংহের আচরণ, সিংহের সংস্কৃতি, আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মান একেবারেই ভুলিয়ে ছাড়বে।

সেই থেকে সিংহ সাবক ভেড়ামায়ের কাছে থাকে। ভেড়ামায়ের দুধ খায়। ম্যা ম্যা করে ভেড়ামাকে মা বলে। ভেড়াদের সাথে ঘাস খায়। শৃগাল, কুকুর, হায়না এমনকি শকুনেরা তাড়া করলে লেজ গুটিয়ে পালায়। গায়ে গর্তে বেড়ে উঠলেও রয়ে যায় ভেড়ার মানসিকতা। নখ, থাবা, গুম্ফ ও কেশর বিকশিত হলেও ভেড়ার বৃত্যে ঘুরপাক খায় তার স্বপ্ন। একটি নাদুস নুদুস ভেড়া রমণীর গায়ের গন্ধ পাওয়ার জন্য সে আকুল হয়ে ওঠে।
একদিন ভেড়ার পালে সিংহকে চরতে দেখে বিস্মিত হয় সমবয়সী একটি যুবক সিংহ! নিঃশব্দে গুড়ি মেরে খানিকটা এগিয়ে যায়।
ঘাড় উঁচু করে দেখার চেষ্টা করে ওটা সিংহ কিনা! নিশ্চিন্ত হলে দৌড়ে কাছে আসতে চায়। কিন্তু কী কান্ড! সিংহটাও ভেড়ার পালের সাথে ম্যা ম্যা করে পালাচ্ছে যে?
যুবক সিংহটি একটু জোরে দৌড়ে ভেড়ার পালের সিংহের কাছে চলে আসে। গর্জন করে বলে, "আরে তুই পালাচ্ছিস কেন? তুই তো ভেড়া নোস। আমার মতোই সিংহ"। ভেড়ার পালের সিংহ মানতে চায় না। ম্যা ম্যা করে পালের দিকে ছুটতে থাকে। ভীত গলায় বলতে থাকে, "আমি ভেড়া। ভেড়ামা আমার মা। ভেড়াদের খাবার আমার খাবার। ভেড়াদের ভাষা আমার ভাষা।
যুবক সিংহটির কৌতূহল আরো বেড়ে যায়। কাছে এসে ধরে ফেলে তাকে। মাটিতে চেপে ধরে ম্যা ম্যা ডাক বন্ধ করতে চায়। উল্টে পালটে দেখে নেয়। এটা সিংহ কিনা। দাঁত, নখ, চোখ, কপাল, গোঁফ, কেশর দেখে নিশ্চিত হয় এটা সিংহই বটে। কিন্তু কী কান্ড থাবা একটু আলগা হলে ও পালাতে চায়। ম্যা ম্যা করে জানতে চায় যুবক সিংহটি তাকে মেরে ফেলবে কিনা?
যুবক সিংহটি জানিয়ে দেয় অকারণে সে প্রাণী হত্যা করে না। এ রাজ্যের এটাই নীতি। ভীত সিংহটি বলে, "দোহাই তোমার আমাকে ছেড়া দাও। আমি ভেড়ার দলে চলে যাই। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায় যুবক সিংহটি। থাবা আলগা হয়ে আসে। আত্মবিস্মৃত সিংহটি ম্যা ম্যা করে পালিয়ে গেলে সে আহত বোধ করে। প্রতিজ্ঞা করে আগামী কাল অপরিণত সিংহকে ভেড়ার পাল থেকে বের করে না আনা পর্যন্ত সে শিকারে যাবে না। বেভুল সিংহের আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা জাগ্রত করাই তার মিশন।
ভেড়ার পালকে সারা রাত ধরে অনুশরণ করে সে। দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই একেবারে ভেড়ার পালের সিংহের কাছে পৌঁছে যায়। ভড়কে যায় ভেড়ার পালের সিংহটি। পালাতে থাকে। আবার সেই একই নাটক। একই সেখানো বুলি। আবার  সেই ম্যা ম্যা যুক্ত তৎসম ম্যাৎকার।   
গর্জে ওঠে যুবক সিংহটি। বেভুল সিংহকে তাড়িয়ে নিয়ে আসে জলাশয়ের ধারে। তারপর ঘাড় ধরে বলে, "এই দ্যাখ আমাদের দুটো ছায়া। এবার বিচার কর আমরা দুজন এক বংশীয় কিনা! তোর দাঁত, নখ, থাবা,  গোঁফ, কেশর আমার মত কিনা! কর্ম ফেরে আজ তুই ভেড়াদের গোলাম।  ছায়া দেখে নিজেকে চিনে নে। ভ্যাড়ামো ছাড়। আমার মত গর্জন করে বল, আমি সিংহ। এই দেশের ভূমি পুত্র। নিজের অস্তিত্ব ও মর্যাদার জন্য আমারও ভাগিদারি চাই"।

এমন বজ্র  নির্ঘোষ,আত্মপ্রত্যয়ী স্বজন বানী রক্তের ভিতরে কেমন আগুনের হলকা খেলে যায়! জলের ছায়া মনের গভীরে ছাপ ফেলতে শুরু করে।  থর-থর করে কাঁপতে থাকে সমস্ত শরীর। এ কী আলো না শিহরণ! এ কী বাতাস না জ্ঞানপ্রবাহ! এ কী শব্দ না কাঙ্ক্ষিত মুক্তির ধ্বনি! অভিভূত, আপ্লুত চোখের থেকে ঝর-ঝর করে নেমে আসে আনন্দধারা। ধুয়ে ফেলে সমস্ত গ্লানি। নম্র আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে নিজের স্বদেশ। তারপর নিরবতা। নিরবতা আরও প্রগাড় করে তোলে দুজনের আলিঙ্গন।  
বনের সিংহটি জলদ গম্ভীর গলায় বলে ওঠে, জানিনা তোর মত আরো কত সিংহসাবক আর কোন কোন ফেরুর পালে চরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু তোকে কথা দিলাম কাল থেকে ভেড়া, ছাগল, কুকুর বা শিয়ালেরপাল থেকে সিংহ শাবকদের বের করে আনবো। এটাই আমার ব্রত। এটাই আমার একমাত্র পথ। তুই আমার সাথে থাকবি তো?
বলিষ্ঠ ঘাড় নাড়ে সিংহটি। কেশর দুলে ওঠে স্বাভাবিক ছন্দে। সোনালী রোদ, নদীর কলতান আর পাখির কুজনে এক চিরন্তন গীতে মুখরিত হয়ে ওঠে সমস্ত বনভূমি।          

Article 6

$
0
0
স্বাধীনতা
লেবেঞ্চুস নেবেন দাদা
প্যাকেট দুটাকা
একসঙ্গে ছ’টা নিলে দশ
একেবারে দিশি
আঁটি ছাড়া খাঁটি লেবু
নেবেন লেবেঞ্চুস ?


কালতো আবার দেশ জুড়ে উৎসব
কত রং রসের সমারোহ
কত লম্ফ-
এক ফালি ন্যকড়ার এ উৎসাহ।
ঝম্প কত গান

ওখানেতো আসবে ছেলেমেয়ে
আমারা যেমন যেতাম নেচে নেচে
ক্লান্ত হবে দেশেরই গান গেয়ে
ওদের গানেই স্বাধীনতা বাঁচে।

 তোমরা খাবে মটন বিরিয়ানি সাঙ্গ হলে তেরাঙ্গাটি নাড়া
ওদের জন্য কোথায় যে জলপানি
কোথায় মিঠাই? কোথায় ছানাবড়া?
লেবেঞ্চুস নেবেন দাদা
একসঙ্গে ছ’টা নিলে দশ
দেশের গর্ব এমন পরম্পরা
ভাবিকাল যে লেবেঞ্চুসেই বশ !!

The death of CHUNI KOTAL : The death of Indian Democracy

$
0
0



There is no doubt that, Chuni’s death symbolized the Brahmin dominated characteristics of a country. Chuni’s death identified Brahmanism as a brutal system of intoxicating hate, discrimination and killing. I am attaching here the write-up of renowned writer, activist Mahasweta Devi for relooking of a SUNSET committed in 16th of August, 1992.  


 Story of Chuni Kotal

Mahasveta Devi
Chuni Kotal’s suicide has ripped the mask off the face of West Bengal under Left Front rule: the caste prejudice and persecution and the government callous indifference
                                
Chuni Kotal, a girl of 27, from the denotified Lodha tribe, the first graduate woman among the Lodha Savara and Kheria Savara of West Bengal, hanged herself on August 16, at her husband’s one room residence in Kharagpur, a railway town.
The reasons that led Chuni, a unique woman, to take her own life, are palpable ones and she “became a victim of sheer injustice and callousness of the university authorities and the West Bengal government” (The Statesman, 23/08/1992)
Chuni was appointed a Lodha social worker in 1983 at Jhargram ITDP office. From childhood she had starved , worked in the fields, had had no money to purchase books, yet doggedly she continued to study.
As a social worker she cycled 20-25 kms a day and made extensive surveys of the Lodha villages. In 1985, she graduated. In 1987, she was appointed suprintendent of Rani Shiromani SC and ST girls’ hostel at Medinapur.
Her working hours were 24 hours a day and working days were 365. No holidays, no break. If she had to leave the hostel for a few hours or a day, she had to take prior permission from the office which was very unsympathetic to her.
On one occasion her ailing father came from the village and had to stay in her room for one or two days as a hospital bed was not available. An officer of the district office accused her of entertaining men in her room.
Chuni felt suffocated in the job. Countless times she had come to Calcutta to Writer’s Building pleading for (a) transfer to her original job, or (b) better working conditions. The department remained brutally indifferent.
Matters became worse when Chuni enrolled her name with the local Vidyasagar University as an MA student in Anthropology.
Falguni Chakravarty, a male professor, from the very first day started abusing her as one coming from a criminal tribe, a low-born, who had no ‘right’ to study MA. The university authorities, the head of the department, did nothing about it.
This man was allowed to mark her ‘absent’ though she was present for days. And Chuni was debarred from sitting for examination for ‘irregular attendance’. She lost one year. The district office made life hell for her for ‘leaving the hostel’ and going to study.
In West Bengal, after so many years of Left Front rule, the first woman graduate from a very backward tribe was openly abused because of her low-caste and birth and nothing was done about it. No one was ashamed. Only Chuni suffered.
The second time Chuni sat for exam. The professor gave her low marks. Thus she lost two years. In desperation, she complained and complained and, in 1991, the education minister ordered an enquiry commission which constituted of three principals from three district colleges.
All through this man was allowed to refer to the criminal nature of her tribe, abuse her. The commission just went to sleep.
On August 13 (just 3 days prior to her suicide), there was a seminar in the university. By that time Chuni knew where she stood. She had no hope that the enquiry commission would do justice to her and punish the ‘bhadra log’, the babu, who pointed to her low birth and low-caste relentlessly. She went to the university.
Thereafter, she weepingly told a few co-students, ” today in the seminar Falguni babu, quite off the context, refered to the Lodhas as thieves and robbers. In the corridor, he threatened me, I’ll see that you don’t sit for the examination in September. I am a Lodha. So I shouldn’t have dreamt of higher studies. I complained against the offenders, but they remain untouched. Unnecessarily I wasted two years, attended classes but was not allowed to sit for the examination” (Letter to the editor, Daily Bartoman, August 25, 1992)
By August 13, she had made up her mind. Death was the only way to escape the hunters. On 14th she went to her husband. They had married in a court in 1990, but due to her job had not been able to stay together.
Her husband is a Lodha youth who is a High School and works in the railways workshop. That Chuni was a graduate and he was not had never created any friction. They had been in love with each other from 1981. They were to leave for Chuni’s village, Gohaldohi, on the 16th to talk about formal reception, a community feast after marriage.
On the 16th he left for the workshop at 6.15 am. He returned at 10.45 am and found Chuni hanging.
Chuni’s death has revealed what West Bengal truly is. Brutal caste and class hostility and persecution has been allowed to continue. The government allowed the district babu to abuse her.  The university authorities did nothing to throw out the caste-baiter.
And the commission appointed by the government submitted its report three days after her death.
Viewing all 104 articles
Browse latest View live